তরুণ প্রজন্মের ভাবনায় নারী দিবস
তানজিলা হক অপরাজিতা
প্রথম বর্ষ, আইন বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় সুতা কারখানার নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের মিছিল গড়িয়ে ১৯১০ সালে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে প্রতিবছর ৮ ফেব্রম্নয়ারিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়। পশ্চিম থেকে আগত এই নারী দিবস বলতে আক্ষরিক অর্থে বছরের একটি দিন নারীর প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করা মনে হলেও সেই গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত মেয়েটি থেকে শুরু করে দেশপ্রধান নারীর দৈনন্দিন জীবনে প্রাপ্য সম্মান দেওয়াকে বোঝানো হয়। আধুনিক যুগে নারীদের নিয়ে সংকীর্ণ ধারণাগুলো কাটিয়ে তারা স্বাবলম্বী হওয়া, নিজ মত প্রকাশ করা, পড়াশোনা বা যে দিকে চায় সেই ক্ষেত্রে যাওয়ার স্বাধীনতা পাওয়া এই দিবসের অন্যতম দিক।
আমাদের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা উলেস্নখ থাকলেও বাস্তবজীবনে খবরের পাতায় নারীবিদ্বেষী অপরাধগুলোর নমুনা দেখলে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে- আসলেই কি নারীদের এই সমাজে আমরা যথাযথ মর্যাদা দিতে পেরেছি? তাই এই নারী দিবসে তরুণদের সেস্নাগান হোক- সারাবছর নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধ কাজ করা ও নারী-পুরুষ সমানাধিকার নিশ্চিত করা।
নারীর চোখে বিশ্বজয়
সাজেদা আক্তার আমানী
বাংলা বিভাগ
ফেনী সরকারি কলেজ, ফেনী।
জ্ঞানের লক্ষ্ণী, গানের লক্ষ্ণী, শস্য-লক্ষ্ণী নারী,
সুষমা-লক্ষ্ণী নারীই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারি।
নাহ, কবি কাজী নজরুল ইসলাম আসলে মোটেও ভুল কিছু বলেননি! যুগ যুগ ধরে নারীরা যে অবদান রেখে আসছে সব ক্ষেত্রে, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। এবং এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।
বর্তমান সমাজব্যবস্থায় নারীদের যে অগ্রাধিকার বাস্তবায়িত হচ্ছে তাতে করে পিছিয়ে পড়া নারীরা এখন সামাজিক ক্ষেত্রকে ডিঙিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রেও সমানভাবে সাফল্যের পদচিহ্ন এঁকে যাচ্ছেন। একটি দেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে গেলে নারীর মূল্যায়ন অনস্বীকার্য। ঘর সংসার সামলে আর্থিক কর্মসংস্থান তৈরি বা উপার্জনের যে ব্যবস্থা সেটিও এখন নারীরা নিশ্চিত করতে পারছেন এবং দিন দিন তারা হয়ে উঠছেন স্বাবলম্বী এবং স্বনির্ভর। এটা আসলে কম কথা নয়! সুতরাং নারীর চোখে বিশ্ব জয়ের সূচক দেখুন, আজকের নারী দিবসের এই হোক অঙ্গীকার।
নারী দিবসের পটভূমি
তানজিলা বসরী
শিক্ষার্থী, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি।
এ পৃথিবীর অর্ধেক জনগণই নারী। সমাজ, বিশ্বকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য নারীর জাগরণের অবশ্যই প্রয়োজন আছে। কিন্তু এককালে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ বৈশ্বিক উন্নয়নে নারীর ভূমিকা উপলব্ধি করতে পারেনি। অনেক ক্ষেত্রে নারীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হলেও নারীদের ওপর বৈষম্য আরোপ করা হতো। যেমন : তাদের কর্ম ক্ষেত্রে পুরুষের থেকে বেশি সময় দিতে হতো, পুরুষের সমান পারিশ্রমিক দেওয়া হতো না। পরবর্তীতে ১৯০৮ সালে নারীদের বৈষম্যের বিরুদ্ধে ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৫ হাজার নারী নিউইয়র্কের রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছিলেন। এটির সংঘটন মূলত হয়েছিল শ্রমিক দিবস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। পরবর্তীতে জাতীয় পর্যায় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রূপ নিতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন ক্লারা জেটকিন ১৯১০ সালে কোপেনহেগেনে কর্মজীবী নারীদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রস্তাব প্রদানের মাধ্যমে। নারীর সমঅধিকার, মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠায় নেওয়া উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করতে সোচ্চার করাই এ দিবসের লক্ষ্য।
নারীর পরিবর্তন
জহুরা আক্তার মিম
জাতীয় মার্শাল আর্ট খেলোয়াড়।
নারীরা হলো তরল পদার্থ। তাদের যে পাত্রে রাখা হয় সে পাত্রের আকার ধারণ করে অর্থাৎ নারীরা নিজেদের রূপ, ক্ষমতা ও স্থান পরিবর্তন (ইতিবাচক) করার ক্ষমতা রাখে। ঘর ও বাহিরে সামলে ওঠে, সন্তানদের মানুষ করে আরেকটি প্রজন্ম তৈরি করে। এই সমাজ, দেশ তৈরি করতে বিরল ভূমিকা রাখে। তাদের এ শ্রম এর তুলনা হয় না। একজন নারী নানান পরিচয় পরিচিত হয়ে সাথে সাথে এ পরিচয়গুলোর সাথে অনেক সম্পর্ক জড়িত থাকে যা একজন নারীকে মানিয়ে নিয়ে এগিয়ে চলে। মেয়ে, বোন, বউ, ভাবি, শাশুড়ি, ফুপি, চাচি, খালা, মামি এবং সব থেকে বড় পরিচয় 'মা'। যে পরিচয় একজন নারীকে পূর্ণ করে। নারীদের সম্মানিত করতে পুরো পৃথিবীতে নারী দিবস পালিত হচ্ছে। হার ভাঙ্গা পরিশ্রম করে সব কিছু সামলে ওঠা নারীদের জানাই নারী দিবসের শুভেচ্ছা।
নারীর অগ্রগতি সাধিত হোক
শর্মী আরা হোসেন
সবেক শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
পুরুষের পাশাপাশি একটি দেশের উন্নতি অগ্রগতির অনেকটাই নির্ভর করে সেই দেশের নারীদের ওপর। কিন্তু নারীরা আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবহেলিত। এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস, ২০২৪-এর প্রতিপাদ্য 'নারীতে বিনিয়োগ করুন, উন্নয়ন ত্বরান্বিত করুন'। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সর্বশেষ ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী মাত্র ৩৮ শতাংশ নারী কর্মক্ষেত্রে জড়িত। এখানেই সেই চিরাচরিত কবিতার লাইন কোট করতে হয়- 'বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।'
জনসংখ্যার এত বড় একটা অংশ যদি তাদের সম্ভাবনা থেকে দূরে থাকে তাহলে শুধু 'উন্নয়নশীল' দেশ হিসেবেই বছর গড়াতে থাকবে, 'উন্নত' হয়ে ওঠা হবে না। সুতরাং দেশের সার্বিক উন্নয়নে নারীদের অপার সম্ভাবনাকে নারী পুরুষ নির্বিশেষে অনুধাবন করতে হবে। তাছাড়া শুধু নারীদের কর্মক্ষেত্রে জড়িত করলেই হবে না, জেন্ডার সংবেদনশীলতা বোঝা এবং কর্মক্ষেত্র তা নিশ্চিত করাটাও জরুরি নারীদের টেকসই সামাজিক ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির জন্য।
নারীর চাই যোগ্য সম্মান
তাছপিয়াহ্ হক
প্রাণিবিদ্যা বিভাগ
ফেনী সরকারি কলেজ।
ক্যালেন্ডারের পাতায় সাদামাটা আর পাঁচটা দিনের মতোই। কিন্তু তাৎপর্য বিবেচনায় এই দিনটি স্বকীয়তায় ভাস্বর- 'আন্তর্জাতিক নারী দিবস'। নারী দিবস নিয়ে কিছু বলতে গেলে মনে হয় এর প্রতিপাদ্য বিষয়ই হলো- নারীর ক্ষমতায়ন,,,যা বর্তমানে প্রচলিত একটা টার্ম। এ কথা তো অনস্বীকার্য, বাংলাদেশের উন্নয়নে নারীর ভূমিকা ও অবদান অনেক বেশি। দেশের সর্বত্র নারীর গুরুত্ব আজ স্বীকৃত। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধ তো বটেই, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনেও বাঙালি নারী-পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন, শহীদ হয়েছেন। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন অনেকটাই বেড়েছে। তারপরও স্বীকার করতে হবে বৈষম্য একেবারে দূর করা যায়নি। শুধু তা-ই নয়, সমাজে অনেক ক্ষেত্রে নারীকে এখনো অবজ্ঞার চোখে দেখা হয়। পথে-ঘাটে চলাচলে বাংলাদেশের বেশির ভাগ নারী নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হন। সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় পুরুষকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
সিডও (ঈঊউঅড) সনদ অনুমোদনকারী রাষ্ট্রসমূহের একটি বাংলাদেশ। সে অনুযায়ী নারীর প্রতি বিদ্যমান সব ধরনের বৈষম্যমূলক কর্মকান্ড, রীতি-নীতি, প্রথা ও চর্চা এ দেশে নিষিদ্ধ করতে হবে। পরিবার থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র- সর্বত্র নারীকে যোগ্য সম্মান দিতে হবে। তবেই সমাজ, জাতি দেশ ও বিশ্বের উন্নয়ন সাধিত হবে।