দন্ডকলসের ঔষধি গুণ

প্রকাশ | ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন
দন্ডকলস বর্ষজীবী অল্পসংখ্যক শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট উদ্ভিদ। দন্ডকলস রাস্তার পাশে ও ফসলের ক্ষেতের আইলে বেশি পরিমাণে জন্মাতে দেখা যায়। সাধারণত এটা উঁচু জমিতে বৃদ্ধি এবং বিস্তৃতি বেশি লাভ করে। শাক হিসেবে দন্ডকলস গ্রামবাংলার মানুষের কাছে অতি পরিচিত একটি উদ্ভিদ। ভেষজ চিকিৎসায় বহুকাল ধরে উদ্ভিদটি বহুল প্রচারিত হয়ে আসছে। সাধারণত কচি কান্ডসহ পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়। ভেষজ চিকিৎসায় পাতা এবং কান্ড ব্যবহৃত হয়ে থাকে। জ্বর, সর্দি, কাশি, কৃমি, পেটফাঁপা, বদহজম ও বাতের ব্যথায় দন্ডকলসের উপকারিতা ও ব্যবহার অনন্য। নানাধরনের ত্বকের রোগ ও এলার্জি কমে এর ব্যবহারে। এটি বিভিন্ন পোকামাকড়, সাপ ও বিছার কামড়ের চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত। দন্ডকলস বহুবর্ষজীবী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এর শিকড় মাটির ৪ থেকে ৫ সে.মি. গভীরে যায়। হাত দিয়ে টান দিলে সহজে ওঠে আসে দেহ গাঢ় সবুজ। অসংখ্য গিট বা পর্ব সমস্ত কান্ডে থাকে। ফুলের মঞ্জুরিতে অনেক সাদা ফুল থাকে। ফুলগুলোর গোড়ায় মধু থাকে। বাচ্চরা সে মধু খেতে পছন্দ করে। বীজের মাধ্যমে দন্ডকলস বংশ বিস্তার করে। মার্চ-এপ্রিলে ফুল ফোটে। আগস্ট মাসের মধ্যে বীজ পরিপক্ব হয়। অক্টোবর ও নভেম্বরে বীজ থেকে চারা গজায়। এই উদ্ভিদটি কখনো এককভাবে রোপণ করে না কেউ। আপন জালা হয়ে অন্য ফসলের সঙ্গে জন্মায় বলে একে সাথী শাক বলা হয়। সবার সঙ্গে মিলে মিশে প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করে। এই উদ্ভিদটি রক্ষা করা এখন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় দন্ডকলস প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন দন্ডকলস তেমন চোখে পড়ে না। কারও সর্দি, জ্বর ও শরীর ব্যথা করলে এই পাতা সিদ্ধ করে কালিজিরা, রসুন হালকা ভেজে অল্প মরিচসহ বেটে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। বাচ্চা বা বড়দের কান ব্যথা হলে বা কান দিয়ে পানি বের হলে তখন ৫টি পাতা তুলে পরিষ্কার করে ধুয়ে হাতের তালুতে কচলিয়ে রস করে ২ ফোঁটা রস কানের ভেতর দিলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। শরীর ব্যথা, হাত পা চাবালে ও কামড়ালে দন্ডকলসের পাতা, নিশিন্দা পাতা, নিম পাতা ও হলুদ একত্রে বেটে বড়ি তৈরি করে ভালো করে রোদে শুকিয়ে প্রতিদিন সকাল বিকাল একটি করে বড়ি খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। কাশি হলে, দন্ডকলসের পাতা ও শিকড় আদাসহ রস করে একটু গরম করে খেলে কাশি কমে যাবে। অনেকের বাতের ব্যথায় হাত, পা ফুলে যায় সেই সময় এই পাতার রস করে এক চিমটি লবণ দিয়ে মালিশ করলে ব্যথা কমে যাবে। বাচ্চাদের সব সময় সর্দি লেগে থাকে, সেই সময় এই পাতা বেটে রস করে মায়ের দুধের সঙ্গে মিশিয়ে মাথার তালুতে দিয়ে রাখলে সর্দি কমে যাবে। এছাড়া ফুল তুলে সেই ফুল মায়ের বুকের দুধের সঙ্গে কচলিয়ে সেই দুধ খাওয়ালে সর্দি ভালো হয়ে যায়। বাচ্চাদের পেটে কৃমি হলে দন্ডকলসের পাতা রস করে ১ চামচ করে খালি পেটে ৪-৫ দিন খাওয়ালে কৃমি মরে যায়। বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে বা পায়খানার সঙ্গে একটু একটু বিজল (আম) বের হলে সেই সময় পাতার রস করে খাটি মধু মিশিয়ে তিন দিন খেলে ভালো উপকার পাওয়া য়ায়। চুলকানি হলে এই পাতার রস কাঁচা হলুদের রসের সঙ্গে নারকেল তেল মিশিয়ে শরীরে মাখিয়ে কিছুক্ষণ রোদে থেকে গোসল করলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। কোনো স্থান মচকে গেলে সঙ্গে সঙ্গে দন্ডকলসের ৫/৬টি পাতা নিয়ে তার সঙ্গে ৪/৫ ফোটা কেরোসিন তেল ও আধা চিমটি লবণ মেখে মালিশ করলে মচকনো স্থান ভালো হয়ে যায়। দীর্ঘ দিনের ঠাস ঠাস শব্দের কাশিতে কয়েকদিন ধরে অল্প কয়েকটি পাতা বেজে খেলে কাশি ভালো হয়। সর্দির কারণে মাথা ধরা হলে ২০/২৫টি পাতা পিষে রস করে সামান্য লবণ দিয়ে খেলে ৩/৫ দিনে ভালো হয়। খোস পাচড়ায় পাতা বেটে পেস্ট করে লাগালে খোস পাচড়া ভালো হয়। চুলকানি হলেও এই পাতার রস কাঁচা হলুদের রসের সঙ্গে নারকেল তেল মিশিয়ে শরীরে মাখিয়ে কিছুক্ষণ রোদে শুকিয়ে গোসল করলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। এই ভাবে এক সপ্তাহ পর্যন্ত লাগাতে হবে। ২. সর্দি ও কাশি হলে এই গাছের পাতা সিদ্ধ করে কালোজিরে দিয়ে খেলে উপশম হয়। কাশি হলে দন্ডকলসের পাতা ও শিকড় রস করে আদাসহ গরম পানি দিয়ে খেলে কাশি কমে যায়। ৩. বাচ্চাদের কৃমি হলে দন্ডকলসের পাতা রস করে ১ চামচ করে ৪-৫ দিন খাওয়ালে কৃমি মরে যাবে। ছোট বাচ্চাদের যদি দীর্ঘ সময় সর্দি থাকে তাহলে এই গাছের ফুল তুলে সেই ফুল মায়ের বুকের দুধের সঙ্গে কচলিয়ে সেই দুধ খাওয়ালে সর্দি ভালো হয়ে যায়। পাতা বেটে রস করে মায়ের দুধের সঙ্গে মিশিয়ে মাথার তালুতে দিয়ে রাখলেও সর্দি কমে যায়। ৫. চুলকানি রোগেও কাজ করে দন্ডকলসের পাতার রস। কাঁচা হলুদের রস ও নারকেল তেল মিশিয়ে শরীরে মেখে রোদে শুকিয়ে গোসল করলে উপকার পাওয়া যায়। শিশুদের পাতলা পায়খানা হলে এই পাতার রস করে খাটি মধু মিশিয়ে দুই তিন দিন খাওয়ালে উপকার পাওয়া য়ায়। দন্ডকলস কখনো শাক হিসেবে, কখনো জুস হিসেবে, কখনো ভর্তা করে খাওয়া যায়। দন্ডকলস মেয়েদের মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত কমায়। দন্ডকলসের পাতা তিতা হলেও এই ফুলের মধু কিন্তু মিষ্টি। ওষুধ হিসেবে এর মূল, পাতা, ফুল ব্যবহার করা হয়। পেট ফাঁপায় ও বদহজম হলে, এই পাতা সিদ্ধ করে ভর্তা করে খেলে সেই দোষটা সেরে যাবে। বাচ্চা এবং বড়দের চোখে ছানি পড়ে বা পানি পড়ে সেই সময় ২ ফোটা রস দিলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। হাঁপানি হলে দন্ডকলসের শিকড় তুলে গোল মরিচের সঙ্গে বেটে খুব ভোরে সূর্য উঠার আগে পিড়িতে সূর্য মুখী হয়ে দাঁড়িয়ে ৩ দিন খেতে হয়। এতে উপকার পাওয়া যায়। শরীরে বিষ ব্যথা হলে বা বাতের ব্যথায় দন্ডকলস ছেঁচে রস করে খেতে দেয় এতে উপকার পাওয়া যায়। গর্ভবতী মা ও শিশুদের খিচুরি ও জাও ভাতের সঙ্গে সিদ্ধ দিয়েও এই শাক খাওয়ানো হয়। গবাদি পশু বিশেষ করে ছাগলের পেটে পীড়া ও মূত্ররোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে দলকলসের পাতার রস পিষে খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়। ডায়াবেটিস রোগে প্রতিদিন ১০ গ্রাম পাতার রস ২টি গোল মরিচের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। দীর্ঘ দিনের পুরনো কাশি থাকলে কয়েকদিন ধরে অল্প কয়েকটি পাতা বেজে খেলে কাশি ভালো হয়।