ষাটের দশকে আসা তেলাপিয়া দিয়ে শুরু হয় মাছ চাষের বিপস্নব। পরে থাই পাঙাশ, ভিয়েতনামের কই, থাই কই, আফ্রিকান মাগুর। এখন বাজারে পাওয়া ৯০ শতাংশ মাছই চাষের মাছ। দেশে বর্তমানে ৪৭৫টি সামুদ্রিক প্রজাতি, ৩৬০টি স্বাদু পানির প্রজাতি, ৩৬টি চিংড়ি প্রজাতির মাছ রয়েছে। বিপন্ন হয়ে যাওয়া প্রজাতির মাছ কৃত্রিম প্রজননে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
'মাছে-ভাতে বাঙালি' চাষের মাধ্যমে মাছের সেই হারানো গৌরব ফিরিয়ে এসেছে। গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখতে মৎস্য খাত ভূমিকা রাখছে। উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন ও গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখতে মৎস্য খাত ভূমিকা অব্যাহত রেখে চলেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, চাষের মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে। বিশ্বের যে তিনটি দেশ মাছ উৎপাদনে সাফল্য দেখিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ।
পাঙাশ, তেলাপিয়া ও কইয়ের উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় গত ১২ বছরে দেশে মাছের উৎপাদন ব্যাপকহারে বেড়েছে। ক্রমবর্ধমান চাষের ফলে এই ৩ প্রজাতির মাছ নিম্ন আয়ের মানুষের আমিষের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে। গ্রাম ও শহরতলির হাজারো লোকের কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ করে দিয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশে পাঙাশের বার্ষিক উৎপাদন ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা আড়াই গুণ বেড়ে দাঁড়িেেছ ৩ লাখ ৯৫ হাজার টনে। একই সময়ে তেলাপিয়ার উৎপাদন ৯৭ হাজার ৯০৯ টন থেকে বেড়ে ৩ লাখ ২৯ হাজার টন হয়েছে। কইয়ের উৎপাদন ৩৫০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫৭ হাজার ২৪৪ টন।
বিশ্বে অভ্যন্তরীণ মুক্তজলাশয়ে মাছ আহরণে বাংলাদেশ ৩য়, বদ্ধ জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে ৫ম, সামুদ্রিক ও উপকূলীয় ক্রাস্টাসিয়া উৎপাদনে ৮ম এবং ফিনফিস উৎপাদনে ১২তম স্থান অধিকার করেছে। বিশ্বের মোট স্বাদুপানির মাছের প্রায় ১১ শতাংশ এখন বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। তাছাড়া বিশ্বে ইলিশ আহরণকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১ম ও তেলাপিয়া উৎপাদনে বিশ্বে ৪র্থ ও এশিয়ার মধ্যে ৩য় স্থান অধিকার করেছে। বাংলাদেশের মোট জিডিপি'র ৩.৫৭ শতাংশ, কৃষিজ জিডিপি'র ২৬.৫০ শতাংশ এবং মোট রপ্তানি আয়ের ১.২৪ শতাংশ মৎস্য উপখাতের অবদান। মৎস্য খাতে জিডিপি'র প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৫.৭৪ শতাংশ ও মাথাপিছু দৈনিক মাছ গ্রহণের পরিমাণ চাহিদার (৬০ গ্রাম/দিন/জন) বিপরীতে বৃদ্ধি পেয়ে ৬২.৫৮ গ্রামে উন্নীত হয়েছে (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২)। অপরদিকে, গত এক যুগের ব্যবধানে বাংলাদেশে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় দেড় গুণেরও বেশি। সরকারের মৎস্যবান্ধব কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং চাষি ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে চাহিদাভিত্তিক ও লাগসই কারিগরি পরিষেবা প্রদানের ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ মৎস্য উৎপাদন করেছে ৪৭.৫৯ লাখ টন।
মৎস্য ও মৎস্যপণ্য বাংলাদেশের রপ্তানির অন্যতম প্রধান খাত। বাংলাদেশ হতে প্রধানত বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি, কাঁকড়া, কুঁচিয়া, শুঁটকি, মাছের আঁইশ, পাখনা ও ফুলকা ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, জাপানসহ বিশ্বে প্রায় ৫২টিরও অধিক দেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। কোভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে অর্থনৈতিক মন্দা থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যকর ও যুগোপযোগী উদ্যোগ গ্রহণের ফলে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৪ হাজার ৪২ টন মৎস্য পণ্য রপ্তানি করে ৫ হাজার ১৯১ কোটি টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম হয়েছে- যা বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ১ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং বিগত বছরের তুলনায় ২৬.৯৬ শতাংশ বেশি।
দেশের জলাশয়ে প্রায় ৮০০ প্রজাতির মাছ ও চিংড়ি রয়েছে। এর মধ্যে ২৬০ প্রজাতির মাছ এবং ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। ২৬০ প্রজাতির মিঠাপানির মাছের মধ্যে ৬৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত প্রায়। ঐতিহ্যের অংশ মিঠাপানির এসব সুস্বাদু মাছ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার্থে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণা পরিচালনা করে এখন পর্যন্ত ২৪টি বিপন্ন প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদন ও চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। তাছাড়া নদনদী, হাওর ও বিলে দেশীয় মাছের পোনা অবমুক্তকরণ ও মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ মাছের জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। সরকারের এরূপ কার্যকর উদ্যোগের ফলে হারিয়ে যাওয়া নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ আবার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশেরও বেশি মানুষ মৎস্য সেক্টরের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থেকে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করেছে। আর্শ্চযজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার ৮০ শতাংশ কর্মীই নারী- যার সংখ্যা প্রায় ১৪ লক্ষাধিক। তাছাড়া বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমে নারীদের অগ্রাধিকার প্রদান, যাদের মাছ চাষের জমি রয়েছে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাছচাষ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে নির্বাচন করা হয়ে থাকে। মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক ১৬ লাখ ২০ হাজার জেলেদের নিবন্ধন ও ১৪ লাখ ২০ হাজার স্মার্ট পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রম চলমান আছে। মৎস্য অধিদপ্তরের এক তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান সরকারের আমলে ২০০৯-১০ থেকে ২০২১-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকালীন প্রায় ৪ লাখ জেলে পরিবারকে প্রতি মাসে ৪০ কেজি হারে ৪,৭০,৭৪৬.৫৬ মে. টন এবং ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালীন প্রায় সাড়ে ৫ লাখ জেলে পরিবারকে ২০ কেজি হারে মোট ৫২,৫৯০.১০ টন ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫.৫৬ লাখ টন ইলিশ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে এবং এটি বিগত ১০ বছরে মোট ইলিশের উৎপাদনের চেয়ে ৬৬.১৭ শতাংশ বেশি। ২০১৫ সাল থেকে সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও সংরক্ষণের জন্য প্রতি বছর ২০ মে হতে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মোট ৬৫ দিন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক জলসীমায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং এই কার্যক্রমের আওতায় ২০২১ সালে প্রায় ৩ লাখ জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি হারে মোট ২৫,৬৯৫.৩৭ মে. টন ভিজিএফ (চাল) বিতরণ করা হয়েছে- যা বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম বড় সাফল্য।
বিশ্বের ৫২টি দেশে বাংলাদেশের মাছ রপ্তানি হয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ৪৭ দশমিক ৫৯ লাখ টন মাছ উৎপাদিত হয়। ২০৪১ সালে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ লাখ টন- যা বর্তমান উৎপাদনের চেয়ে ১ দশমিক ৮ গুণ বেশি। উৎপাদিত মাছ যাতে মানব স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ রয়েছে। মৎস্য খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের প্রায় দুই কোটি মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমানে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৪ লাখ নারীসহ এক কোটি ৯৫ লাখ বা ১২ শতাংশের বেশি মানুষ মৎস্য খাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। মাছ ও চিংড়িসহ অন্যান্য জলজ সম্পদের স্থায়িত্বশীল উৎপাদন বাড়িয়ে দেশের পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং রপ্তানি আয় বৃদ্ধি ও অভীষ্ট জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে উন্মুক্ত জলাশয়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ ক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত সুফলের মাধ্যমে দরিদ্র্য মৎস্যজীবী ও চাষি তথা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের চারটি উৎস রয়েছে। এগুলো হলো- অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়, বদ্ধ জলাশয়, আধালোনা পানির জলাশয় ও সামুদ্রিক জলাশয়।
মুক্ত এলাকার সঙ্গে যুক্ত জলাশয়কে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয় বলে। এর মধ্যে রয়েছে নদী ও খাড়ি অঞ্চল, হাওড়, বিল, হ্রদ ও পস্নাবনভূমি। পস্নাবনভূমি বর্ষাকালে পানিতে ভরে নদীর সঙ্গে একাকার হয়ে যায় এবং শুকনো মৌসুমে জমিতে পরিণত হয় এবং তখন সেখানে ফসলের চাষাবাদ করা হয়। বর্তমানে দেশে মোট মুক্ত জলাশয়ের পরিমাণ ৪০ লাখ ৪৭ হাজার ৩১৬ হেক্টর। অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয়ের যেসব জলাশয় নদী, হাওড় বা বিলের সঙ্গে যুক্ত নয়, এদের অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয় বলে। অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয়ের মধ্যে রয়েছে পুকুর, দীঘি, বাঁওড় ইত্যাদি। বর্তমানে দেশে মোট বদ্ধ জলাশয়ের পরিমাণ ১ লাখ ৫২ হাজার ৩৭৮ হেক্টর। সামুদ্রিক জলাশয়ের একান্ত অর্থনৈতিক এলাকা ২০০ নটিক্যাল মাইল এবং মহিসোপান ৮৫ হাজার ১৫৩ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। দেশের দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। এটি সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের উৎস।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে প্রায় ২৬০ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ আছে। এ ছাড়া এসব জলাশয়ে আরও ১২ প্রজাতির বিদেশি মাছ ও ২৪ প্রজাতির চিংড়ি মাছ আছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে প্রায় ২৬০ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ আছে। এ ছাড়া এসব জলাশয়ে আরও ১২ প্রজাতির বিদেশি মাছ ও ২৪ প্রজাতির চিংড়ি মাছ আছে। সামুদ্রিক এলাকায় রয়েছে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ এবং ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি মাছ। মাছের শ্রেণিবিন্যাস বিভিন্ন রকম হতে পারে।
বর্তমানে দেশের রপ্তানি আয়ের ১ দশমিক ২৪ শতাংশ আসে মৎস্য খাত থেকে। বিশ্বের ৫০টির অধিক দেশে মাছ রপ্তানি হয়। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৮ হাজার ৪২ টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে আয় হয়েছে ৫ হাজার ১৯১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা- যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাছ রপ্তানি করে ৪ হাজার ৭৯০ কোটি টাকার বেশি আয় হয়েছে, এই অর্থবছরে প্রায় ৭০ হাজার টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
এফএও পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২৭ সাল নাগাদ বিশ্বের যে চারটি দেশ মাছ চাষে বিপুল সাফল্য অর্জন করবে, তার মধ্যে প্রথম দেশটি হবে বাংলাদেশ। এরপর থাইল্যান্ড, ভারত ও চীনের অস্থান থাকবে। বর্তমানে বিশ্বে মাছ উৎপাদনে প্রথম দেশ চীন, দ্বিতীয় ভারত আর তৃতীয় দেশ হচ্ছে মিয়ানমার। মৎস্য গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রতিবেশ ব্যবস্থা মিঠাপানির মাছ চাষের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। এখানকার সোয়া দুই লাখ হেক্টর উন্মুক্ত জলাশয় আর গ্রামীণ এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা লাখ লাখ পুকুরে মাছ চাষের যে সম্ভাবনা রয়েছে, তা এখনো পুরোপুরি কাজে লাগানো হয়নি। সরকার যদি মাছ চাষে আরও মনোযোগী হয়, চাষিদের সহায়তা করে, তাহলে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ মাছ উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হতে পারে।
এফএও'র হিসাব অনুযায়ী, ধারাবাহিকভাবে এক যুগ ধরেই বাংলাদেশ মাছ চাষে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে রয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে মাছের মোট উৎপাদন হয়েছে ৪১.৩৪ লাখ টন। এর মধ্যে চাষ করা মাছের পরিমাণ প্রায় ২০ লাখ টন। জাটকা সংরক্ষণসহ নানা উদ্যোগের ফলে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাছ ইলিশের উৎপাদন ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৪১৭ টন। দেশের জিডিপিতে ইলিশ মাছের অবদান ১ শতাংশ। আর জিডিপিতে পুরো মৎস্য খাতের অবদান ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা আইইউসিএনের গবেষণায় দেখা গেছে, এক সময় দেশের নদনদী ও জলাশয়গুলোতে ২৬৬ প্রজাতির মিঠা ও ঈষৎ লোনা পানির মাছ পাওয়া যেত। এর মধ্যে ৬৬ প্রজাতির কোনো সন্ধান নেই এখন। অবশিষ্ট ২০০ প্রজাতির মধ্যে ৫৪টি বিপন্ন প্রায়। ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের মধ্যে চারটির অবস্থা নাজুক। প্রাকৃতিক ও মানুষের সৃষ্ট কারণে দেশি ছোট মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত ও গবেষণায় দেশে বিপন্ন প্রজাতির মাছের সংখ্যা শতাধিক বলে দাবি করা হয়েছে।