ফসলের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ নষ্ট করে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ
বছরে ৩ হাজার কোটি টাকার ফল ও ফসল নষ্ট করে ইঁদুর মাঠ থেকে বাজারে অব্যবস্থাপনায় বছরে ১১ হাজার কোটি টাকার খাদ্যশস্য নষ্ট হচ্ছে
প্রকাশ | ১৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
আলতাব হোসেন
ফসল উৎপাদনে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ২০-৩০ শতাংশ ফসল নষ্ট করে। এছাড়া, বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বিশ্বব্যাপী কীটপতঙ্গের দ্রম্নত বিস্তার ঘটছে। এ অবস্থায়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উদ্ভূত কীটপতঙ্গের উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ রাখার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তাঝুঁকি কমানোর প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করার তাগিদ দিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশে কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার হয়। তবে বর্তমান সরকারের পদক্ষেপের কারণে যথেচ্ছ ব্যবহারের পরিমাণ কমছে। ২০০৯-১০ এর তুলনায় ২০২১-২২ সালে ১৯ শতাংশ কীটনাশক কম ব্যবহার হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের নৈতিবাচক প্রভাবে বিশ্বব্যাপী কীটপতঙ্গের দ্রম্নত বিস্তার ঘটছে। কৃষকরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কীটপতঙ্গের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। কীটপতঙ্গ আক্রমণের বিস্তারণের জন্য বর্তমানে বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পতিত। এ পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তাঝুঁকি হ্রাস করতে কার্যকর পরিবেশবান্ধব বালাই ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন ও বাস্তবায়নের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশ কীটতত্ত্ব সমিতির সাবেক সভাপতি এবং আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ডক্টর সৈয়দ নুরুল আলম বলেন, মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়, পরিবেশ দূষিত ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয় এবং কীটনাশক রেজিস্ট্যান্টস হয়।
এ দিকে মাঠ থেকে ফসল সংগ্রহ, বাজারজাতকরণের মধ্যে প্রতি বছর ১১ হাজার কোটি টাকার খাদ্যশস্য নষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু ধান নষ্ট হচ্ছে ২৮ লাখ টনের বেশি- যার বাজারমূল্য প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। যে সব ফসল বেশি নষ্ট হয় তার মধ্যে রয়েছে গম, ভুট্টা, পাট, আলু, মসুর ডাল, সরিষা, হলুদ ও মরিচ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) এগ্রিক্যালচার অ্যান্ড রুর?্যাল স্ট্যাটিস্টিক্স শীর্ষক প্রতিবেদনে এ সব তথ্য উঠে এসেছে।
কৃষিবিদরা বলছেন, জমি চাষ ও সেচে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লেও ফসল মাড়াইয়ে যন্ত্রপাতির ব্যবহার না থাকায় প্রতি বছর সময় ও মাড়াইপরবর্তী সংরক্ষণ, বাজারজাতে অব্যবস্থাপনায় নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণের ধান। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ এম হামিদুর রহমান বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্রে জর্জরিত বাংলাদেশে এক সময়ে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল।
সরকারের সাবেক এ কর্মকর্তা আরও বলেন, অপচয় কমিয়ে আনা, গুণগত মান নিশ্চিত করার মতো বিষয়ে এতদিন নজর দেয়া হয়নি। খাদ্য ঘাটতির পরিমাণ শূন্যের কাছাকাছি চলে আসায় অন্যান্য বিষয়ে নজর দেয়া হচ্ছে। উৎপাদন পরবর্তী ফসলের ক্ষতি শূন্যে নামিয়ে আনা গেলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন। ফসল সংরক্ষণে অবকাঠামোর পাশাপাশি কৃষকদের দক্ষতার অভাব রয়েছে। ফসলের অপচয় কমানোর পাশাপাশি নায্য দাম নিশ্চিত করতে এ সব বিষয়ে বাড়তি গুণত্ব দিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়ে সংরক্ষণ অবকাঠামো সৃষ্টি করতে হবে বলেও তিনি মনে করেন।
ইঁদুর বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ফল ও ফসল নষ্ট করছে। দেশে উৎপাদিত ধানের প্রায় ১৫ শতাংশ ইঁদুরের পেটে যায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশে ইঁদুরের কারণে বছরে আমন ধানের শতকরা ৫ থেকে ৭ ভাগ, গম ৪ থেকে ১২ ভাগ, গোল আলু ৫ থেকে ৭ ভাগ, আনারস ৬ থেকে ৯ ভাগ নষ্ট হয়। ইঁদুর শতকরা ৭ থেকে ১০ ভাগ সেচনালাও নষ্ট করে থাকে। ইঁদুর যে শুধুমাত্র দানাদার ফসলের ক্ষতি করে তা নয়, এ অন্যান্য ফসল ও ফলমূল, আসবাবপত্রের ক্ষতি সাধন করে, যেমন: নারিকেল, ডাল, অন্যান্য সবজি ইত্যাদি। বৈদু্যতিক তার ও যন্ত্রপাতি এর হাত থেকে রেহায় পায় না। তাছাড়া ইঁদুর বিভিন্ন ধরনের স্থাপনাও কেটে নষ্ট করে।
বিশ্বের অন্যতম ইঁদুর উপদ্রম্নত এবং বংশ বিস্তারকারী এলাকা হচ্ছে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা অঞ্চল- যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এখানকার উপকূলীয় লোনা ও মিঠাপানির মিশ্রণের এলাকাগুলো ইঁদুরের বংশ বিস্তারের জন্য বেশ অনুকূল। ফসলের মাঠ ছাড়াও এ অববাহিকায় অবস্থিত হাটবাজার ও শিল্পাঞ্চলগুলোতেও ইঁদুরের অত্যাচার বেশি পরিলক্ষিত হয়। সরকারি-বেসরকারি খাদ্য গুদাম, পাউরুটি ও বিস্কুট তৈরির কারখানা, হোটেল-রেস্তোরাঁ, পাইকারি ও খুচরা পণ্য বিক্রেতার দোকানে বিপুল পরিমাণে খাদ্য ইঁদুর নষ্ট করে। ইঁদুর বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্যের একটি প্রাণী। জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষা করতে ইঁদুরের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তবে সময়ে সময়ে ইঁদুর ফসল ও কৃষকের শক্র হিসেবে হানা দেয় ফল, সবজি ও ফসলের ক্ষেতে।
এশিয়ার দেশগুলোতে বছরে ১৮ কোটি মানুষের ১২ মাসের খাবার নষ্ট করে ইঁদুর। বাংলাদেশে প্রায় ৭০ লাখ মানুষের খাবার খেয়ে নেয় ইঁদুর। ইঁদুরের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ফিলিপাইন। দেশটির উৎপাদিত ধানের ২০ শতাংশ ইঁদুর খেয়ে ফেলে ও নষ্ট করে। এরপরই লাওস। দেশটির প্রায় ১৫ শতাংশ ধান ইঁদুরের পেটে যায়। ইঁদুরের উৎপাতের কারণে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয় হিসাবে ১১টি দেশকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের অর্ধেক জমির ফসল ইঁদুরের আক্রমণের শিকার হয়। বাংলাদেশে প্রায় ১৫ শতাংশ ধান, গম ইঁদুর খেয়ে ফেলে ও নষ্ট করে। এ ছাড়াও ইঁদুরের মাধ্যমে মোট ৬০ ধরনের রোগ ছড়ায়। ইঁদুর মুরগির খামারে গর্ত করে মুরগির ডিম ও ছোট বাচ্ছা খেয়ে ফেলে।
ইঁদুর স্তন্যপায়ী, সর্বভুক ও নিশাচর প্রাণী। কৃষি প্রধান বাংলাদেশে ফসলের জন্য ক্ষতিকর স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে ইঁদুর মানুষের প্রধান শত্রম্ন। মানুষের আশপাশে থেকেই এরা মাঠে, গুদামে, বাসাবাড়িতে, অফিস আদালতে প্রতিনিয়ত ক্ষতি করে চলেছে। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই যেখানে ইঁদুরের সমস্যা নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ইঁদুর প্রতি বছর বিশ্বের ৩ কোটি ৩৩ লাখ টন খাবার নষ্ট করে। এশিয়ায় ইঁদুর বছরে ১৮ কোটি মানুষের ১২ মাসের খাবার নষ্ট করে। বাংলাদেশে প্রায় ৬০-৭৪ লাখ লোকের এক বছরের খাবার ইঁদুরের কারণে নষ্ট হয়। ইঁদুর দ্বারা বছরে ফসল ও অন্যান্য জিনিসপত্রের প্রায় ১.৫-২.০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। তাছাড়াও ইঁদুর পেস্নগসহ প্রায় ৬০ ধরনের রোগ ছড়ায়। শাকসবজি ও ফলে প্রধানত দুই জাতের ইঁদুর বেশি ক্ষতি করে থাকে- যা মাঠের কালো ইঁদুর ও গেছো ইঁদুর বা ঘরের ইঁদুর নামে পরিচিত।
সব রকমের কৃষিজাত ফসলেই এদের পাওয়া যায়। এছাড়া শহর এলাকা, ঘর বাড়ি এবং গুদামেও এদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। মাঠের কালো ইঁদুর মাঠ ফসলে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে। এরা মাঝারি আকৃতির, ওজন প্রায় ১৫০-৩৫০ গ্রাম, পশম কালো ধূসর রঙের। মাথা ও শরীরের মোট দৈর্ঘ্যের তুলনায় লেজ কিছুটা খাটো। ফলগাছ ছাড়া সব ধরনের কৃষিজাত ফসলে এরা প্রত্যক্ষভাবে আক্রমণ করে ক্ষতি করে থাকে। ইঁদুর মাঠ ও গুদামে উভয় স্থানেই গর্ত করে, ফসল কেটে, খেয়ে, গর্তে নিয়ে, গুদামে খেয়ে, পায়খানা ও পশম, মাটি ও শস্যের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। গেছো ইঁদুর সাধারণত মাঝারি ধরনের, লম্বাটে, লালচে বাদামি বর্ণেরও হয়ে থাকে। পূর্ণ বয়স্ক অবস্থায় এদের ওজন প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম। শরীরের নিচের দিকটা সাদাটে বা হালকা বর্ণের। এই জাতের ইঁদুর গুদাম জাত শস্য, ঘরে রাখা খাদ্যশস্য, ফলমূল, তরিতরকারি ইত্যাদির ক্ষতি সাধন করে থাকে। এরা মাটিতে গর্ত না করে ঘরের মাচায় বা গুপ্ত স্থানে, গাছে বাসা তৈরি করে বংশবৃদ্ধি করে। এদের সাধারণত মাঠে কম দেখা যায়, তবে বাড়ির আশপাশে, উঁচু এলাকায় ও নারিকেল জাতীয় গাছে বেশি দেখা যায়।
ইঁদুর সব রকম সবজিতে আক্রমণ করে থাকে- তবে চারা গাছ ও পরিপক্ব অবস্থায় বেশি ক্ষতি করে থাকে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, ব্রোকলি এবং বেগুনের চারা ইঁদুরের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাঠের কালো ইঁদুর জমিতে গর্ত করে এবং গাছের লতা পাতা কেটে দেয় ও গর্তে নিয়ে জমা করে পরবর্তী পর্যায়ে যখন ফল ধরে তখন ফল খেয়ে নষ্ট করে ও এতে ফল পচে যায় এবং খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। টমেটো, বাঁধাকপি ইত্যাদি সবজিরও অনেক ক্ষতি করে থাকে। মিষ্টিকুমড়া, করলা, তরমুজ, বাঙ্গি, লাউ, শসা ইত্যাদি কুমড়া জাতীয় সবজি ক্ষেতে ইঁদুর প্রথমে এলোমেলোভাবে গর্ত করে মাটি উঠিয়ে ডিবি করে এবং গাছের লতা পাতা কেটে দেয় ও গর্তে নিয়ে জমা করে। পরবর্তী পর্যায়ে গাছে ফল ধরলে ইঁদুর ফল খেয়ে ক্ষত সৃষ্টি করে এতে ফল পচে নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে ইঁদুর সবজি ক্ষেতে ফসলের ক্ষতি করে থাকে। মাঠের কালো ইঁদুর সবজি ক্ষেতের প্রধানত বেশি ক্ষতি করে থাকে। গোলআলুর ক্ষেতে গাছের পাতা বৃদ্ধির সময় ইঁদুর প্রথমে মাঠে গর্ত করে মাটি উপরে উঠিয়ে ক্ষতি করে থাকে। ইঁদুর আলুর মাটির উপরের কচি পাতা ও ডগা কেটে দেয়। আলু ধরার সময় ইঁদুর গাছের শিকড় কেটে দেয়। তারপর আলু যখন বড় হয় তখন ইঁদুর মাটির নিচের আলু গর্ত করে খেয়ে ক্ষতি করে থাকে। সাধারণত ইঁদুর আলুর শতকরা ৫-৭ ভাগ ক্ষতি করে থাকে। মিষ্টিআলুর ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ বেশি দেখা যায়। মিষ্টিআলুর ক্ষেত লতায় ঢেকে যায় ফলে ইঁদুর প্রচুরসংখ্যক গর্ত করে ডগা ও লতা কেটে গর্তে নিয়ে যায়।
নারিকেল, কমলালেবু, জম্বুরা, আনারস, পেঁপে ইত্যাদি ফলে ইঁদুর অনেক ক্ষতি করে। বিভিন্ন ফলের চারা গাছ এবং পরিপক্ব ফলে অর্থনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে। পেঁপে ও নারিকেলের চারা ইঁদুর দ্বারা অনেকটা ক্ষতি হয়। চারা অবস্থায় ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। কমলালেবু, জাম্বুরা, মাল্টা ফলের শাস খেয়ে ফেলে- যার ফলে খাবারের অনুপযোগী হয়ে যায়।
সাধারণত গেছো ইঁদুর নারিকেলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে। একটি জরিপে দেখা গিয়েছে যে, পরিপক্ব নারিকেলের চেয়ে কচি ডাবে ক্ষতির পরিমাণ বেশি। ফলে ডাব ছিদ্র যুক্ত হয়ে যায় এবং গাছ থেকে মাটিতে ঝরে পড়ে। এতে নারিকেল পরিপক্ব হতে পারে না এবং ফলন অনেক কমে যায়। বাংলাদেশে দক্ষিণ অঞ্চল বরিশাল, খুলনায় নারিকেলের বেশি ক্ষতি পরিলক্ষিত হয়।
দুই ধরনের ইঁদুর আনারসের ক্ষতি করে থাকে। সাধারণত আনারসের নিচের দিকে যেখান থেকে পাকা আরম্ভ করে সেখান থেকে ২-৩ ব্যাসার্ধের বাঁকানো গর্ত করে আনারসের ক্ষতি করে থাকে। ইঁদুর কোনো কোনো সময় চিবিয়ে আনারসের ক্ষতি করে থাকে। ফলে বাজারে এর দাম কমে যায় এবং আনারসের ছত্রাক রোগ হয়ে পচে নষ্ট হয়। এভাবে আনারসে প্রায় শতকরা ৬ থেকে ৯ ভাগ ক্ষতি করে থাকে।
গ্রীষ্ম মৌসুমে ইঁদুর সাধারণত ফসলের ক্ষেতে ও গ্রাম এলাকার বিভিন্ন স্থানে গর্ত করে সেখানে অবস্থান করে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে নিন্মভূমি পস্নাবিত হলে এবং ফসলের জমিতে বৃষ্টির পানি জমলেই ইঁদুর ফসলের ক্ষেত অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উঁচু গ্রামীণ সড়ক, বেড়িবাঁধ ও পুরনো স্থাপনায় ইঁদুরের দল গিয়ে আশ্রয় নেয়। এ অবকাঠামোগুলো কাটাকাটি করে ইঁদুর বাসা তৈরি করে। বর্ষা এলে জোয়ার-ভাটার পানির মতো ইঁদুরও বেড়িবাঁধগুলোর জন্য অভিশাপ হয়ে আসে। জোয়ার ও পানি ফসলের মাঠ ডুবিয়ে দিলে ইঁদুর এসে বেড়িবাঁধ ও গ্রামীণ সড়ক ছিদ্র করে সেখানে আশ্রয় নেয়। আর ওই ছিদ্র দিয়ে পানি প্রবেশ করে বেড়িবাঁধ ও সড়কগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ধানের জমিতে ইঁদুর দমনের ক্ষেত্রে জীবন্ত ফাঁদ সবচেয়ে কার্যকরী। ফাঁদে টোপ হিসেবে শামুকের মাংস, ধান, নারিকেলের শাঁস, কলা ও শুঁটকি মাছ ব্যবহার করলে ইঁদুর বেশি ধরা পড়ে। তাছাড়া ধান বা চালের সঙ্গে নারিকেল তৈল টোপ হিসেবে ব্যবহার করলে বেশ কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যায়। শস্য গুদাম এবং বসতবাড়িতে ইঁদুর দমনের ক্ষেত্রে আঁঠাযুক্ত ফাঁদ বেশি কার্যকরী। ফসল কাটার পর ধানের অবশিষ্টাংশ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে বা সরিয়ে ইঁদুরের সংখ্যা সীমিত করা যায়। ধাতব পাত দ্বারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমে ফল গাছে ইঁদুর দমন করা যায়। এক্ষেত্রে টিনের পাত লাগানোর পূর্বে গাছকে ইঁদুর মুক্ত করতে হবে। নিবিড়ভাবে বিভিন্ন রকমের জীবন্ত ও মরণ ফাঁদ ব্যবহার করে ইঁদুর দমন করা যায়। সাধারণত যেখানে ইঁদুর দেখা যায় এবং যেখান দিয়ে ইঁদুর চলাফেরা করে যেমন দেয়ালের পার্শ্ব, চালের উপর, গাছের উপর বা গর্তের কাছাকাছি সেখানে ফাঁদ স্থাপন করা উচিত। বিষটোপ ছাড়া এক প্রকার গ্যাস বড়ি দিয়েও ইঁদুর দমন করা যায়।