শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিরোধে জড়িয়েছে ইরান-যুক্তরাজ্য

ব্রিটিশ তেল ট্যাংকার আটকের চেষ্টা, অস্বীকার তেহরানের ইরানকে আবারও আলোচনায় বসাতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র
যাযাদি ডেস্ক
  ১২ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

এবার বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে ইরান ও যুক্তরাজ্য। বুধবার পারস্য উপসাগরে কয়েকটি ইরানি বোট একটি ব্রিটিশ তেল ট্যাংকারকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্রিটিশ সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, হরমুজ প্রণালি পার হওয়ার সময় ব্রিটিশ একটি তেলবাহী ট্যাংকারকে থামিয়ে দেয়া এবং গতিপথ পরিবর্তনের চেষ্টা চালিয়েছে ইরানি বাহিনী। কিন্তু ব্রিটিশ নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে তাদের সতর্ক করা হয়। তখন ইরানের নৌ-জাহাজ থেকে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর জাহাজকে সরে যেতে বলা হয়েছিল। এটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে দাবি করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। তবে যুক্তরাজ্যের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান। যুক্তরাজ্য ওই এলাকায় 'উত্তেজনা বাড়াচ্ছে' অভিযোগ করে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেন, 'যুক্তরাজ্যের দাবির কোনো ভিত্তি নেই।' সংবাদসূত্র : বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, হরমুজ প্রণালির উত্তর দিকের প্রবেশ মুখে ইরানের বিপস্নবী রক্ষীবাহিনীর বলে ধারণা করা পাঁচটি বোট তেলবাহী জাহাজ ব্রিটিশ হেরিটেজকে থামতে বলে, কিন্তু একটি ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ তাদের সতর্ক করলে তারা সরে পড়ে। সেখানে থাকা রাজকীয় নৌবাহিনীর এইচএমএস মন্ট্রোজ (যুদ্ধজাহাজ) তাদের বন্দুকগুলো ওই বোটগুলোর দিকে তাক করে রেডিও মারফত তাদের সতর্ক করে, এরপর তারা সেখান থেকে চলে যায়। এটি হয়রানি এবং ওই প্রণালিতে বিঘ্ন সৃষ্টির চেষ্টা বলে জানিয়েছেন আরেক মার্কিন কর্মকর্তা।

গত সপ্তাহে জিব্রাল্টার উপকূলে ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনী ইরানি সুপার-ট্যাঙ্কার গ্রেস-১ জব্দ করার প্রায় এক সপ্তাহ পর এ ঘটনাটি ঘটল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে ওই ট্যাংকারটি ইরান থেকে সিরিয়ায় অশোধিত তেল নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহে সেটি আটক করে তারা। এই ট্যাংকার আটকের ঘটনায় যুক্তরাজ্যকে 'পরিণতি' ভোগ করতে হতে পারে বলে বুধবার সকালে হুশিয়ার করেছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।

মে ও জুনে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় জলসীমায় বেশ কয়েকটি তেল ট্যাংকারে হামলা হয়। এসব হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র। দায় অস্বীকার করে ইরান। গত মাসে হরমুজ প্রণালির কাছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নজরদারি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করে ইরান। এর জবাবে ইরানে বিমান হামলার নির্দেশ দিয়েও শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত থেকে সরে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সর্বশেষ হরমুজ প্রণালি ও ইয়েমেন উপকূলের বাব আল-মানডাব প্রণালিতে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলোর জাহাজগুলোকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য সামরিক জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে ওয়াশিংটন।

ইরানকে আবারও আলোচনায় ডাকছে যুক্তরাষ্ট্র

এদিকে, নিজেরা পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে এবং ইরানবিরোধী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেও যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করছে, চুক্তি লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে তেহরান অন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে তেহরান আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিজেই নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে বলেও মন্তব্য করেছে দেশটি। তবে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ওয়াশিংটন-তেহরান আলোচনার দরজা এখনো খোলা আছে।

পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়া এবং নিজেদের প্রতিশ্রম্নতি পালনে ইউরোপীয় দেশগুলোর ব্যর্থতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে চলতি বছরের মে মাসে তেহরান চুক্তি থেকে আংশিক সরে আসার ঘোষণা দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সমঝোতা বাস্তবায়নের জন্য দুই মাসের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। ৭ জুলাই সেই সময়সীমা শেষে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা পাঁচ শতাংশে উত্তীর্ণ করার ঘোষণা দেয় ইরান। ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে এই মাত্রা ৩.৬৭ শতাংশে সীমিত রাখার প্রতিশ্রম্নতি ছিল তেহরানের।

পারমাণবিক চুক্তির শর্ত থেকে আবারও ইরানের সরে আসার ঘোষণায় জরুরি বৈঠক করার জন্য আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রতি অনুরোধ জানায় যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার সেই বৈঠক ডাকা হয়। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, 'সম্প্রতি ঘোষিত পারমাণবিক পদক্ষেপ থেকে সরে আসতে এবং ভবিষ্যতের সমৃদ্ধকরণ পরিকল্পনা বাতিল করতে আমরা ইরানকে আহ্বান জানাচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট করছে, কোনো ধরনের পূর্বশর্ত ছাড়াই আমরা আলোচনার পথ খোলা রেখেছি। সম্পর্ক পুরোপুরি স্বাভাবিক করার সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনার জন্য ইরানকে প্রস্তাব দিচ্ছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<57745 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1