ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ব্যক্তিগত রেষারেষি দিন দিন রাড়ছে। জেলেনস্কিকে একের পর এক বাকযুদ্ধে আক্রমণ করে যাচ্ছেনপ্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জেলেনস্কিকে স্বৈরশাসক হিসেবে উলেস্নখ করেছেন। এর মাত্র একদিন আগেই তিনি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের জন্যও ইউক্রেনকেই দায়ী করেন। তার এসব মন্তব্যের কারণে এই দুই নেতার মধ্যে ব্যক্তিগত বিভেদ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর আগে সৌদি আরবে ইউক্রেনকে ছাড়াই রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বৈঠকের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, সৌদি আরবে ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনায় তিনি অবাক হয়েছেন। ভবিষ্যতে ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে কোনো আলোচনা না করার দাবি জানান জেলেনস্কি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাশিয়ার প্রভাবিত ভুল তথ্যের জগতে বসবাস করছেন বলেও মন্তব্য করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তাদের মধ্যেকার বিরোধ ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকায় শংকিত ইউরোপীয় নেতারা।
গত বছরের মে মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেলেনস্কির পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তবে ২০২২ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে রাশিয়া পূর্ণমাত্রায় আক্রমণ শুরু করার পর থেকে ইউক্রেন সামরিক আইনের অধীনে রয়েছে এবং নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় থাকার জন্য জেলেনস্কির সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। যদিও ইউরোপের দেশগুলোর নেতারা ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। ডাউনিং স্ট্রিটের এক মুখপাত্র বলেছেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কেইর স্টারমার ইউক্রেনের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা হিসেবে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেছেন। ওই মুখপাত্র আরও জানিয়েছেন যে, যুদ্ধের সময় নির্বাচন স্থগিত করা পুরোপুরি যুক্তিসঙ্গত ছিল যেমনটি যুক্তরাজ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় করেছিল। সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসনও ট্রাম্পের স্বৈরশাসক শব্দটি ব্যবহারের সমালোচনা করেছেন। অপরদিকে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক ট্রাম্পের এমন মন্তব্যকে অযৌক্তিক বলেছেন।
তিনি বলেন, আপনি যদি কেবল একটি টুইট করার পরিবর্তে বাস্তব জগতের দিকে তাকান তবে আপনি জানেন যে ইউরোপে কাকে একনায়কতন্ত্রের পরিস্থিতিতে থাকতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছে রাশিয়ার লোকেরা এবং বেলারুশের লোকজন। ফ্লোরিডা থেকে বক্তব্য দেওয়ার সময় ট্রাম্প জেলেনস্কিকে স্বৈরশাসক হিসেবে উলেস্নখ করেন। তিনি বলেন, জেলেনস্কি নির্বাচনের বিষয়ে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি ইউক্রেনের জরিপে পিছিয়ে আছেন। প্রতিটি শহর গুঁড়িয়ে দিয়ে আপনি কিভাবে উচ্চতার আসনে থাকতে পারেন? এর আগে ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেনের উচিত ছিল যুদ্ধ বন্ধ করতে আগেই চুক্তি করে ফেলা। ট্রাম্প বলেছেন, আমি শুনেছি, আলোচনায় ডাক না পেয়ে ইউক্রেন ক্ষুব্ধ। তিন বছর ধরে যুদ্ধ চলেছে। তারা আলোচনার জন্য এত সময় পেয়েছে। তারা তো অনেক আগেই বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে পারতো। ট্রাম্প আরও বলেন, সৌদিতে আলোচনার পর আমি এখন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। রাশিয়া কিছু করতে চাইছে। তারা আক্রমণ বন্ধ করতে চাইছে। আমার মনে হয়, এই যুদ্ধ বন্ধের ক্ষমতা আমার আছে।ইউরোপের দেশগুলোর ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব নিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, যদি তারা এটা করতে চায় তো খুব ভালো। আমার এতে কোনো আপত্তি নেই।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, আমি দেশকে বিক্রি কর দিতে পারেন না। এই মন্তব্যের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরল খনিজ সম্পদ চুক্তি নিয়ে তার অসন্তোষ রয়েছে। তিনি জানান, চুক্তির প্রথম খসড়ায় ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার কোনো উলেস্নখ ছিল না, অথচ যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদের ৫০ শতাংশ দাবি করেছিল। জেলেনস্কি স্পষ্ট করে বলেন, আমি দেশের ভবিষ্যৎ বিক্রি করতে পারি না। তার মতে, ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদের কোনো চুক্তি তখনই স্বাক্ষরিত হবে, যখন এটি শুধু অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করবে না, বরং দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাও নিশ্চিত করবে। জেলেনস্কি আরও অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার ছড়ানো বিভ্রান্তিকর তথ্যের জগতে বাস করছেন। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক জনপ্রিয়তা সংক্রান্ত মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি একথা বলেন। কিয়েভের হিসাবে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে ৩২০ বিলিয়ন অর্থাৎ ৩২ হাজার কোটি ডলার ব্যয়ে ফেলেছে। এর মধ্যে ১২০ বিলিয়ন বা ১২ হাজার ডলার ইউক্রেন নিজেই বহন করেছে, বাকিটা এসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ থেকে। তবে এই হিসাব যুক্তরাষ্ট্র মানতে নারাজ।
\হইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে একনায়ক বলে কটাক্ষ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার একই বক্তব্যে জেলেনস্কিকে প্রচ্ছন্ন হুমকির সুরে বলেছেন, শান্তি নিশ্চিতে দ্রম্নত ব্যবস্থা না নিলে পুরো দেশেই হারানোর ঝুঁকিতে আছেন তিনি। তাদের মধ্যে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকা রেষারেষিতে শঙ্কায় আছেন ইউরোপীয় নেতারা। ট্রাম্প লিখেছেন, জেলেনস্কি হচ্ছেন নির্বাচনবিহীন একনায়ক। যুদ্ধের অবসান ঘটাতে তার দ্রম্নত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। নইলে দেশটা আর তার কব্জায় থাকবে না। তার এই বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কিয়েভ। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্দ্রিই সিবিহা এক্স-এ বলেছেন, নিজ দেশ বিকিয়ে দেওয়ার জন্য অন্য কেউ জোর খাটাতে পারে না। আমাদের আত্মরক্ষার্থে লড়াই করার অধিকার রয়েছে। রুশ আগ্রাসন শুরুর পর ২০২২ সালে দেশের সামরিক আইন জারি করেছেন জেলেনস্কি। এ অবস্থায় দেশে প্রেসিডেনশিয়াল ও পার্লামেন্টারি নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়। তাই, ২০২৪ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও জেলেনস্কি এখনও ক্ষমতায় রয়ে গেছেন।