সৌদিতে নিষ্ফল মার্কিন-রুশ বৈঠক

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মেলেনি নির্দেশনা

বাকযুদ্ধে জড়ালেন জেলেনস্কি-ট্রাম্প

প্রকাশ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যেকার যুদ্ধ বন্ধে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যেকার বৈঠকে কোন ধরনের দিক নির্দেশনা মিলেনি। যুদ্ধ বন্ধে আগমী দিনে কাজ করার ব্যাপারে একমত হয়েছেন মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তারা। দেশ দুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিলেও কার্যত সাফল্য আসেনি। এই বৈঠকে ইউক্রেন কিংবা ইউরোপীয় কোন দেশের কোন প্রতিনিধি না থাকায় বৈঠকের গুরুত্ব অনেকটা খর্ব হয়েছে। আর এই বৈঠককে ঘিরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনল্ড ট্রাম্পের মধ্যে খানিকটা বাক যুদ্ধের অবতারনা হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনায় তিনি অবাক হয়েছেন। ভবিষ্যতে ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে কোনো আলোচনা না করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনের উচিত ছিল যুদ্ধ বন্ধ করতে আগেই চুক্তি করে ফেলা। ট্রাম্প বলেন, আমি শুনেছি, আলোচনায় ডাক না পেয়ে ইউক্রেন ক্ষুব্ধ। তিন বছর ধরে যুদ্ধ চলেছে। তারা আলোচনার জন্য এত সময় পেয়েছে। তারা তো অনেক আগেই বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে পারতো। ট্রাম্প আরও বলেন, সৌদিতে আলোচনার পর আমি এখন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। রাশিয়া কিছু করতে চাইছে। তারা হামলঅ বন্ধ করতে চাইছে। আমার মনে হয়, এই যুদ্ধ বন্ধের ক্ষমতা আমার আছে। ইউরোপের দেশগুলোর ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব নিয়ে ট্রাম্প বলেনে, যদি তারা এটা করতে চায় তো খুব ভালো। আমার এতে কোনো আপত্তি নেই। সৌদি আরবে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। আলোচনার পর লাভরভ বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনে কোনো ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতি মেনে নেবে না। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দুই দেশের প্রতিনিধিদল যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য আলোচনা শুরু করবে। লাভরভ জানিয়েছেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা শিগগির আলোচনা শুরু করবেন। মার্কো রুবিওর সঙ্গে তার খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। তারা একে অন্যের কথা শুনেছেন। লাভরভ আরও জানিয়েছেন, রাশিয়া আগেই বলেছে, ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করা যাবে না। ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে সেটা রাশিয়ার কাছে সরাসরি হুমকির মতো বিষয় হবে। রুবিও বলেছেন, রাশিয়া যে যুদ্ধ বন্ধ করতে চাইছে, এই বিষয়ে আমার মনে কোনো সংশয় নেই। সব পক্ষকেই কিছু বিষয় মেনে নিতে হবে। তবে সেই বিষয়গুলো কী তা নিয়ে আগে থেকে আলোচনা করতে চাই না। সামনে দীর্ঘ পথ রয়েছে। এই আলোচনার মাধ্যমে সেই পথ চলা শুরু হলো মাত্র। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে নতুন প্রচেষ্টা চালাতে রাজি হয়েছে। মঙ্গলবার রিয়াদে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের পর মার্কিন কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা আলোচনা থেকে বাদ পড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রম্নস জানান, উভয় পক্ষ উচ্চ পর্যায়ের দল গঠন করে একটি টেকসই সমাধানের পথ খুঁজতে কাজ করবে। রুশ আলোচক ইউরি উশাকভ বলেন, যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা চেয়েছিলাম, সেসব নিয়েই গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। তবে, বৈঠকের মধ্যেই মস্কো নতুন শর্ত সামনে এনেছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, শুধু ইউক্রেনকে ন্যাটো সদস্যপদ না দেওয়াই যথেষ্ট নয়। ২০০৮ সালে বুখারেস্ট শীর্ষ সম্মেলনে দেওয়া প্রতিশ্রুতিও নাকচ করতে হবে। ওই সময় ইউক্রেনকে ভবিষ্যতে সদস্য করার কথা বলা হয়েছিল। এ নিয়ে ইউক্রেন, ন্যাটো বা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনও প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বারবার বলেছেন, ন্যাটো সদস্যপদই তার দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার একমাত্র গ্যারান্টি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্রম্নত যুদ্ধবিরতি চান। মুখপাত্র ব্রম্নস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শান্তি চায় এবং বৈশ্বিক নেতৃত্বের মাধ্যমে তা অর্জন করতে কাজ করছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই একমাত্র নেতা, যিনি রাশিয়া-ইউক্রেনকে আলোচনার টেবিলে আনতে পারেন। রুশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের সম্ভাব্য শর্ত নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে তা শিগগিরই হবে না। এদিকে সৌদি আরবে রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে সব পক্ষকে ছাড় দিতে হবে। মঙ্গলবার রিয়াদে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ইউক্রেনের ভূখন্ড ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বৈঠক শেষে বলেন, একটি দীর্ঘ ও কঠিন পথের প্রথম ধাপ শেষ হল। তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্রম্নততম সময়ে যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই আলোচনার লক্ষ্য একটি ন্যায্য, স্থায়ী ও টেকসই সমাধানে পৌঁছানো। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলে থাকা হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্‌লাদিমির পুতিনের মধ্যে শীর্ষ বৈঠকের তারিখ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।