ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চললেও গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে শত শত ঘরবাড়ি ধ্বংস করছে ইসরাইল। আল জাজিরার ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা সানাদ পরিচালিত স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণে উঠে এসেছে এই তথ্য। রাফাহর মিসর-গাজা সীমান্ত, যা বহু দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। ২০২৪ সালের মে মাসে সেটি ইসরায়েল বন্ধ করে দেয়। ১৯৭৯ সালের মিসর-ইসরাইল শান্তি চুক্তি লঙ্ঘন করে সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরাইল। এরপর থেকে ইসরাইল ফিলাদেলফি করিডোরে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করছে। মিসর ও গাজার মধ্যকার ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা ফিলাদেলফি করিডোর নামে পরিচিত ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে এই করিডোরে ইসরাইলের উপস্থিতির গুরুত্ব বারবার তুলে ধরেছেন। সানাদ প্রকাশিত উপগ্রহ চিত্র অনুসারে, ১৯ থেকে ২১ জানুয়ারির মধ্যে তোলা ছবিগুলোতে দেখা গেছে, রাফাহ সীমান্তে ইসরাইলি সেনাবাহিনী বালির দুর্গ নির্মাণ করেছে। সেই সঙ্গে ১.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রাস্তা নির্মাণ করেছে যা ওই বালির দুর্গের সমান্তরালে বিস্তৃত। এছাড়াও সংস্থাটি জানায়, সীমান্তের উত্তরে নতুন একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করা হয়েছে। ইসরাইলি বাহিনী হাজার হাজার রাফাহবাসীকে তাদের ঘরে ফিরতে বাধা দিচ্ছে। যারা নিজেদের ঘরে ফেরার চেষ্টা করছিল, তাদেরকে গুলি করে আহত ও হত্যা করেছে সেনারা। যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে ইসরাইল এই এলাকায় তাদের সেনা সংখ্যা কমিয়ে আনতে এবং চুক্তির ৫০তম দিনে সম্পূর্ণভাবে সেনা প্রত্যাহার করতে রাজি হয়েছিল। ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। ওদিন থেকে ১ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত তোলা স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইসরাইলি বাহিনী এই এলাকায় নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। রাফাহ শহরের আস-সালাম, ইদারি এবং তেল জারাব এলাকায় ৬৪টি ভবন বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে। এই ধ্বংসযজ্ঞ মিসরীয় সীমান্ত থেকে মাত্র ৭০০ মিটার দূরে ঘটেছে। একই সময়ে সানাদ আরও চিহ্নিত করেছে যে রাফাহর পশ্চিমে তাল আস-সুলতান এলাকায় অন্তত ছয়টি ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যা মিসর সীমান্ত থেকে ৭৫০ মিটার দূরে। এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুরশ জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরাইলি হামলা, অবিস্ফোরিত গোলাবারুদ বা আগের আঘাতের কারণে ১১৮ জন নিহত হয়েছে। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পাশাপাশি, ইসরায়েল পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা যেমন: খাদ্য, জ্বালানি, তাঁবু এবং জরুরি আশ্রয়সামগ্রী প্রবেশ করতেও বাধা দিচ্ছে।রাফাহর মেয়র আহমেদ আল-সুফি জানিয়েছেন, শহরের বেশিরভাগ বাসিন্দা এখনো বাস্তুচু্যত। আনুমানিক ২ লাখ মানুষ আল-মাওয়াসি, খান ইউনিস এবং গাজার অন্যান্য জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু তারা ঘরে ফিরতে পারছে না। সূত্র: আল জাজিরা
এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আরও ২৫ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৪৮ হাজার ২৬০ ছাড়িয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৫ মাসের বেশি সময় পর গত মাসেই ফিলিস্তিনের গাজায় কার্যকর হয়েছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি।