পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ায় পৃথক দুইটি ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনী ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে তুমুল গোলাগুলি হয়েছে। এতে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে চারজন সেনা এবং ১৫ জন সন্ত্রাসী রয়েছে। শনিবার দেশটির সামরিক বাহিনীর মিডিয়া উইং এই তথ্য জানিয়েছে। খবর জিও নিউজের। এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বলেছে, দেরা ইসমাইল খান জেলার হাথালার জেনারেল এলাকায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলাকালে নয়জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। এসব সন্ত্রাসী বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল বলে বিবৃতিতে বলা হয়। এ ছাড়া নর্থ ওয়াজিরিস্তান জেলার মিরান শাহ এলাকায় আরেক অভিযান চালায় পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী। সেখানে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর তুমুল গোলাগুলি হয়। এতে লেফটেন্যান্ট মুহাম্মদ হাসান আরশাফ, নায়েব সুবেদার মুহাম্মদ বিলাল, সিপাহী ফারহাত উলস্নাহ, সিপাহী হিমাত খান নিহত হয়েছে। এছাড়া গোলাগুলিতে ছয়জন সন্ত্রাসী নিহত হয়। আইএসপিআরের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যেকোনো সন্ত্রাসীকে নির্মুল করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার পরিমাণ অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে এসব হামলা হচ্ছে। পাকিস্তান ইন্সটিটিউট ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (পিআইসিএসএস) জানিয়েছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার পরিমাণ বেড়েছে। বিগত মাসের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেড়েছে। পিআইসিএসএস বলছে, জানুয়ারিতে দেশজুড়ে অন্তত ৭৪টি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এতে ৯১ জন নিহত হয়েছে। যাদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ৩৫ জন, ২০ জন বেসামরিক লোক এবং ৩৬ জন সন্ত্রাসী। এছাড়া আহত হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর ৫৩ সদস্য, ৫৪ জন বেসামরিক লোক এবং ১০ জন সন্ত্রাসী। এদিকে রোববার এক প্রতিবেদনে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল জানায় শনিবার খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে দুটি পৃথক লড়াইয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন তরুণ অফিসার এবং তিনজন সৈন্য মারা গেছেন এবং ১৫ খোয়ারিজ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মিডিয়া উইং ইন্টার সার্ভিস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে বলেছে, গোয়েন্দা তথ্যে খোয়ারিজ সন্ত্রাসীদের উপস্থিতির খবর পেয়ে ডেরা ইসমাইল খান জেলার হাথালা এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালায়। অভিযান চলাকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সৈন্যরা কার্যকরভাবে সন্ত্রাসীদের অবস্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হয় এবং খোয়ারিজ সন্ত্রাসীদের নেতা ফরমান ওরফে সাকিব, খারজি আমানুলস্নাহ ওরফে তুরি, খারজি সাঈদ ওরফে লিয়াকত এবং খারজি বিলালসহ ৯ জন খোয়ারিজকে হত্যা করা হয়। নিহত এসব খোয়ারিজ সন্ত্রাসী ওই এলাকায় অসংখ্য সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিল এবং একইসঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায়ও ছিল। এছাড়া উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলার মিরান শাহে পরিচালিত অন্য একটি অভিযানে, ছয়জন খোয়ারিজ সন্ত্রাসীকে হত্যা করে নিরাপত্তা বাহিনী। তবে এই অভিযানে তীব্র গুলি বিনিময়ের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মুহাম্মদ হাসান আরশাফ নিহত হন। এসময় আরও তিনজন সেনাসদস্য প্রাণ হারান। তারা হচ্ছেন- নায়েব সুবেদার মুহাম্মদ বিলাল, সিপাহী ফারহাত উলস্নাহ এবং সিপাহী হিমত খান। আইএসপিআর বলেছে, পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসবাদের হুমকি নিশ্চিহ্ন করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং সাহসী সৈন্যদের এই ধরনের আত্মত্যাগ আমাদের সংকল্পকে আরও শক্তিশালী করবে।
\হএদিকে পাকিস্তানের পেশোয়ারে বন্দুকধারীর গুলিতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। রোববার ভোরে শহরের বাদাবর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। ব্যক্তিগত শত্রম্নতার জেরে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ভোরে মাশোখেল এলাকায় একটি গাড়ির ওপর অতর্কিত গুলি চালায় অভিযুক্ত। এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন প্রাণ হারান। পুলিশ জানিয়েছে, হামলার কারণ ব্যক্তিগত বিরোধ। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। গত মাসেও পেশোয়ারসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে বেশ কয়েকটি প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটেছিল। সেসময় তেহকাল এলাকায় দুই পক্ষের গোলাগুলিতে পাঁচজন নিহত ও ছয়জন আহত হন। পুলিশের দাবি, এই সংঘর্ষও ব্যক্তিগত শত্রম্নতার ফল। এছাড়া, দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের ওয়ানায় পুরোনো শত্রম্নতার জেরে পৃথক দুটি ঘটনায় এক পুলিশ সদস্যসহ তিনজন নিহত হন। অন্যদিকে, সাইদু শরীফের গুলকাদা এলাকায় এক সিনিয়র আইনজীবী ও তার ভাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সবশেষ, গত বুধবার সন্ধ্যায় করাচির বালদিয়া-৮ এলাকায় এক ৬৫ বছর বয়সী আফগান নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হয়। সাঈদাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইদ্রিস বাঙ্গাশ জানান, নিহত আলাউদ্দিন নামাজ পড়ে মসজিদের ভেতরে কুরআন তেলাওয়াত করছিলেন। এসময় ফোন বাজলে তিনি বাইরে যান। তখন মোটরসাইকেলে আসা দুই বন্দুকধারী তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়।আলাউদ্দিনকে গুরুতর আহত অবস্থায় ডা. রুথ ফাউ সিভিল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশের ধারণা, এটি ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে ঘটে থাকতে পারে। সূত্র: ডন