জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিবাসী বাবা-মা

প্রকাশ | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রথম সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার অপেক্ষায় এক দম্পতি -ইন্টারনেট
প্রথম সন্তানকে স্বাগত জানানোর সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন নেহা সতপুতে এবং অক্ষয় পিসে। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার এই ভারতীয় দম্পতি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এইচ-১ বি ভিসাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। দক্ষ বিদেশি কর্মীদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার জন্য এই এইচ-১ বি ভিসা। আগামী ২৬শে ফেব্রম্নয়ারি তাদের আসন্ন পুত্রসন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার কথা। তাদের আশা ছিল মার্কিন নাগরিক হিসাবে জন্মগ্রহণ করবেন তাদের প্রথম সন্তান। একটা বড় প্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করেন এই দম্পতি। নতুন অভিভাবকদের জন্য ছুটির নীতি রয়েছে ওই প্রযুক্তি সংস্থায়, সেই সমস্ত কিছুকে মাথায় রেখেই ধীরে ধীরে ক্যালিফোর্নিয়ার সান জোসেতে নিজেদের জীবন গড়ে তুলেছিলেন তারা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক নির্বাহী আদেশ তাদের স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত অস্থায়ী বিদেশি কর্মীদের (যুক্তরাষ্ট্রে) জন্মানো সন্তানদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব না দেওয়ার বিষয়ে তিনি আইন করতে চান। এতদিন বাবা-মায়ের অভিবাসন স্ট্যাটাস যাই থাকুক না কেন, তাদের সন্তানদের জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব দেওয়া হতো। জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্প যে পরিবর্তন আনতে চান, সেই সংক্রান্ত মামলায় প্রাথমিকভাবে দুই সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দিয়েছিল সিয়াটল আদালত। সেই মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়ে ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে আপাতত আটকে দিয়েছেন মেরিল্যান্ডের একজন ফেডারেল বিচারক। এর অর্থ হলো আদালতে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই বিধি কার্যকর করা যাবে না। যদিও উচ্চতর আদালত যে কোনও সিদ্ধান্তকে বদলে দিতে পারে এবং এক্ষেত্রেও সেই আশঙ্কা রয়ে যাচ্ছে। এই বিষয় সংক্রান্ত একাধিক মামলা এবং আইনি চ্যালেঞ্জ, অক্ষয় পিসা এবং তার স্ত্রী নেহার মতো হাজার হাজার মানুষকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে পিসা বলেন, 'এর সরাসরি প্রভাব আমাদের ওপর পড়েছে। যদি এই বিধি কার্যকর হয়, তাহলে আমরা জানি না এর পরে কী হবে, এটা সম্পূর্ণ ধোঁয়াশার মতো একটা ব্যাপার।' মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অভিবাসী যারা খুব শিগগিরই অভিভাবক হতে চলেছেন, তাদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, নতুন বিধি চালু হলে তাদের সন্তানের জাতীয়তা কী হবে? নিউইয়র্কভিত্তিক ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি সাইরাস মেহতা জানিয়েছেন, উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। মেহতা বলেছেন, 'মার্কিন আইনে এই দেশে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিকে অ-অভিবাসী (নন-ইমিগ্রেন্ট) মর্যাদা দেওয়ার কিন্তু কোনও রকম বিধান নেই।' এদিকে, সন্তান জন্মের নির্ধারিত তারিখ যতই এগিয়ে আসছে, ততই উদ্বেগ বাড়ছে হবু বাবা-মায়েদের। আসন্ন সন্তানকে নির্ধারিত সময়ের আগেই সি-সেকশনের মাধ্যমে প্রসবের বিষয়ে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শও করেছেন নেহা এবং অক্ষয় পিসার মতো অনেকেই। চিকিৎসকদের মতে, যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তবে গর্ভবতী নারীরা ৪০তম সপ্তাহে সন্তান জন্ম দিতে পারেন। এই অবস্থায়, নির্ধারিত সময়ের জন্য অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেহা সতপুতে ও তার স্বামী। হবু মা নেহা সতপুতে বলেছেন, 'আমি চাই প্রাকৃতিক নিয়মেই সমস্ত কিছু চলুক।' অন্যদিকে, অক্ষয় পিসে জানিয়েছেন তার অগ্রাধিকার হলো তার সন্তান এবং স্ত্রীর স্বাস্থ্য। তার কথায়, 'সন্তানের নির্বিঘ্নে জন্মগ্রহণ করা এবং স্ত্রীর স্বাস্থ্যই আমার কাছে অগ্রাধিকার। তার পরে আসবে সন্তানের নাগরিকত্বের বিষয়টা।' মার্কিন নাগরিকত্ব 'অত্যন্ত লোভনীয়', বিশেষত দক্ষ এইচ-১ এস বি ভিসাধারী ব্যক্তিদের কাছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী দ্বিতীয় বৃহত্তম অভিবাসী গোষ্ঠী হলো ভারতীয়রা। অভিবাসন নীতি বিশ্লেষক স্নেহা পুরী এই বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, জন্মগত নাগরিকত্বের বিরুদ্ধে বিধি নিষেধ ভারতীয়দের জন্য বেশ সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ লক্ষেরও বেশি ভারতীয়ের নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসাতে (অ-অভিবাসী ভিসায়) রয়েছেন। স্নেহা পুরী বিবিসিকে জানান, 'এটা কার্যকর হলে, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মানো তাদের কোনও সন্তানই নাগরিকত্ব পাবে না।' অনলাইন গ্রম্নপগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার হবু বাবা-মায়েরা এই নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা ক্রমাগত জানিয়ে চলেছেন। আইন কার্যকর হলে তার প্রভাব এবং সেক্ষেত্রে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে সেই নিয়েও অনলাইনে আলোচনাও করে চলেছেন তারা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, এটা বৈধ ও স্থায়ী বাসিন্দাদের সন্তানদের মার্কিন নাগরিকত্ব সংক্রান্ত ডকুমেন্টেশন পাওয়ার ক্ষমতাকে কোনোভাবে প্রভাবিত করবে না। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় গ্রিন কার্ড পাওয়া সহজ নয়। তার জন্য যে কোনও বিদেশি নাগরিকদের যতদিন অপেক্ষা করতে হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয় ভারতীয়দের।