মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে জর্ডানের বাদশাহ আবদুলস্নাহ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প -ইন্টারনেট
গাজা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে পরিকল্পনা করছেন, তার বিরোধিতা করেছে আরো তিনটি দেশ। এবার জর্ডান, মিশর এবং উত্তর কোরিয়ার ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করে সমালোচনা করেছে।
ট্রাম্প তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ফিলিস্তিনিদের জর্ডানে স্থায়ীভাবে সরিয়ে নিতে দেশটির বাদশা আবদুলস্নাহহকে চাপ দিলেও পশ্চিম তীর সংলগ্ন এই আরব দেশটির শীর্ষনেতা মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপের দৃঢ় বিরোধিতা করেছেন।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজে জর্ডানের বাদশার সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাসিন্দাদের স্থানান্তর এবং ভূখন্ডটিকে 'মধ্যপ্রাচ্যর রিভেরা' বানানোর ভাবনা থেকে কোনোভাবেই পিছু না হটার ইঙ্গিত দেন। "আমরা এটি নিয়ে নেবো। এটি আমাদের করে রাখবো, লালন করবো। এমন জায়গায় নিয়ে যাবো, যেখানে মধ্যপ্রাচ্যের মানুষজনের জন্য অনেক কর্মসংস্থান হবে," ওভাল অফিসে এমনটাই বলেছেন ট্রাম্প। এই পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যে 'শান্তি আনবে' বলেও তার আশা। তবে বাদশা আবদুলস্নাহ জানান, তিনি গাজা এবং ইসরাইলের দখলে থাকা পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে জর্ডানের 'অবিচল অবস্থানের' কথা ট্রাম্পের কাছে পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
"এটা আরবদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান। ফিলিস্তিনিদের না সরিয়ে গাজার পুনর্গঠন এবং সেখানকার ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির মোকাবেলা সবারই অগ্রাধিকারে থাকা উচিত," সোশ্যাল মিডিয়া পস্ন্যাটফর্ম এক্সে এমনটাই বলেছেন তিনি। বাদশা আবদুলস্নাহর এমন অবস্থান সত্ত্বেও ট্রাম্প বলছেন, জর্ডান, এমনকি মিশরও শেষ পর্যন্ত গাজার বাস্তুচু্যত বাসিন্দাদের জায়গা দিতে রাজি হবে। এই দুই আরব দেশ অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতার জন্য ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভরশীল। বাদশা আবদুলস্নাহ এর আগেও বলেছিলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গাজা দখল ও ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার যে কোনো পদক্ষেপের ঘোর বিরোধী। গাজা নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা মাঠে আসার পর তিনিই প্রথম আরব নেতা যিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। দুই নেতাকে একে অপরের সঙ্গে আন্তরিকভাবে কথা বলতে দেখা গেলেও গাজা নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য বাদশা আবদুলস্নাহকে বেশ খানিকটা অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল জন্মের সময় বিপুল পরিমাণ ফিলিস্তিনি পালিয়ে জর্ডানে আশ্রয় নেওয়া, তাদের বংশধররা এখনও ফিলিস্তিনে ফেরার আকাঙ্ক্ষায় বিভোর। পুরো বিষয়টি জর্ডানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রেও বেশ সংবেদনশীল।
এদিকে মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, আরব দেশগুলো গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের পরিকল্পনা একেবারেই মেনে নেবে না। ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজ ভূখন্ডেই থাকতে দিতে হবে এবং গাজার পুনর্গঠনের কাজ দ্রম্নত করতে হবে। মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, গাজায় মানবিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, তবে কোনোভাবেই ফিলিস্তিনিদের তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য করা যাবে না। অন্যদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ট্রাম্পের পরিকল্পনার নাম সরাসরি না নিলেও, রুবিও গাজার ভবিষ্যৎ শাসন ও নিরাপত্তা নিয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, হামাসকে গাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেওয়া যাবে না এবং ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। আবদেলাত্তি জানান, মিশর নতুন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত, তবে সেটি অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা রক্ষার ভিত্তিতে হতে হবে। তিনি মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গেও বৈঠক করেন এবং একই বার্তা দেন। ফিলিস্তিনিরা গাজাকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে দেখে, তাই তাদের জন্য গাজা ছাড়ার প্রস্তাব একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। আরব প্রতিবেশী দেশগুলোও এই বিষয়টি পরিষ্কার করেছে যে, তারা গাজার সংঘাতের কারণে বাস্তুচু্যত ফিলিস্তিনিদের নিজেদের দেশে আশ্রয় দিতে রাজি নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে মিশর ও জর্ডান যেন গাজার ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ করে। পরে তিনি আরও এগিয়ে গিয়ে গাজার ওপর মার্কিন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন, যেখানে ফিলিস্তিনিদের নিজ দেশে ফেরার কোনো অধিকার থাকবে না। এই পরিকল্পনা বিশ্বজুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। মানবাধিকার সংগঠন ও জাতিসংঘ এটিকে জাতিগত নির্মূলের চেষ্টা হিসেবে দেখছে।
এদিকে, মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাকে "একটি অবিচার" বলে আখ্যা দিয়েছেন। কায়রোতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মিশর, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও কাতারের শীর্ষ কূটনীতিকরা ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছেন।
অপর দিকে ট্রাম্পের গাজা দখল ও দুই মিলিয়নেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কেসিএনএ-এর এক মন্তব্য প্রতিবেদনে এই নিন্দা জানানো হয়।