মার্কিন সহায়তা স্থগিতে বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা

প্রকাশ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ঘানা ও কেনিয়ায় কীটনাশক ও অসংখ্য মশারির জাল গুদামে পড়ে আছে। কেননা মার্কিন কর্মকর্তারা ম্যালেরিয়াবিরোধী জরুরি অভিযানে এখনো অনুমোদন দেননি। হাইতিতে যে দলটি এইচআইভি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয় তারা অপেক্ষায় আছে ওষুধ ছাড়ে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতির, এসব ওষুধ নবজাতকের শরীরে মরণঘাতী রোগটি ছড়িয়ে দেওয়া থেকে তাদের মা'দের বিরত রাখবে। দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা জাঁকিয়ে বসা মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রই একক বৃহত্তম সাহায্য দাতা, কিন্তু এখন পরিস্থিতি 'গোলযোগপূর্ণ', বলছেন এক মানবিক সহায়তাকর্মী। কিছু ব্যতিক্রম বাদে বিদেশে সব সহায়তা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায় তিন সপ্তাহ আগে স্থগিত করে দেওয়ায় বিশ্বজুড়ে জীবন-রক্ষাকারী অসংখ্য কর্মসূচি বন্ধ হয়ে পড়েছে; এদিকে মানবিক সহায়তাকর্মীরাও তাদের কর্মসূচি চালু রাখতে মার্কিন সরকারের ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে কঠোর সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, কয়েক ডজন সহায়তাকর্মী ও জাতিসংঘের কর্মীরা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের শপথ নেওয়ার দিনই ট্রাম্প বিদেশে সহায়তায় ৯০ দিনের স্থগিতাদেশ দেন। এরপর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, জীবন-রক্ষাকারী ওষুধ, চিকিৎসা সেবা, খাদ্য, আশ্রয় ও অন্যান্য অতিজরুরী সেবাসহ 'জীবন-রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা' এই স্থগিতাদেশের বাইরে থাকবে। ছাড়ের এই ঘোষণা বিশ্বজুড়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি এবং মার্কিন অর্থায়ন আর কখনো আগের অবস্থায় যাবে না এমন আশঙ্কাও সৃষ্টি করেছ, বলছেন সহায়তাকর্মী ও জাতিসংঘের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, কোন কোন কর্মসূচি ছাড় পাওয়ার যোগ্য মার্কিন কর্মকর্তাদের দিক থেকে সে বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে তারা কাজ পুনরায় শুরু করতে পারছেন না। ওই মার্কিন কর্মকর্তাদের অনেককে বরখাস্ত, কাউকে কাউকে কথা বলতে বারণ করে দেওয়ায় ছাড়ের প্রসঙ্গ নিয়ে যোগাযোগও এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে অন্য দেশে কর্মরত সহায়তাকর্মীদের এই যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা সম্ভবত ট্রাম্প প্রশাসনের ছকেরই অংশ। বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পৌঁছে দিতে প্রধান ভূমিকা পালন করা ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) কর্মীদের গত ৩১ জানুয়ারি কী কী ছাড়ের আওতায় আছে আর কী নেই তা নিয়ে বাইরে কারও সঙ্গে কথা বলতে বারণ করা হয়েছে বলে সভাটির পূর্বে অপ্রকাশিত এক রেকর্ডিংয়ে শুনতে পেয়েছে রয়টার্স। এ প্রসঙ্গে মন্তব্য চাওয়া হলেও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও হোয়াইট হাউজ তাতে সাড়া দেয়নি। এই পরিস্থিতিতে সহায়তাকর্মী কিছু জরুরি প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছেন না। সেগুলোর মধ্যে আছে- কোন কোন কর্মসূচি চলবে? জীবন-রক্ষাকারী সহায়তা বলতে কী বোঝায়? খাদ্য? আশ্রয়? ওষুধ? যখন প্রায় সব সহায়তা একসঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখন কীভাবে তারা মানুষকে মৃতু্যর হাত থেকে বাঁচাবেন? মার্কিন কর্মকর্তাদের দিক থেকে যৎসামান্য নির্দেশনা থাকায়, তাদের সংস্থাগুলো এখন সতর্ক অবস্থানে থেকে মার্কিন সরকার পরিশোধ নাও করতে পারে এমন ব্যয়ের চেয়ে কর্মসূচিই বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বেছে নিয়েছে, বলছেন সহায়তাকর্মীরা। বছরের পর বছর ধরে কাজ করা মার্কিন অংশীদাররা যে এখন আর তাদের ফোন বা ইমেইলের উত্তর দিচ্ছেন না, এমনটাও বলেছেন অনেকে। কেউ কেউ যে উত্তর পাচ্ছেন, তা শুনে তারা স্তম্ভিতও হয়ে পড়ছেন। "আমরা জানতে চেয়েছিলাম, সুনির্দিষ্ট কোন কোন আমরা কর্মসূচি বন্ধ করবো? এর জবাবে আমরা একটি বার্তা পাই, যেখানে বলা হয়েছে, 'আর কোনো নির্দেশনা আসছে না'। এতে আমরা এমন এক পরিস্থিতিতে পড়লাম, যেখানে আমাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন কর্মসূচিটি জীবন-রক্ষাকারী। আমাদের নিজেদের কাছে এসব কর্মসূচিতে খরচ করার মতো টাকা নেই। তারা ছাড় করবে কিনা, তা না জেনে আমরা খরচও করতে পারছি না," বলেছেন জেনিভায় কাজ করা এক সহায়তাকর্মী। অস্থিরতা সবচেয়ে বেশি ইউএসএআইডিতে, সরকারের দক্ষতা বাড়াতে কাজ করা ট্রাম্পের সেনাপতি ধনকুবের ইলন মাস্ক যে সংস্থাটিকে 'ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন' অ্যাখ্যা দিয়ে বন্ধ করে দিতে চাইছেন। নির্বাহী আদেশে ট্রাম্পও বলেছেন, মার্কিন 'বৈদেশিক সহায়তা খাত ও আমলাতন্ত্র' অনেক ক্ষেত্রেই 'আমেরিকান মূল্যবোধের পরিপন্থি'। কোন কোন সহায়তা তার 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতির সঙ্গে মেলে তা খতিয়ে দেখতে তিনি এই ৯০ দিনের স্থগিতাদেশ দেন।