ভারতে বন্দুকযুদ্ধে ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুজন জওয়ান এবং ৩১ জন মাওবাদী সদস্য রয়েছে। আহত হয়েছে অপর দুই জওয়ান। দেশটির ছত্তিশগড় রাজ্যের বিজাপুর জেলার জঙ্গলে এই সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। রোববার এক প্রতিবেদনে তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, রোববার সকালে ছত্তিশগড়ের বস্তার বিভাগের বিজাপুর জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে ভয়াবহ সংঘর্ষে দুই নিরাপত্তা কর্মী এবং কমপক্ষে ৩১ জন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। বিজাপুর হচ্ছে সেই একই জেলা যেখানে জানুয়ারির শুরুতে একটি আইইডি বিস্ফোরণে আটজন নিরাপত্তা কর্মী এবং একজন বেসামরিক চালকের মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছিল, যার পরে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে সেখানে শুরু হওয়া মাওবাদী বিরোধী অভিযানে আটজন মাওবাদী নিহত হয়। টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, বিজাপুরের জঙ্গলে চলমান এনকাউন্টারে দুই জওয়ানও আহত হয়েছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ১২ জন মাওবাদীর ইউনিফর্ম পরা মৃতদেহ, অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ উদ্ধার করা হয়েছে।
মূলত নিরাপত্তা বাহিনীর একটি দল ইন্দ্রাবতী জাতীয় উদ্যান এলাকার জঙ্গলে মাওবাদী বিরোধী অভিযান শুরু করে। বড় সংখ্যক সিনিয়র ক্যাডারদের উপস্থিতির তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান শুরু হয়। এর মধ্যেই রোববার ভোরবেলা মাওবাদী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে জঙ্গলে বন্দুক-যুদ্ধ শুরু হয় এবং ৩১ জন মাওবাদী নিহত হয়। এনকাউন্টারে বাহিনী দু'জন জওয়ানকেও হারিয়েছে এবং অন্য দু'জন যারা আহত হয়েছে, তাদের চিকিৎসার জন্য সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আহত জওয়ানদের অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়। এনকাউন্টারস্থলে আরও নিরাপত্তা কর্মী পাঠানো হয়েছে এবং তলস্নাশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, গত শতাব্দীর সত্তর ও আশির দশকে পশ্চিমবঙ্গে মূল সংগঠকদের হারানোর পর ভারতীয় মাওবাদী রাজনীতি ছড়ায় অন্ধ্র প্রদেশের দিকে। এখন এর ভরকেন্দ্র প্রধানত অনেকগুলো রাজ্যের মধ্যস্থল 'দন্ডকারণ্য' এলাকায়। 'রেড করিডোর'ও বলা হয় একে। জায়গাটি ছত্তিশগড়-ওডিশা-অন্ধ্র-মহারাষ্ট্রের মধ্যবর্তী কিছু এলাকা মিলে। ঝাড়খন্ড ও বিহারেও মাওবাদের প্রভাব আছে। এসব অঞ্চলের তুলনামূলকভাবে অরণ্য ও আদিবাসী-প্রধান এলাকায় এই আদর্শবাদীদের খোঁজ মেলে। অর্থাৎ ভারতের দরিদ্র পূর্বাঞ্চলে এই সশস্ত্রতা কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে। গবেষকরা দেখিয়েছেন, সেখানকার আদিবাসীরা অ-আদিবাসী দরিদ্রদের চেয়েও খানিকটা দরিদ্র। অর্থনৈতিক উদারীকরণে দেশের প্রধান প্রধান শহরে যেভাবে চাকচিক্য বেড়েছে, আদিবাসী সমাজে সেরকম ঘটেনি। দেশের জনসংখ্যার মোট হিসাবে যারা প্রায় নয় ভাগ।
প্রসঙ্গত, সরকার গত এক দশকে দারিদ্র্য পরিস্থিতিতে অনেক উন্নতির দাবি করছে। তবে তাতেও জাতীয় গড় উন্নয়নের চেয়ে পূর্বাঞ্চলের আদিবাসী এলাকাগুলো পিছিয়ে। মাওবাদের আমূল পরিবর্তনের আওয়াজ হয়ত সে কারণেই এসব জনপদে এখনো আবেদনময়। ঐতিহাসিকভাবে চলতে থাকা জাত-পাতজনিত বর্ণ বৈষম্যও সমাজের নিচুতলায় পরিবর্তনকে জরুরি করে রেখেছে।
তবে ভারতের এখনকার শাসক পরিবার আরএসএসের ঘোষিত তিন আদর্শিক প্রতিপক্ষ হলো খ্রিস্টান, মুসলমান ও কমিউনিস্ট। তিন প্রতিপক্ষই দেশটিতে সংখ্যালঘু। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে ধর্মীয় সংখ্যালঘু খ্রিস্টান ও মুসলমানদের ভারতে বেশ কোনঠাসা করে রাখা হয়েছে। এককালের একমাত্র মুসলিম প্রধান রাজ্য জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যসুলভ মর্যাদাই বাতিল করা হয়েছে আইনি প্রক্রিয়ায়। খ্রিস্টান প্রধান তিন রাজ্য মিজোরাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড মিলে লোকসভায় আসন মাত্র ৪টি। ৫৪৫ আসনের যুদ্ধে এটা ভাবনা-দুর্ভাবনার জন্য সামান্য বিষয়।
অন্যদিকে, ভোটে আস্থা আছে এমন কমিউনিস্টদের রাজনৈতিক প্রভাব শুধু কেরালায় টিকে আছে। এককালের পুরানো ঘাঁটি পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে কমিউনিস্টরা। ফলে বিজেপির জন্য তারা আর বড় কোনো হুমকি নয়।
কিন্তু আরএসএস পরিবার এরপরও 'বামপন্থা'কে বিশেষ প্রতিপক্ষ ভাবে। বিশেষ করে শিক্ষা-সংস্কৃতির অঙ্গনে 'মাওবাদী' মনোভঙ্গীর ব্যাপারে তারা খুব স্পর্শকাতর। চিন্তা-চেতনায় 'এন্টি এস্টাবলিশমেন্ট' ধাঁচের কাউকে পেলেই 'আরবান নকশাল' বলার চল এখন।