বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

গাজা পুনর্গঠনে লাগবে ১০-১৫ বছর

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক রাষ্ট্রদূত স্টিভের মন্তব্য
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
গাজা পুনর্গঠনে লাগবে ১০-১৫ বছর
গাজা পুনর্গঠনে লাগবে ১০-১৫ বছর

ইসরাইলের হামলায় বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের গাজা ভূখন্ড পুনর্গঠনে ১০ থেকে ১৫ বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফ। বৃহস্পতিবার উপত্যকাটি পরিদর্শনের পর মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেন তিনি। গাজার বর্তমান পরিস্থিতি উইটকফ বলেন, গাজার প্রায় কিছুই অবশিষ্ট নেই। মানুষ উত্তরে ফিরে যাচ্ছে তাদের ঘরবাড়ি দেখতে, কিন্তু কিছুই নেই। তারা ফিরে এসে দেখছে চারপাশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেখানে পানি নেই, বিদু্যৎ নেই। এটি সত্যিই বিস্ময়কর যে সেখানে কতটা ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে।

তিনি জানান, গাজার পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, সেখানে হাঁটাও নিরাপদ নয়। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেক অবিস্ফোরিত বোমা রয়েছে, যা মারাত্মক বিপজ্জনক। এমন পরিস্থিতিতে গাজার পুনর্গঠনের জন্য ৫ বছরের পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। এটি অন্তত ১০ থেকে ১৫ বছর সময়ের একটি প্রকল্প। এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এক বক্তব্যে প্রস্তাব দেন, আরব দেশগুলো গাজাবাসীদের জন্য অন্য কোনো স্থানে নতুন আবাসন নির্মাণ করতে পারে, যেখানে তারা শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। তবে ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব বরাবরই এই ধরনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। গাজা তাদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে চায় ও আরব দেশগুলোও গাজাবাসীদের স্থানান্তরের ধারণাকে সমর্থন করেনি। উইটকফ জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে গাজাবাসীদের অন্য কোথাও স্থানান্তরের বিষয়ে কোনো আলোচনা করেননি। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলের বোমা হামলার পর গাজায় ৫০ মিলিয়ন বা ৫ কোটি টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমেছে, যা পরিষ্কার করতেই ২১ বছর সময় এবং ১ দশমিক ২ বিলিয়ন অর্থাৎ ১২০ কোটি ডলার খরচ হতে পারে। এই ধ্বংসস্তূপে অ্যাসবেস্টসের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান থাকতে পারে, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। এছাড়া ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এখনো আনুমানিক ১০ হাজার মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। সূত্র: রয়টার্স

গাজায় ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও ৪২ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার

এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আরও ৪২ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৪৭ হাজার ৫০০ জনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। দীর্ঘ ১৫ মাসের বেশি সময় পর গত মাসেই ফিলিস্তিনের গাজায় কার্যকর হয়েছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি। তবে এরপর থেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে একের পর এক উদ্ধার হচ্ছে নিহতদের লাশ। আর এতে করে বেড়েই চলেছে প্রাণহানির সংখ্যা। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, ফিলিস্তিনি চিকিৎসকরা গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে আরও ৪২ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন। এর ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৪৬০ জনে পৌঁছেছে বলে বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আরও ৯ জন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এতে করে ইসরাইলি আক্রমণে আহতের সংখ্যা ১ লাখ ১১ হাজার ৫৮০ জনে পৌঁছৈছে। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তিন-পর্যায়ের এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যে বন্দি বিনিময় এবং স্থায়ী শান্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে।

এদিকে গাজায় ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসনের আপাতত অবসান ঘটলেও ভূখন্ডটিতে ইসরাইলি আক্রমণে নিখোঁজ রয়েছেন ১১ হাজারেরও বেশি মানুষ। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছিল।

জাতিসংঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচু্যত হয়েছিলেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে