সিরিয়ার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর হামায় ঢুকে পড়েছে বিদ্রোহীরা। বৃহস্পতিবার এমন দাবি করেছে তারা। শহরটিতে একটি নতুন বিদ্রোহীর বিজয় প্রতিরোধ করতে রাশিয়ার সঙ্গে মিলে কাজ করছে সিরীয় সরকার সমর্থক বাহিনী। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হচ্ছে। তথ্যসূত্র : এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা
গত বুধবার থেকে হামায় ইসলামিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) সঙ্গে সেনাবাহিনীর তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। এইচটিএস-ও জায়গা ছাড়তে নারাজ। এই পরিস্থিতিতে সিরিয়ায় নতুন করে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এইচটিএস আল-কায়েদা থেকে উদ্ভূত একটি গোষ্ঠী। উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় তারা শক্তিশালী সংগঠন তৈরি করেছে। সেই শক্তি নিয়েই তারা আলেপ্পো অঞ্চল দখল করে ফেলেছে।
সিরিয়ার হামা অঞ্চলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই শহরের মাধ্যমেই আলেপ্পোর সঙ্গে রাজধানী দামেস্কোর সংযোগ স্থাপন সম্ভব। ফলে বাশার আল-আসাদ সরকার হামা কোনোভাবেই দখল হতে দিতে চায় না। অন্যদিকে, এইচটিএস'র পরবর্তী লক্ষ্য হামা দখল। হামা দখল করতে পারলে দামেস্কোর খুব কাছে পৌঁছে যেতে পারবে তারা। শহরটি আলেপ্পো থেকে দামেস্কো পর্যন্ত এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত এবং এর দখল হোমসে বিদ্রোহীদের অগ্রসর হওয়ার রাস্তা খুলে দেবে। প্রধান কেন্দ্রীয় এই শহরটি সিরিয়ার সর্বাধিক জনবহুল অঞ্চলের সঙ্গে সংযোগকারী 'ক্রসরোড' হিসেবে কাজ করে। উলেস্নখ্য, সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে দুটি বড় শহরের নিয়ন্ত্রণের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হামা। অনেক খ্রিস্টান ও সালামিয়া রয়েছে মুহরাদায়। সেখানে অনেক ইসমাইলি মুসলমানও রয়েছেন।
২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের সময় হামার নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে ছিল। একটি পুনরুজ্জীবিত বিদ্রোহের পতন দামাস্ক এবং এর রুশ ও ইরানি মিত্রদের হতভম্ব করবে।
এদিকে, যতটা শক্তি নিয়ে প্রেসিডেন্ট বাশারের বাহিনী পাল্টা আক্রমণে যাবে বলে মনে করা হয়েছিল, বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না। দীর্ঘ প্রায় দেড় দশকের গৃহযুদ্ধে কার্যত ভেঙে পড়েছে সিরিয়া। প্রেসিডেন্ট বাশার এখনো গোটা দেশে নিজের প্রতিপত্তি প্রমাণ করার চেষ্টা করলেও আলেপ্পোর দিকে তার এখন কার্যত কোনো ক্ষমতা নেই।
অন্যদিকে, হামা অঞ্চলটি তার নিজের। এই অঞ্চলের মানুষের বিপুল সমর্থন ছিল বাশারের প্রতি। বিরোধী গোষ্ঠী যদি এই অঞ্চল দখল করে নিতে পারে, তাহলে কার্যত আর কোনো জনভিত্তি থাকবে না প্রেসিডেন্ট বাশারের। অবশ্য চলমান লড়াইয়ে ইরান এবং রাশিয়া বাশারের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। ইরান ও রাশিয়া বাশারের দীর্ঘদিনের সঙ্গী। রাশিয়া আলেপ্পো অঞ্চলে বিমান হামলা চালাচ্ছে।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করা একটি পোস্টে বিদ্রোহী কমান্ডার হাসান আবদুল গনি বলেন, বিদ্রোহীরা হামায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আগেই জানিয়েছিল, সরকারপন্থি বাহিনী একটি হামলা প্রতিহত করেছে।
বিদ্রোহীরা মঙ্গলবার থেকে হামায় প্রবেশের চেষ্টা করছে এবং সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও রাশিয়ার বোমা বর্ষণ ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে রাতারাতি ভারী লড়াই হয়েছে। উভয় পক্ষ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।