ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ

গাজায় জিম্মিদের মুক্তি না দিলে ভয়াবহ পরিণতি :ট্রাম্প

গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে ৩৩ জিম্মি প্রাণ হারিয়েছেন যুদ্ধে ৩৪১ ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছেন জানাল জাতিসংঘ

প্রকাশ | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে হোয়াইট হাউসে প্রবেশের আগেই গাজায় হামাসের হাতে থাকা সব জিম্মির মুক্তি দেখতে চান তিনি। অন্যথায় 'ভয়াবহ পরিণতি' হবে বলে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, আনাদলু সোমবার নিজের সামাজিক মাধ্যম 'ট্রুথ সোশ্যালে' দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, 'আমি আগামী ২০ জানুয়ারি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার আগেই যদি গাজায় জিম্মিদের মুক্ত না দেওয়া হয়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে এবং মানবতার বিরুদ্ধে এমন নৃশংসতার জন্য দায়ীদের গুরুতর সমস্যা হবে।' পোস্টে তিনি আরও বলেন, 'আমেরিকার দীর্ঘ ইতিহাসে যে কেউ আঘাত করেছে, এর চেয়ে দায়ীদের আরও বেশি আঘাত করা হবে। এখনই জিম্মিদের মুক্তি দিন!' গত ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মার্কিন নির্বাচনের পর এটি ছিল চলমান যুদ্ধের বিষয়ে তার সবচেয়ে কঠোর বক্তব্য। খবর পাওয়া গেছে, তিনি তার দ্বিতীয় দফার মেয়াদ শুরু হওয়ার আগে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। পোস্টে তিনি তার হুমকির বিস্তারিত উলেস্নখ করেননি বা এর জন্য মার্কিন সামরিক বাহিনী ব্যবহৃত হবে কিনা, তাও বলেননি। তিনি কাদের উদ্দেশে এই মন্তব্য করেছেন, তাও পরিষ্কার করেননি। তবে তার পোস্টে গাজার জিম্মিদের উলেস্নখ করা হলেও, ইসরায়েলি অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনি নাগরিকদের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এর আগে, গত ২৯ নভেম্বর মার্কিন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের সদস্য এবং ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রিপাবলিকান পার্টির রাজনীতিবিদ লিন্ডসে গ্রাহাম এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, নিজের অভিষেক অনুষ্ঠানের আগেই গাজায় যুদ্ধবিরতি চান ট্রাম্প। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখন্ডে হামলা করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এতে নিহত হন এক হাজার ২০৮ জন। হামাসের হাতে জিম্মি হন আরও ২৫১ জন। তাদের অনেকেই মারা গেছেন। কয়েকজনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলের ধারণা, গাজায় বর্তমানে ১০১ জন ইসরায়েলি বন্দি রয়েছেন। হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখন্ডে প্রায় ১৪ মাস ধরে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলির নির্বিচার হামলায় গাজায় এরই মধ্যে ৪৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আরও এক লাখের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। হতাহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। গাজা উপক্যতাকে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের নাগরিকরা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে দীর্ঘদিন ধরেই গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং জিম্মি ও বন্দিদের অদল-বদল করতে সম্মত হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। তবে তাদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইচ্ছাকৃতভাবে সম্ভাব্য চুক্তিতে বাধা দিয়েছেন। অনেকে অভিযোগ করেন, নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার টিকিয়ে রাখার জন্য যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করতে চান নিজের স্বার্থকে দেশের স্বার্থের ঊর্ধ্বে রেখে। হামাস বারবার জিম্মিদের মুক্তি ও যুদ্ধ বন্ধের জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু ইসরায়েল সরকার বলেছে, হামাস পুরোপুরি পরাজিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে। উলেস্নখ্য, ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদের সময় ইসরায়েলে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের মতো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এ ঘটনা ফিলিস্তিনিদের ক্ষুব্ধ করেছিল। কারণ, ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের দখল করা পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যতের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে দেখে। গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৩ জিম্মি ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) গত এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান অভিযানে এ পর্যন্ত ৩৩ জন জিম্মি নিহত হয়েছেন। উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'টেলিগ্রামে' পোস্ট করা এক বার্তায় হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৩৩ জন ইসরায়েলি বন্দি প্রাণ হারিয়েছেন। গাজায় যে মাত্রার ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, এতে তাদের দেহাবশেষও আর পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কবে কতজন জিম্মি নিহত হয়েছেন, সেই তালিকাও দিয়েছে হামাস। সেটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের ৯ অক্টোবর চারজন, ১৪ অক্টোবর ৯ জন, ৮ ডিসেম্বর একজন, ২০২৪ সালের ১ মার্চ সাতজন, ৯ জুন তিনজন, আগস্ট মাসে তিনজন এবং ২ সেপ্টেম্বর ছয়জন নিহত হয়েছে। এই মুহূর্তে কতজন জিম্মি জীবিত রয়েছে, এর সুনির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ করেনি হামাস। তবে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ্য করে টেলিগ্রাম পোস্টে বলা হয়েছে, 'যদি আপনি নিজের জেদ থেকে সরে না দাঁড়ান এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি না দেন, সে ক্ষেত্রে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে। তাই বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগে যা উচিত- তা করুন।' গাজা যুদ্ধে অন্তত ৩৪১ ত্রাণকর্মী নিহত : জাতিসংঘ এদিকে, গত বছর অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৪১ জন মানবিক সহায়তাকর্মী নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্সের (ওসিএইচএ) দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টেফানি দুজারিক এ কথা বলেছেন। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে দুজারিক বলেন, সর্বশেষ ইসরায়েলি বিমান হামলায় 'ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনে'র তিন কর্মী ও 'সেভ দ্য চিলড্রেনে'র একজন কর্মীসহ মোট চারজন মানবিক সহায়তাকর্মী নিহত হয়েছেন। এর ফলে গত বছরের অক্টোবর থেকে নিহত মানবিক সহায়তা কর্মীর সংখ্যা বেড়ে ৩৪১ জনে পৌঁছেছে। তিনি আরও বলেন, 'আমাদের মানবিক সহায়তা সরবরাহকারী অংশীদাররা পরিস্থিতির ভয়াবহতা নিয়ে সতর্ক করেছেন। সামরিক বাহিনীর স্থল অভিযান, বেসামরিক এলাকায় বোমা হামলা এবং অবিস্ফোরিত বোমার উপস্থিতির কারণে স্থানীয় খাদ্য ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।