এবার হামা প্রদেশের দিকে অগ্রসর হওয়ার দাবি করেছে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা। আলেপ্পো ও ইদলিব শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর রোববার থেকে হামার দিকে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা 'সানা' জানিয়েছে, বিদ্রোহীদের এই অগ্রযাত্রার প্রচেষ্টায় বাধা দিতে সিরীয় ও রুশ বাহিনীও পাল্টা হামলা চালাচ্ছে। শনিবার থেকে তারা বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব প্রদেশ ও আলেপ্পোতে বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। এদিকে, ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ারাও ইরাক থেকে সিরিয়ায় প্রবেশ করেছে এবং উত্তর সিরিয়ার ফ্রন্টলাইনে লড়াইরত দুর্বল সিরীয় সেনাদের সহায়তায় এগিয়ে যাচ্ছে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স
গত শুক্রবার এক আকস্মিক হামলার মধ্য দিয়ে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শহর আলেপ্পোর প্রাণকেন্দ্রে ঢুকে পড়ে বিদ্রোহীরা। 'সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসে'র পরিচালক রামি আবদুল রহমান শনিবার বলেন, আলেপ্পো শহরের অর্ধেকই এখন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এবং এর মিত্র গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে।
তবে সিরিয়া ও রাশিয়ার যুদ্ধবিমান বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে আলেপ্পোর শহরতলিতে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। বিদ্রোহীরা আলেপ্পোতে ঢুকে পড়ার পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সিরিয়ায় অতিরিক্ত সামরিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মস্কো। এরই ধারাবাহিকতায় উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় সরকারি বাহিনী ও রাশিয়ার বিমান হামলায় অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছে। সোমবার সকালে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত উদ্ধার সংস্থা 'হোয়াইট হেলমেট' এই দাবি করেছে।
সামরিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, রাশিয়া ও সিরিয়ার যুদ্ধবিমান রোববার উত্তর সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব শহরে হামলা চালায়। এর মধ্যেই সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ আলেপ্পো শহরে প্রবেশকারী বিদ্রোহীদের দমন করার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তার বাহিনী 'সন্ত্রাসী এবং তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে' সরকারের স্থিতিশীলতা এবং আঞ্চলিক অখন্ডতা রক্ষা করে যাবে। সিরিয়ার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা বিদ্রোহীদের কাছ থেকে কয়েকটি শহর পুনর্দখল করেছে।
এছাড়া হামা প্রদেশেও শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি বাহিনী। 'সানা' জানিয়েছে, শনিবার রাতে সরকারী বাহিনী হামার উত্তরের গ্রামীণ অঞ্চল থেকে বিদ্রোহীদের পিছু হটিয়ে দিয়েছে। সেখানে সেনাদের ভারী সরঞ্জাম ও রকেট লঞ্চার দিয়ে পুনরায় সজ্জিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সানা।
অন্যদিকে, 'আল-নুসরা ফ্রন্ট' নামে পরিচিত আল-কায়েদার সিরিয়ান এইচটিএস দলটি দাবি করেছে, তারা বেশ কয়েকটি কৌশলগত সাফল্য অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে খানাসির শহর, আলেপ্পো ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি, আলেপ্পোর সামরিক একাডেমি এবং ফিল্ড আর্টিলারি কলেজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।
বাশারকে সহায়তায় সিরিয়ায় ইরানপন্থি মিলিশিয়ারা
এদিকে, এক উচ্চপদস্থ সিরীয় সেনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাশার আল-আসাদ বাহিনীকে সহায়তায় ইরাক থেকে ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ারা সিরিয়ায় ঢুকে পড়েছে। ইরাক থেকে 'হাশদ আল-শাবি'র অন্তর্ভুক্ত কয়েক ডজন যোদ্ধা আল-বুকামাল সামরিক রুট ব্যবহার করে সিরিয়ায় প্রবেশ করেছে। তিনি বলেছেন, উত্তরাঞ্চলের ফ্রন্টলাইনে আমাদের সহযোদ্ধাদের সহায়তায় নতুন করে এই বাহিনী পাঠানো হয়েছে। ইরাকের কাতাইব হিজবুলস্নাহ এবং ফাতেমিয়ুন বাহিনী এই গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় ইরান হাজার হাজার শিয়া মিলিশিয়া পাঠিয়েছিল। রাশিয়ার বিমান হামলার সহায়তায় এই বাহিনী সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে বিদ্রোহ দমনে এবং দেশের অধিকাংশ এলাকা পুনর্দখলে সহায়তা করেছিল।
তবে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বিদ্রোহীদের আক্রমণ প্রতিহত করতে পর্যাপ্ত মানবশক্তির অভাবে সিরীয় সেনাবাহিনী দ্রম্নত পিছু হটে এবং আলেপ্পো শহর থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন আরও দুই সেনা কর্মকর্তা। ইরান-সমর্থিত হিজবুলস্নাহর নেতৃত্বাধীন মিলিশিয়ারা আলেপ্পো এলাকায় শক্তিশালী অবস্থান বজায় রেখেছে।
এদিকে, ইসরায়েল সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সিরিয়ায় ইরানি ঘাঁটিগুলোর ওপর আক্রমণ জোরদার করেছে। একই সঙ্গে লেবাননে অভিযান চালিয়ে হিজবুলস্নাহ ও তাদের সামরিক সক্ষমতাকে দুর্বল করার দাবি করেছে।