ইউক্রেনকে লক্ষ্য করে নতুন করে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার সকালে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের বিদু্যৎ অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালায় রুশ বাহিনী। এতে করে দেশটির প্রায় ১০ লাখ গ্রাহক বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি
কিয়েভ জানিয়েছে, নতুন এ হামলায় রাশিয়া ১৮৮টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে তারা ৭৬টি কালিবার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, তিনটি কেএইচ-৫৯/কেএইচ-৬৯ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৩৫টি ড্রোন ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া রাজধানী কিয়েভকে লক্ষ্য করে যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, তার সবগুলোই ভূপাতিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটি।
ইউক্রেনীয় জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলার পর বিদু্যৎ অবকাঠামোগুলো ঠিক করতে প্রকৌশলীরা কাজ শুরু করে দিয়েছেন। হামলায় কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এখন তারা সেটি নিরূপণের চেষ্টা করছেন।
কিয়েভের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, হামলার বিকট শব্দ শুনে সকালে তাদের ঘুম ভাঙে। হামলার পর কিয়েভে বিদু্যৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে যেহেতু সেখানকার প্রায় সব বাড়িতে এখন জেনারেটর আছে, তাই তারা আপাতত রান্নাবান্না ও নিজেদের উষ্ণ রাখার কাজটি করতে পারছেন। ইউক্রেন জানিয়েছে, শুধুমাত্র চলতি বছরেই তাদের বিদু্যৎ অবকাঠামো লক্ষ্য করে রাশিয়া ১১ বার হামলা চালিয়েছে।
যুদ্ধের শুরু থেকেই ইউক্রেনের বিদু্যৎ অবকাঠামোতে হামলা চালিয়ে আসছে রাশিয়া। তাদের ধারণা, বিদু্যৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে ইউক্রেন শক্ত অবস্থান থেকে সরে আসবে এবং রাশিয়াকে লক্ষ্য করে হামলা চালাতে ভয় পাবে।
ইউক্রেনের আরও একটি বসতি দখলের দাবি রাশিয়ার
পূর্ব ইউক্রেনের আরও একটি বসতি দখলের দাবি করেছে রাশিয়া। এবার কুরাখোভের দোনেৎস্ক অঞ্চলের কাছাকাছি নোভা ইলিঙ্কা বসতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রুশ বাহিনী। বুধবার এই দাবি করেছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী প্রতিদিনের আপডেটে নোভা ইলিঙ্কার কোনো উলেস্নখ করেনি। শহরটি কুরাখোভ থেকে একটি জলাধারের বিপরীত তীরে অবস্থিত। এটি রুশ বাহিনীর দোনেৎস্ক অঞ্চলের মধ্য দিয়ে স্থির অগ্রগতির একটি কেন্দ্রবিন্দু। তবে এক সপ্তাহের বেশি আগে 'ডিপ স্টেট' বলেছিল, নোভা ইলিঙ্কা রাশিয়ার হাতে পড়েছে। এটি সশস্ত্র বাহিনীর গতিবিধি ট্র্যাকিংয়ের একটি জনপ্রিয় ইউক্রেনীয় বস্নগ।
বিশ্লেষক ও যুদ্ধ বস্নগাররা বলছেন, রুশ বাহিনী ২০২২ সালের ফেব্রম্নয়ারির আক্রমণের প্রথম দিন থেকে পূর্ব ইউক্রেনে সবচেয়ে দ্রম্নত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। তারা গ্রামের পর গ্রাম দখল করে চলেছে। দোনেৎস্ক অঞ্চলের উত্তরে কুরাখোভ ও পোকরোভস্ক আপাতত রুশ অগ্রগতির পরবর্তী লক্ষ্য।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাতের নিয়মিত ভিডিও ভাষণে উভয় শহরের আশপাশের অঞ্চলগুলোকে সংঘাতের কিছু মারাত্মক লড়াইয়ের ক্ষেত্র হিসেবে উলেস্নখ করেছেন। জেলেনস্কি খারকিভ অঞ্চলের আরও উত্তরে কুপিয়ানস্ক সেক্টরের কথা উলেস্নখ করেছেন, যেখানে রুশ সেনারা সক্রিয় ছিল। ইউক্রেনের প্রতিবেদন অনুসারে, রুশ বাহিনী সম্প্রতি কুপিয়ানস্কে দুটি আক্রমণ করেছে। আক্রমণের প্রথম সপ্তাহে শহরটি রুশ বাহিনী দখল করেছিল এবং এর কয়েক মাস পর পাল্টা আক্রমণের মাধ্যমে এটি পুনরায় দখল করেছিল ইউক্রেন।
দেশটির জেনারেল স্টাফ বুধবার গভীর রাতে এক প্রতিবেদনে বলেছে, ইউক্রেন বাহিনী কুরাখোভের কাছে ৩৬টির মধ্যে ৩০টি হামলাই প্রতিহত করেছে। ছয়টি সশস্ত্র সংঘর্ষ এখনো চলছে। এতে বলা হয়, ইউক্রেনীয় সেনারা পোকরভস্কের কাছে ৩৫টির মধ্যে ২৬টি হামলা প্রতিহত করেছে।
'পুতিন হুমকি দিলেও পরমাণু হামলার আশঙ্কা কম'
এদিকে, রাশিয়ার অভ্যন্তরে দীর্ঘপালস্নার অস্ত্র ব্যবহার করে হামলার জন্য ইউক্রেনকে অনুমতি দেওয়া হলেও পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়নি। তবে পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবে অভিযান বাড়াতে পারে রাশিয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা এই দাবি করেছেন।
গত সাত মাসে একাধিক গোয়েন্দা মূল্যায়নে দেখা গেছে, ইউক্রেনের ওপর থেকে অস্ত্র ব্যবহারে বিধিনিষেধ শিথিল করলেও পারমাণবিক উত্তেজনার আশঙ্কা এখনো কম। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের পরেও এই পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
একজন কংগ্রেস সদস্যের সহকারী জানিয়েছেন, বিভিন্ন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে রাশিয়ার পারমাণবিক নীতিতে পরিবর্তন আসবে না। উলেস্নখ্য, এই ক্ষেপণাস্ত্রের পালস্না ৩০৬ কিলোমিটার।
রাশিয়া সম্প্রতি একটি নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে ওয়াশিংটন ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের জন্য সতর্কবার্তা ছিল এটি। তবে গোয়েন্দা মূল্যায়ন অপরিবর্তিত রয়েছে। এক মার্কিন কর্মকর্তার দাবি, রাশিয়া পারমাণবিক উত্তেজনা বাড়াবে না বলে তাদের বিশ্বাস। তবে মার্কিন পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় সামরিক শক্তি প্রদর্শন করতে পারে ক্রেমলিন। নতুন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা তারই অংশ হতে পারে।