ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে ইমরান সমর্থকরা
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ ঘিরে ফেলেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের লাখ লাখ সমর্থক। রাজধানীতে প্রবেশের সব পথ অবরুদ্ধ করে দিলেও তা ডিঙিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতাকর্মীরা। তথ্যসূত্র : ডন, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, বিবিসি
সোমবার রাত ৯টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সব প্রদেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ আর হাজার হাজার গাড়ি এখন ইসলামাবাদের প্রবেশদ্বারের মুখে অবস্থান নিয়ে স্স্নোগান দিচ্ছিল। ইমরান খানের মুক্তি দাবির সঙ্গে তাদের মুখে উচ্চারিত হচ্ছিল সরকারের পদত্যাগের কথাও।
গত ২৪ নভেম্বর 'মার্চ টু ইসলামাবাদ' ঘোষণা করে ইসলামাবাদের অভিমুখে যাত্রা শুরু করে ইমরান খানের সমর্থকরা। পথে পথে বাধা দেওয়া সেই যাত্রা ধীর হলেও সারা রাত পিটিআই সমর্থকরা রাস্তাতেই কাটিয়ে আবার সকাল থেকে যাত্রা শুরু করে। সোমবার ইমরান খানের সমর্থকরা হাজার হাজার গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যায় ইসলামাবাদের প্রবেশদ্বারে। তারা সব ব্যারিডেক ভেঙে ভেতরে প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও তাদের রুখে দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ফলে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘাতের শঙ্কা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ থেকে লাখ লাখ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নেতৃত্ব দিয়ে ইসলামাবাদের পার্লামেন্টের ভবন এলাকার 'রেড জোন'র খুব কাছাকাছি চলে এসেছেন প্রদেশটির মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গান্দাপুর। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ইরমান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি। তিনি পথে পথে বক্তব্য দিচ্ছেন, আর বলছেন- 'ইমরান খানের মুক্তি নয়, আমরা পাকিস্তানের মুক্তির জন্য পথে নেমেছি। আমরা দেশকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআলস্নাহ।'
পাঞ্জাবের বিভিন্ন শহর থেকেও মার্চ করে ইসলামাবাদে প্রবেশের চেষ্টা করছে লাখ লাখ বিক্ষোভকারী। তারা সরকার পতন চায়, পথে পথে স্স্নোগান ও মিছিলে মুখর করে সামনে এগিয়ে আসছে তারা। এদিকে, নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে ইমরান খানের সমর্থকদের বলে দিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের ইসলামাবাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। শুধু ইসলামাবাদ নয়, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরের অবস্থান যে রাওয়ালপিন্ডিতে, সেখানেও নিরাপত্তা জোরদার করে প্রবেশের সব পথে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে।
ইমরান খানের সমর্থকরা জীবনের বিনিময়ে হলেও ইসলামাবাদে প্রবেশের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে, তারা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ইসলামাবাদের প্রবেশের সব পথে এখন ইমরান খানের সমর্থকরা অবস্থান করছে।
পিটিআইয়ের এই বিক্ষোভকে বেআইনি ঘোষণা করে এর আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেয় ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। এরপর ইসলামাবাদে দুই মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। নিষিদ্ধ করা হয় সব ধরনের সভা-সমাবেশ। জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
রোববার শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ব্যবহার করেছে। এতে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। এদিন শত শত সমর্থকদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। যেহেতু চূড়ান্ত বিক্ষোভে সমর্থকদের উদ্দেশে রাজধানীতে থাকার এবং তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইমরান খান, তাই সোমবার ইসলামাবাদের 'ডি চক' এলাকায় সমবেত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পিটিআইয়ের নেতাকর্মীরা।
উলেস্নখ্য, ২০২২ সালে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচু্যত হওয়ার পর থেকে ইমরান খান একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হন। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদসহ বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে ইমরান খানের দল এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছে।
২০২৩ সালের মে মাসে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন ইমরান। তার বিরুদ্ধে ১৫০টির বেশি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। পিটিআইয়ের দাবি, মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দলের নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়ায় এর আগেও দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে পিটিআই সমর্থকরা। ইমরান খান অভিযোগ করে বলেছেন, 'ইসলামাবাদ হাইকোর্ট জামিন দিলেও সরকার আমার মুক্তির ব্যবস্থা করছে না। এক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে।'