রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান যুদ্ধটি এখন 'বৈশ্বিক' যুদ্ধে রূপ নিচ্ছে। এ অবস্থায় পশ্চিমা দেশগুলোতে হামলা করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি। আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার পর এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে নতুন প্রজন্মের একটি মাঝারি পালস্নার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পরীক্ষামূলক হামলার পর শুক্রবার জাতির উদ্দেশে একটি অঘোষিত টেলিভিশন ভাষণে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি
পুতিন বলেছেন, রাশিয়া এরই মধ্যে একটি নতুন ধরনের মাঝারি পালস্নার হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেনের একটি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। ভবিষ্যতে আরও এমন আক্রমণ হতে পারে। তবে তিনি জানান, এসব আঘাতের আগে বেসামরিক জনগণকে সতর্ক করা হবে। পুতিন বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের অনুমোদনে ইউক্রেন নভেম্বরের ১৯ তারিখে ছয়টি এএটিএসএমএস এবং ২১ নভেম্বর ব্রিটিশ স্টর্ম শ্যাডো ও মার্কিন হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ায় হামলা চালায়। তিনি বলেন, এরপর থেকেই আঞ্চলিক সংঘাত বৈশ্বিক রূপ নিচ্ছে। বিশ্বকে একটি বৈশ্বিক সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে আমেরিকা।
রুশ প্রেসিডেন্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, 'যদি আগ্রাসী কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়, আমরাও সমানভাবে প্রতিক্রিয়া জানাব।' তিনি বলেছেন, মার্কিন এএটিএসএমএস দিয়ে চালানো ইউক্রেনীয় হামলায় তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। তবে ২১ নভেম্বর স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে কুরস্ক অঞ্চলে একটি কমান্ড সেন্টারে হামলা চালানো হয়েছে। এতে প্রাণহানি ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, শত্রম্নর এমন অস্ত্র ব্যবহার সামরিক কার্যক্রমের গতিপথ বদলাতে পারবে না।
পুতিন বলেন, 'যেসব দেশ তাদের অস্ত্র আমাদের সামরিক স্থাপনায় ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছে, তাদের সামরিক স্থাপনাগুলোতে আঘাত করার অধিকার রাশিয়ার রয়েছে। কেউ যদি এটি নিয়ে সন্দেহ করে, তবে তারা ভুল করছে। এর প্রতিক্রিয়া অবশ্যই হবে।'
রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের ১৮ শতাংশ ভূখন্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে পুরো ক্রিমিয়া, ৮০ শতাংশ দোনবাস অঞ্চল এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলের ৭০ শতাংশের বেশি ভূখন্ড। ইউক্রেন ও পশ্চিমারা রাশিয়ার এই কর্মকান্ডকে 'সাম্রাজ্যবাদী' ভূখন্ড দখলের চেষ্টা হিসেবে দেখছে এবং আশঙ্কা করছে, ইউক্রেন জয়ী হলে রাশিয়া ন্যাটোর কোনো সদস্য দেশেও আক্রমণ করতে পারে।
পুতিন বলেছেন, রাশিয়া সম্প্রতি 'ওরেশনিক' নামে একটি নতুন মাঝারি পালস্নার হাইপারসনিক নন-নিউক্লিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে। ইউক্রেনের দিনিপ্রো শহরে অবস্থিত একটি ক্ষেপণাস্ত্র ও মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র এই হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল। তিনি দাবি করেছেন, এই আঘাত সফল হয়েছে।
পুতিন আমেরিকার ২০১৯ সালে ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ারও সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, মার্কিন পদক্ষেপ ছিল একটি বড় ভুল। উলেস্নখ্য, রাশিয়া একতরফাভাবে আইএনএফ চুক্তির আওতায় থাকা ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি বন্ধ রাখার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিল। তবে পুতিন বলেন, 'আমাদের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ পশ্চিমাদের কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করবে।'
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পুতিনের সাম্প্রতিক মন্তব্য ইউক্রেন সংঘাতকে আরও জটিল ও বিপজ্জনক অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমা অস্ত্রের ব্যবহার এবং রাশিয়ার পাল্টা হামলা বিশ্বকে নতুন এক সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে : মন্তব্য
ইউক্রেনের সাবেক সেনাপ্রধান
এদিকে, ইউক্রেনের সাবেক সেনাপ্রধান ভেলারি ঝালুঝনি দাবি করেছেন, বিশ্বে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তার মতে, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ান মিত্রদের সরাসরি যোগ দেওয়ার বিষয়টি তাই নির্দেশ করছে। 'ইউক্রেনিস্কা প্রাভাদা'র ইউপি১০০ পুরস্কার অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন এই সাবেক সেনা কমান্ডার।
তিনি বলেন, 'আমি অবশ্যই বিশ্বাস করি, ২০২৪ সালে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। উত্তর কোরিয়ার সেনারা ইউক্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সত্যি বলতে, এরই মধ্যে ইউক্রেনে প্রবেশ করেছে। ইরানের শাহেদ (ড্রোন) প্রকাশ্যে বেসামরিকদের হত্যা করছে, কোনো লজ্জা ছাড়া। উত্তর কোরিয়ার সেনা আর চীনের যুদ্ধাস্ত্র এখন প্রকাশ্যে এই যুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে।'
তিনি ইউক্রেনের মিত্রদের দ্রম্নত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যেন এই 'তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ' এখানেই থেমে যায়। তিনি বলেন, 'ইউক্রেনের মাটিতে এটিকে এখনো এখনই থামানো সম্ভব। কিন্তু কিছু কারণে আমাদের মিত্ররা তা বুঝতে চায় না। এটি নিশ্চিত যে ইউক্রেনের এখন অনেক শত্রম্ন।'