উত্তেজনা দ্রম্নত বাড়ছে

ইউক্রেনে প্রথম 'আইসিবিএম' ছুড়ল রাশিয়া

বৃহস্পতিবার ভোরে ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোড়া হয়েছে :ইউক্রেন এই ক্ষেপণাস্ত্র পাঁচ হাজার ৮০০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে পারে

প্রকাশ | ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রাশিয়ার আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র -ফাইল ছবি
ইউক্রেনকে লক্ষ্য করে প্রথমবারের মতো আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র (ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল-আইসিবিএম) ছুড়েছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার ভোরে ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোড়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোড়া হয়েছে রাশিয়ার আসত্রাখান থেকে। ভোলোগোরোদের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের এই অঞ্চলটি কাস্পিয়ান সাগরের পাশে অবস্থিত। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম রাশিয়া এত শক্তিশালী, পারমাণবিক হামলা চালাতে সক্ষম দূরপালস্নার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করল। এই হামলা ৩৩ মাসের চলমান যুদ্ধে উত্তেজনা দ্রম্নত বাড়তে থাকার লক্ষণ। চলতি সপ্তাহে ইউক্রেন রাশিয়ার অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র এটিএসিএমএস ও ব্রিটিশ স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। রাশিয়া এই অস্ত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। ইউক্রেন তা অগ্রাহ্য করে এই হামলা চালায়। এরপরই রাশিয়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল। এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র সাধারণত পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনের জন্য তৈরি করা হয় এবং এগুলো কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর নিশ্চিত হয়ে থাকলে এটিই হবে সামরিক উদ্দেশে আইসিবিএম'র প্রথম ব্যবহার। রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রাগারের গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র এটি। ইউক্রেনে রাশিয়ার ৩৩ মাস ধরে চলা যুদ্ধ যখন ক্রমবর্ধমান গতিতে চলছে, তখন মধ্য-পূর্বাঞ্চলীয় শহর দিনিপ্রোর গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্য করে রুশ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির বিমান বাহিনী। ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যম 'ইউক্রেনস্কা প্রাভদা' জানিয়েছে, রাশিয়ার এই আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি ছিল আরএস-২৬ রুবেজ সিরিজের। এটি সলিড ফুয়েল বা কঠিন জ্বালানি চালিত। এই ক্ষেপণাস্ত্র পাঁচ হাজার ৮০০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে পারে। উলেস্নখ্য, রাশিয়া ২০১২ সালে এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রথম সফলভাবে পরীক্ষা করেছিল। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ মিটার এবং ওজন ৩৬ টন। এটি ৮০০ কেজি ওজনের পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম। আন্তঃমহাদেশীয় এই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কী লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে এবং এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কিনা তা ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানায়নি। তবে দিনিপ্রো শহরের গভর্নর সের্হি লিসাক জানিয়েছেন, হামলায় একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দুজন আহত হয়েছেন। ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, আইসিবিএম দিয়ে হামলার পাশাপাশি রাশিয়া এই হামলায় কিনঝাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং সাতটি কেএইচ-১০১ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভূপাতিত করেছে। ইউক্রেনের বিমান বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, এই আইসিবিএম ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার আস্ত্রাখান অঞ্চল থেকে ছোড়া হয়েছে। তবে ক্ষেপণাস্ত্রটি কী ধরনের আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, এটি পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ছিল কিনা, তা নিশ্চিত করে জানায়নি তারা। দেশটির বিমান বাহিনী আরও জানিয়েছে রাশিয়া তাদের দিনিপ্রো অঞ্চলের 'দোকানপাট এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্য করে' ভোররাতে এই হামলা চালায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার চেষ্টা করবেন। ফলে দুই পক্ষ শেষ মুহূর্তে নিজ নিজ অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রম্নয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। প্রায় তিন বছরে পা দিতে যাওয়া এই যুদ্ধ গত কয়েক মাস ধরে অনেকটা আড়ালে ছিল। তবে রাশিয়া হঠাৎ করে আবারও দ্রম্নত সময়ের মধ্যে ইউক্রেনের বিশাল একটি অংশ দখল করে নিয়েছে। এর আগে গত বুধবার ব্রিটিশ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা চালায় ইউক্রেন। যুক্তরাজ্যে তৈরি 'স্টর্ম শ্যাডো মিসাইল' দিয়ে রাশিয়ার গভীরে হামলা করে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি। গত মঙ্গলবার আমেরিকায় তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভেতরে আঘাত করার চেষ্টা করে ইউক্রেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের অফিস জানিয়েছে, তারা এই রিপোর্ট নিয়ে কোনো মন্তব্য করবে না। রাশিয়াকে মোকাবিলা করতে যুক্তরাজ্য গত বছর ইউক্রেনকে স্টর্ম শ্যাডো দূরপালস্নার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছিল। কিন্তু শর্ত ছিল, তা ইউক্রেনের ভেতরেই ব্যবহার করতে হবে। গত কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ায় আঘাত করার অনুমতি চাইছিলেন। উলেস্নখ্য, স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র ২৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যে গিয়ে আঘাত করতে পারে। ফলে এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার গভীরে আক্রমণ করতে পারে ইউক্রেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন এর আগেই বলেছেন, মার্কিন ও ব্রিটিশ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে যদি রাশিয়ার ভেতরে আক্রমণ চালানো হয়, তার অর্থ হবে, ন্যাটো সরাসরি এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ল। অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মার্কিন ল্যান্ডমাইন খুবই জরুরি। এর ফলে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী আরও শক্তির সঙ্গে লড়াই করতে পারবে। আমেরিকার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা ইউক্রেনকে ল্যান্ডমাইন দিচ্ছেন। তবে এই ল্যান্ডমাইনগুলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যবহার করতে হবে। না হলে এর ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাবে।