ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ

পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি পুতিনের

মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে বাইডেনের অনুমতির প্রতিক্রিয়ায় এই ডিক্রি জারি রাশিয়ার কাছে নতি স্বীকার করবে না ইউক্রেন

প্রকাশ | ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন
চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ বাহিনীকে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন। গত প্রায় তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে এই প্রথম এমন অনুমতি দিলেন তিনি। মঙ্গলবার যুদ্ধের এক হাজারতম দিবস পার করেছে রাশিয়া-ইউক্রেন। এই দিনেই তিনি এ সংক্রান্ত একটি ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পুতিনের মুখপাত্র এবং রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ। তথ্যসূত্র : এএফপি, রয়টার্স নতুন এই ডিক্রিতে বলা হয়েছে, যেসব দেশের পরমাণু অস্ত্র নেই, তাদের যদি তৃতীয় কোনো দেশ বা পক্ষ এ ধরনের বিধ্বংসী অস্ত্র প্রদান করে, সেক্ষেত্রে সেসব দেশের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে রাশিয়া। এদিন ক্রেমলিন কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে পেসকভ বলেন, 'পরমাণু অস্ত্র নেই, এমন কোনো আগ্রাসী দেশের সঙ্গে পরমাণু অস্ত্র সমৃদ্ধ কোনো দেশ যদি জোটবদ্ধ হয়, তাহলে তা আর একক নয়, বরং যৌথ হামলায় পরিণত হয়। আর এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের নীতি অক্ষুণ্ন রেখে যে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, আমরা সেটিই নিয়েছি।' পেসকভ আরও বলেন, 'রাশিয়া সবসময় পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করার বিপক্ষে; আমরা শুধু আমাদের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং অখন্ডতা রক্ষার জন্য এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।' পেসকভ বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আক্রমণের ক্ষেত্রে প্রতিশোধের অনিবার্যতাকে বোঝানোই এই নীতির মূল উদ্দেশ্য। এই হালনাগাদকৃত নীতিমালা, 'পারমাণবিক হামলা প্রতিরোধে রাষ্ট্রের মৌলিক নীতিমালা' নামে পরিচিত। ২০২০ সালে প্রণীত আগের নীতিমালার তুলনায় এই হালনাগাদটির আওতা আরও বিস্তৃত। নতুন নীতিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রচলিত অস্ত্রের আক্রমণকেও অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর অর্থ, কেবল পারমাণবিক আক্রমণ নয়, প্রচলিত অস্ত্র ব্যবহারের আক্রমণও রাশিয়ার কঠোর প্রতিক্রিয়া ডেকে আনতে পারে। গত রোববার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলার জন্য অনুমতি দেন আমেরিকার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই অনুমতির দুদিনের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার বিষয়ক ডিক্রিতে স্বাক্ষর করলেন পুতিন। রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ায় মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে জো বাইডেনের ইউক্রেনকে অনুমতির প্রতিক্রিয়া হিসেবে নতুন এই ডিক্রি জারি করেছেন পুতিন। ক্রেমলিনের সংবাদ সম্মেলনে পেসকভও এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন। আমেরিকার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। ক্রেমলিন বলেছে, তারা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। রুশ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউক্রেনের এই অস্ত্র সরবরাহ সরাসরি রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। পুতিনের এই নীতিগত পরিবর্তনের অংশ হিসেবে, রাশিয়া দেশব্যাপী মোবাইল বোমা শেল্টার নির্মাণ শুরু করেছে। ক্রেমলিনের দাবি, জনগণকে পারমাণবিক হুমকি থেকে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টাতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। উলেস্নখ্য, ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রুশ ভূখন্ড হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান না করা এবং আমেরিকা নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য তদবিরের জেরে কয়েক বছর টানাপড়েনের পর ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রম্নয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী যা এখনো চলছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজে এই অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই অভিযানে প্রায় তিন বছরে উভয়পক্ষের হাজার হাজার সামরিক-বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। রাশিয়ার কাছে নতি স্বীকার করবে না ইউক্রেন এদিকে, যুদ্ধের এক হাজারতম দিনে মঙ্গলবার রাশিয়ার 'আগ্রাসনের' কাছে নতি স্বীকার না করার অঙ্গীকার করেছে ইউক্রেন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, দখলদারদের কাছে ইউক্রেন কখনো আত্মসমর্পণ করবে না এবং আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের জন্য রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে সাজা দেওয়া হবে। সোমবার রাতে ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সামি অঞ্চলে ড্রোন হামলায় এক শিশুসহ আটজন নিহত হয় এবং রোববার আলাদা আরেকটি হামলায় ৮৯ জন নিহত হয়। ছোট্ট শহর হালখিভের আবাসিক ভবনে ড্রোন হামলায় দুই শিশুসহ ১২ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের ন্যাশনাল পুলিশ বাহিনী।