বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২
ভারত

মণিপুরে গুলিতে বিক্ষোভকারী নিহত বিজেপি-কংগ্রেসের দপ্তরে আগুন

এনডিএ সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার এনপিপির
যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
মণিপুরে গুলিতে বিক্ষোভকারী নিহত বিজেপি-কংগ্রেসের দপ্তরে আগুন
ভারতের মণিপুরে রাস্তায় পুড়ছে গাড়ি

কয়েক দিনের আপাত স্থিতিশীলতার পর ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুর। উত্তেজনা, সহিংসতা এবং অশান্তির নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রথম পর্বে শান্ত থাকা জিরিবাম জেলা। রোববার (১৭ নভেম্বর) সেই জেলারই একটি এলাকায় উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায় পুলিশ। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃতু্য হয়েছে এক যুবকের। এ ছাড়া বিজেপি ও কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। তথ্যসূত্র : এবিপি, এনডিটিভি

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, রোববার জিরিবাম জেলার বাবুপাড়া এলাকায় উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃতু্য হয় এক যুবকের। আহত হয়েছেন আরও একজন। এ ছাড়া জিরিবাম থানার পাশেই অবস্থিত বিজেপি ও কংগ্রেসের দুটি দলীয় দপ্তরে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উন্মত্ত জনতা দুই দলের দপ্তরে ঢুকে চেয়ার-টেবিল এবং অন্য আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর আগে রাজধানী ইম্ফলেও বিজেপি দপ্তরে ভাঙচুর চালানো হয়।

গত সোমবার জিরিবামে আসাম সীমানা সংলগ্ন অঞ্চল থেকে অপহরণ করা হয় ছয়জনকে। অভিযোগের তীর ছিল খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী কুকি গোষ্ঠীর দিকে। কয়েকদিন পর নদীতে ছয়টি মরদেহ ভেসে আসে। আর এটি নিয়েই শুরু হয় নতুন করে উত্তেজনা।

নদীতে মরদেহ পাওয়ার পর থেকেই বিক্ষোভ করতে শুরু করে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই গোষ্ঠী। গত শনিবার রাতে রাজ্যের ছয় বিধায়কের বাড়িতে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। এমনকি, ইম্ফল পূর্ব জেলার লুয়াংশাংবামে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের পৈতৃক বাড়িতেও হামলার চেষ্টা হয়।

রোববারও জিরিবাম জেলার জিরি নদীতে মরদেহ ভাসতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে একটি ছিল ষাটোর্ধ্ব নারীর মরদেহ এবং অপরটি এক শিশুর। রোববারই মেইতেই গোষ্ঠী মণিপুর সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা না হলে বিক্ষোভ আরও তীব্রতর হবে।

একপর্যায়ে রোববার রাত থেকে জিরিবাম জেলায় একের পর এক সহিংসতার ঘটনা ঘটতে থাকে। সহিংসতার ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে মণিপুর পুলিশ। তারা সবাই ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম এবং বিষ্ণুপুর এলাকার বাসিন্দা। রাজধানী ইম্ফলসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় জারি করা হয়েছে কারফিউ। বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও। কারফিউয়ের মধ্যেই রোববার রাতে জিরিবামের অন্তত পাঁচটি গির্জা, স্কুল, পেট্রল পাম্প এবং বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। কোথাও কোথাও অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগও উঠেছে।

এই পরিস্থিতিতে মণিপুরের বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছে শরিক দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)। রাজ্যে চলমান সহিংসতার জন্য মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংকে দায়ী করেছে তারা। এ ঘটনায় মণিপুরে সংকট আরও প্রকট হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও সমর্থন প্রত্যাহার করায় সরকার পতনের কোনো সম্ভাবনা নেই।

প্রসঙ্গত, প্রায় দেড় বছর আগে ২০২৩ সালের মে মাসে কুকি ও মেইতেই উপজাতির মধ্যে সাম্প্রতিক দাঙ্গা শুরু হয়। শেষ কয়েক মাস পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও রাজ্যটি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। মূলত উপজাতিদের জন্য নির্ধারিত কোটা নিয়ে এই সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে