বাইডেনের অনুমতি

রাশিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পারবে ইউক্রেন

নিজের প্রেসিডেন্সি আমলের শেষ সময় নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেন বাইডেন, অনুমতি দিয়ে বাইডেন আগুনে তেল ঢালছেন : রাশিয়া

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলে রোববার রাতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর একটি ভবন-গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ছবিটি সোমবার তোলা -রয়টার্স অনলাইন
আমেরিকার সরবরাহ করা দূরপালস্নার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ায় হামলা চালাতে ইউক্রেনকে সবুজ সংকেত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রায় তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে এর আগে মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালাতে দেননি তিনি। কিন্তু নিজের প্রেসিডেন্সি আমলের শেষ সময় এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেন বাইডেন। ইউক্রেনীয় সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে কয়েকদিন আগে উত্তর কোরিয়ার সেনা মোতায়েন করে রাশিয়া। এরপরই আমেরিকার পক্ষ থেকে এই অনুমতি দেওয়া হলো। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউস এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এদিকে, ইউক্রেনকে অনুমতি দেওয়ার পর এর কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। বাইডেন প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সংঘাতের 'আগুনে তেল ঢালছে' বলে রাশিয়া মন্তব্য করেছে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নতুন সিদ্ধান্তের কারণে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের যৌথভাবে বানানো দূরপালস্নার 'স্টর্ম শ্যাডো' ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার ভেতর ব্যবহারের অনুমতি পাবে ইউক্রেন। অবশ্য, বাইডেনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে যুক্তরাজ্য বা ফ্রান্স কেউ এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কয়েক মাস ধরে আমেরিকার কাছে এই অনুমতি চেয়ে আসছিলেন। যেন নিজেদের সীমান্তের অনেক দূর থেকেও রুশ সেনাদের অবস্থান লক্ষ্য করে তারা হামলা চালাতে পারেন। একটি সূত্রটি জানিয়েছেন, প্রথম হামলায় ব্যবহার করা হতে পারে এটিএসিএমএস রকেট। যেটি ৩০৬ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। তবে রাশিয়ার গভীরে হামলা চালালে যুদ্ধের গতিবেগ বদলে যাবে- এমন আশা করেন না খোদ মার্কিনিরা। কিন্তু যেহেতু এখন যুদ্ধবিরতির একটি আলোচনা চলছে। তাই কিছুটা শক্ত অবস্থানে থেকে যেন ইউক্রেন আলোচনার টেবিলে যেতে পারে, সে জন্য হয়ত বা আমেরিকা এই অনুমতি দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী ২০ জানুয়ারি আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর ইউক্রেনকে দেওয়া এই অনুমতি আবারও বাতিল করা হতে পারে কিনা, সেটি স্পষ্ট নয়। তবে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি সবার আগে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধ করবেন। অনুমতি দিয়ে বাইডেন আগুনে তেল ঢালছেন : রাশিয়া এদিকে, বাইডেনের অনুমতির পর রাশিয়া বলেছে, এই সিদ্ধান্ত দিয়ে আগুনে তেল ঢালছে আমেরিকা। সোমবার সকালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিনের সরকারি বাসভবন ক্রেমলিন থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমেরিকার দেওয়া ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার ভূখন্ডের গভীরে ছোড়া হলে মস্কো একে ইউক্রেনের হামলা নয়, বরং সরাসরি আমেরিকা থেকে হামলা বলে গণ্য করবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসন যে 'আগুনে তেল ঢালার' পদক্ষেপ নেওয়া এবং সংঘাত ঘিরে উত্তেজনা আরও উসকে দিতে চায় সেটি স্পষ্ট। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন এর আগে পশ্চিমা দেশগুলোকে এ ধরনের পদক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক করে বলেছিলেন, মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে কিয়েভ হামলা চালালে তা যুদ্ধে ন্যাটো সামরিক জোটের 'সরাসরি অংশগ্রহণের' শামিল হবে। আমেরিকার সবশেষ সিদ্ধান্তের বিষয়ে ক্রেমলিন কড়া প্রতিক্রিয়া জানালেও পুতিন এখনো নিজে থেকে কোনো মন্তব্য করেননি। এর আগে ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্ত ছিল, রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে ইউক্রেনীয় বাহিনী, যেখানে কিয়েভ গত আগস্টে আকস্মিক হামলা শুরু করে। কিন্তু বাইডেন বিদায় নেওয়ার আগে ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভূখন্ডের গভীরে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অনুমতি দিয়ে নীতির বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটালেন। ইউক্রেনে আবাসিক ভবনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ১০ ইউক্রেনে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির সুমি অঞ্চলের একটি আবাসিক ভবনে চালানো এই হামলায় নিহত হয়েছেন ১০ জন। নিহতদের মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক মানুষ। এ ছাড়া অন্য একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অঞ্চলটির প্রধান শহর ও প্রশাসনিক কেন্দ্র বিদু্যৎবিহীন হয়ে পড়েছে। রোববার গভীর রাতে এই হামলা চালানো হয়। সুমি সামরিক প্রশাসনের প্রধান ভলোদিমির আর্টিউখ প্রশাসনের 'টেলিগ্রাম' বার্তা চ্যানেলে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, 'রোববার রাত সুমি শহরের জন্য নরকে পরিণত হয়েছিল, রাশিয়া আমাদের এই ভূমিতে ট্র্যাজেডি নিয়ে এসেছে।' সামরিক প্রশাসন বলেছে, রাশিয়ার নিক্ষেপ করা আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে আঘাত করেছে, যার ফলে শহরটি বিদু্যৎহীন হয়ে পড়েছে।এদিকে, উদ্ধারকারীরা এবং প্রয়োজনীয় পরিষেবার সদস্যরা ঘটনাস্থলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং মনোবিজ্ঞানীরা ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান করছেন বলে ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় জরুরি পরিষেবা টেলিগ্রামে বলেছে। ৪০০ জনের বেশি লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও তারা জানিয়েছেন। ইউক্রেনের 'স্টেট ইমার্জেন্সি সার্ভিসে'র টেলিগ্রামে পোস্ট করা ছবিতে দেখা গেছে, অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে লড়াই করছেন এবং উদ্ধারকারীরা একটি ভবন থেকে লোকদের নিয়ে যাচ্ছে। অন্য একটি ছবিতে দেখা গেছে, একটি বহুতল ভবনের প্রায় সব জানালা উড়ে গেছে এবং এর সম্মুখভাগও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।