গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন

বিমান হামলায় শেষ ৭২ ফিলিস্তিনির জীবন

লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় হিজবুলস্নাহর গণমাধ্যম শাখার প্রধান নিহত নেতানিয়াহুর বাড়িতে এবার আগুনে বোমা

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
গাজার বেইত লাহিয়াতে ইসরায়েলি হামলা
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার উত্তরাঞ্চলীয় শহর বেইত লাহিয়াতে রোববার ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৭২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভোরে বেইত লাহিয়ার কয়েকটি আবাসিক ভবন এবং বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, দখলদার বাহিনী জানত, এই ভবনগুলোতে বাস করতেন কয়েক ডজন বাস্তুচু্যত বেসামরিক মানুষ। যাদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। যারা তাদের নিজ নিজ এলাকা থেকে পালিয়ে এসে এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় গাজা ভূখন্ডে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলায় আরও ৪৩ ফিলিস্তিনি নিহত হন। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, আনাদলু, রয়টার্স গাজার মেডিকেল সূত্র জানায়, রোববার বেইত লাহিয়ার প্রজেক্ট এলাকায় একটি পাঁচতলা ভবন লক্ষ্য করে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান হামলা চালায়। এতে প্রায় ৫০ জন নিহত এবং আরও অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া ভবনটিতে ৭০ জনের বেশি বাস্তুচু্যত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। এদিকে, ওই এলাকার আরেকটি বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত এবং আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। অন্য একটি বাড়িতে হামলায় আরও দুজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে একটি মেডিকেল সূত্র। ফিলিস্তিনিরা অভিযোগ করছেন, ইসরায়েল এই এলাকাটি দখল করতে এবং এর বাসিন্দাদের জোরপূর্বক সরিয়ে দিতে চাচ্ছে। মূলত জাতিগত নির্মূলই তাদের প্রধান লক্ষ্য। লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় হিজবুলস্নাহর গণমাধ্যম শাখার প্রধান নিহত এদিকে, লেবাননের রাজধানী বৈরুতের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার একটি ভবনে বিমান হামলা চালিয়ে হিজবুলস্নাহর গণমাধ্যম সম্পর্ক বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ আফিফকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। অবশ্য হিজবুলস্নাহর কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈরুতের রাস আল-নাবা এলাকার আশপাশে হামলাটি চালিয়েছিল ইসরায়েল। এই এলাকার একটি ভবনে 'বাথ পার্টি'র অফিস রয়েছে। ভবনটিতে আফিফ ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন পার্টির প্রধান আলি হিজাজি। প্রাপ্ত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ভবনের ওপরের তলাটি প্রথম তলায় ধসে পড়েছে। ঘটনাস্থলে সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা ছিলেন। আফিফ হিজবুলস্নাহর সাবেক মহাসচিব হাসান নাসরুলস্নাহর দীর্ঘদিনের মিডিয়া উপদেষ্টা ছিলেন। হাসান ২৭ সেপ্টেম্বর বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন। নেতানিয়াহুর বাড়িতে এবার আগুনে বোমা হামলা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনে আগুনে বোমা হামলা হয়েছে। শনিবার (১৬ নভেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুরে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সেজারিয়া শহরে নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত বাড়ির সামনে দুটি 'ফ্ল্যাশ বোমা' (আগুনে বোমা) নিক্ষেপ করা হয়। ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, বোমাগুলো নেতানিয়াহুর বাড়ির বাগানে পড়ে এবং এতে আগুনের গোলা সৃষ্টি হয়। তবে, এতে কোনো বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। নিরাপত্তা বাহিনী এই হামলাকে 'গুরুতর' হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তবে হামলার সময় প্রধানমন্ত্রী বা তার পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে ছিলেন না। এটি ছিল নেতানিয়াহুর বাসভবনে দ্বিতীয় হামলা। এর আগে গত ১৯ অক্টোবর লেবাননের হিজবুলস্নাহ নেতানিয়াহুর বাড়িতে ড্রোন হামলা চালিয়েছিল। ওই হামলাতেও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার পরিবারের কেউ বাড়িতে ছিলেন না। নেতানিয়াহুর বাড়িটি সেজারিয়া শহর থেকে হাইফা শহরের প্রায় ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত, যেখানে হিজবুলস্নাহ গোষ্ঠী নিয়মিত হামলা চালিয়ে থাকে। এ ঘটনায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ রোববার ভোরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে বলেছেন, এই ঘটনায় 'সব রেড লাইন অতিক্রম' করেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করেনি। হামলার ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী। হামলাকারীদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। অবশ্য এ ঘটনায় রোববার সকালের দিকে পুলিশ এবং আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেতের সদস্যরা তিনজন গ্রেপ্তার করেছে। তবে গ্রেপ্তারদের নাম-পরিচয় ও জাতীয়তা সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রদান করা হয়নি। বরং এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং আগামী অন্তত ৩০ দিন পর্যন্ত সন্দেহভাজনদের নাম-পরিচয় প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। এদিকে, রোববার জেরুজালেমে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর অফিস ঘেরাও করেছেন বিক্ষোভকারীরা। তার পদত্যাগ, নতুন নির্বাচন এবং গাজায় আটক ইসরায়েলি বন্দিদের ফিলিস্তিনি বন্দিদের সঙ্গে বিনিময়ের চুক্তি দাবি করেছেন তারা। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজে দেখা যায়, কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী মাটিতে বসে ভবনের প্রবেশপথ বন্ধ করে রেখেছেন। সেইসঙ্গে তারা বিভিন্ন সেস্নাগান দিচ্ছেন।