আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য হোয়াইট হাউসে যাওয়ার প্রস্তুতি দ্রম্নতগতিতেই সারছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এরই মধ্যে তিনি তার কাজ শুরু করে দিয়েছেন এবং এর অনেক কিছু ওয়াশিংটনসহ বিশ্বের অনেককেই বিস্মিত করছে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম সপ্তাহে অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য কিছু বিষয় এখানে আলোচনা করা হলো। তথ্যসূত্র : বিবিসি
বিশ্বস্ত টিম তৈরি
নির্বাচনে জয়ের পর দ্রম্নতই ট্রাম্প তার টপ টিম বা প্রধান দল তৈরি করেছেন। মন্ত্রিসভার কয়েকজনের নাম চূড়ান্ত করেছেন তিনি, যাদের জন্য সিনেটের অনুমোদন লাগবে। এ ছাড়া হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা ও কয়েকজন সিনিয়র সহযোগীকে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প।
কিন্তু এটাই সব খবর নয়। যাদের পছন্দ করে নিয়োগ বা মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তা পরিষ্কার ইঙ্গিত দিচ্ছে, ট্রাম্প সরকারে একটি বড় ধরনের ঝাঁকুনি দিতে চাইছেন। ট্রাম্প যাকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছেন, তিনি এমন নীতি তৈরি করবেন বলে উলেস্নখ করেছেন, যার মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত সামরিক কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে।
'বন্ধুত্বপূর্ণ কংগ্রেস' পাচ্ছেন ট্রাম্প
এবার রিপাবলিকানরাই নিয়ন্ত্রণ করছে হাউস ও সিনেট। অন্তত আগামী দুই বছরের জন্য কংগ্রেসের উভয় কক্ষে দলটির সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। এটা ট্রাম্পের এজেন্ডাগুলো বাস্তবায়নের জন্য সহায়ক হবে। কারণ, এখন তিনি সহজেই তার পক্ষে আইন পাস করিয়ে আনতে পারবেন এবং তার নীতিগুলো আইনে পরিণত করার পথ সহজ হবে।
তিনি তার প্রথম মেয়াদের শেষ দিকে যেভাবে কংগ্রেসের তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন, বারবার সেটা এবার এড়াতে সক্ষম হবেন। বিপুলসংখ্যক অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দেওয়া বা আমদানি শুল্ক বাড়ানোর মতো বিষয়গুলোতে তার প্রতিশ্রম্নতিগুলো বাস্তবায়নের জন্য রিপাবলিক নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস ভূমিকা রাখবে।
রিপাবলিকান সিনেট
সিনেটের নতুন নেতা নির্বাচনের মধ্য দিয়েই ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রভাবের একটা পরীক্ষা হয়ে যাবে চলতি সপ্তাহেই। তিনি এ বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা এর মধ্যেই কথা বলেছেন, যেখানে এ পদের জন্য ট্রাম্পের অনুগত রিক স্কটের নাম এসেছিল।
কিন্তু প্রথম রাউন্ডের ভোটেই তিনি হেরে গেছেন বরং রিপাবলিকানরা বেছে নিয়েছে জন থুনেকে। তার সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক খুব একটা সহজ নয়। ফলে সিনেটের অনুমোদনের জন্য ট্রাম্পের যেসব মনোনয়নগুলো আসবে, সেগুলো কিছুটা পরীক্ষার মধ্যে পড়তে পারে। কিছু সিনেট রিপাবলিকান এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, ট্রাম্প বিচার বিভাগের দায়িত্ব যাকে দিতে যাচ্ছেন, সেই ম্যাট গ্যায়েৎজের বিরোধিতা করবেন তারা।
ট্রাম্পের শাস্তি বাতিল হতে পারে
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন মনোনয়ন ও নিয়োগের ওপর পূর্ণ দৃষ্টি দিলেও মনে রাখতে হবে, নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনি সমস্যাগুলোও অনেকটা দূর হওয়ার পথে। নিউইয়র্কে ঘুষ দেওয়ার মামলায় তার যে শাস্তি হয়েছিল, সেটা হয়তো আর কয়েকদিন বহাল থাকবে।
চলতি সপ্তাহেই শাস্তি বাতিলের বিষয়ে একজন বিচারক তার সিদ্ধান্ত দেওয়া পিছিয়ে দিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। প্রেসিডেন্টের দায়মুক্তির বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রুলিংয়ের কারণে তার সাজা বাতিল হয়ে যাবে কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা ছিল। তার শাস্তি কবে বাতিল হবে, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে ২৬ নভেম্বর তার সাজার যে তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেটা বিলম্বিত হয়ে যাবে।
চীনকে নিয়ে দৃঢ় অবস্থান
বিশ্বকে নিয়ে বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি যে ভিন্ন, সেটা গোপন কিছু নয়। ফলে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপক পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ট্রাম্পের টিমে অনেকেরই এমন চিন্তা আছে যে, চীন মার্কিন অর্থনীতি ও সামরিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বড় হুমকি হতে যাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ট্রাম্পের মনোনয়ন পাওয়া মার্ক রুবিও চীনকে 'আমেরিকার সবচেয়ে আগ্রাসী প্রতিপক্ষ' হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজ বলেছেন, আমেরিকা ও চীনের মধ্যে 'ঠান্ডা যুদ্ধ' চলছে। জাতিসংঘে তার প্রস্তাবিত স্থায়ী প্রতিনিধি এলিস স্টেফানিক নির্বাচনে হস্তক্ষেপের জন্য চীনকে সরাসরি অভিযুক্ত করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে বেইজিং এর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল উত্তেজনাকর। শুল্ক, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও কথাবার্তায় ট্রাম্পকে মনে হচ্ছে চীনের বিষয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে আরও শক্ত অবস্থান নেবেন।