আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, জানুয়ারি মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর তার প্রথম কাজ হবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা। শুক্রবার আমেরিকার ফ্লোরিডায় 'আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি ইন্সটিটিউট'-এর অনুষ্ঠানে এই বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। নির্বাচনের পর এটিই তার জনসম্মুখে দেওয়া প্রথম দীর্ঘ বক্তব্য। ট্রাম্প বারবার বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি অবিলম্বে ওই যুদ্ধ বন্ধ করবেন। যদিও যুদ্ধ বন্ধে কীভাবে কী করবেন, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি। তথ্যসূত্র : বিবিসি
তিনি তার সমর্থকদের জানান, তার অন্যান্য অগ্রাধিকার হবে মধ্যপ্রাচ্য এবং 'দুর্নীতিগ্রস্ত, ভঙ্গুর, ব্যর্থ প্রশাসনকে সাফ করা'। তবে এই পরিকল্পনাগুলো সম্পর্কেও তিনি বিস্তারিত বিবরণ না দিয়ে মঞ্চ ছাড়েন।
'আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি ইন্সটিটিউট' ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিজেরই সংস্থা। ২০২১ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় ওই সংস্থাটি। এই প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একাধিক রক্ষণশীল নীতির প্রস্তাবনা তৈরি করেছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'আমরা যে এভাবে জিতে যাবো, তা কেউ জানতো না। এটি একটি বড় বিজয় ছিল।' জনতার মাঝে থাকা অনেককে ধন্যবাদ দিয়েছেন তিনি। তাদের মাঝে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হ্যাভিয়ের মিলেই এবং হাউস স্পিকার মাইক জনসনও ছিলেন। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প টেসলার মালিক ইলন মাস্কের কথাও বারবার উলেস্নখ করেছেন। ইলন মাস্ক গত কিছুদিন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার বাসভবনে ছিলেন। ইলন মাস্ককে ডোনাল্ড ট্রাম্প মজা করে বলছিলেন, তিনি এই জায়গাটি পছন্দ করেন। ট্রাম্প বলেন, 'আমি তাকে বের করে দিতে পারি না। আমিও এখানে তাকে পেয়ে আনন্দিত।'
আরও কিছু 'হাই-প্রোফাইল' সমর্থককেও ধন্যবাদ জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প। যেমন- সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বিবেক রামাস্বামী ও মার্কিন রাজনীতিবিদ টালসি গ্যাবার্ডকে। তাদের দু'জনকেই সিনিয়র পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ফ্লোরিডায় বক্তব্য দেওয়ার সময় ট্রাম্প ঘোষণা করেন, তিনি হোম সেক্রেটারি হিসেবে ডগ বারগামকে মনোনীত করেছেন। প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ফেডারেল জমির ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের দায়িত্ব যে বিভাগের আওতায়, এক সময়ের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডগ বারগাম সেই বিভাগটি পরিচালনা করবেন এবার। উলেস্নখ্য, এই পদটিসহ বেশিরভাগই মন্ত্রিপরিষদ পদের জন্য সিনেটের অনুমোদন প্রয়োজন। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুক্রবার ঘোষণা করার কথা।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর এই সময়টিকে উপভোগ করছেন ট্রাম্প। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউসে ফিরে যাওয়ার জন্য তিনি অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করছেন। তবে তার শপথ গ্রহণ জানুয়ারির আগে হবে না। তাই তাকে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু আজকের এই আয়োজন ছিল তার ভক্ত ও সমর্থকদের সামনে বিজয়ের উদযাপন।
২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেদিন থেকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ও দায়িত্ব, দুই-ই গ্রহণ করবেন। রীতি অনুযায়ী, ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
তবে তার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হবে এবং সেটি করা হবে ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি অনুসরণ করে। আগামী ১৭ জানুয়ারি ইলেক্টোরাল কলেজের প্রতিনিধিরা একসঙ্গে বসে তাদের ভোট দেবেন।
সাধারণত যে অঙ্গরাজ্যে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী, সেই প্রার্থীর পক্ষেই ওই রাজ্যের সবগুলো ইলেক্টোরাল ভোট দেওয়া হয়। যদিও কখনো কখনো এর ব্যতিক্রমও দেখা গেছে। সে রকম হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও নজির রয়েছে।
এরপর আগামী ৯ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে সিনেটে আনুষ্ঠানিকভাবে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট গণনা করা হবে। সেই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ও নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস। ভোট গণনা শেষে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম ঘোষণা করবেন।
নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার আগ পর্যন্ত সময়কে বলা হয় 'রূপান্তরকালীন সময়'। ওই সময়ের মধ্যে নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের বাছাই করেন এবং পরিকল্পনা তৈরি করে থাকেন। ট্রাম্প এখন সেটিই করছেন।