প্রতিনিধি পরিষদও রিপাবলিকানদের দখলে
রিপাবলিকান পার্টি ৪৩৫ সদস্যের প্রতিনিধি পরিষদে জিতেছে ২১৮টি আসনে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প :শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের আশ্বাস বাইডেনের
প্রকাশ | ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
আমেরিকার নির্বাচনে সিনেটে জয়ের পর এবার প্রতিনিধি পরিষদেরও (হাউস অব রিপ্রেজেনন্টেটিভস) নিয়ন্ত্রণ নিল রিপাবলিকান শিবির। ফলে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আইন প্রণয়নে তার ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে গেলেন। রিপাবলিকানরা অ্যারিজোনায় জয়ের পরে ৪৩৫ সদস্যের প্রতিনিধি পরিষদে ২১৮টি আসন জিতেছে। দলটি এরই মধ্যে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে ১০০ আসনের মধ্যে অন্তত ৫২টি আসন নিয়ে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করেছে। অবশ্য, ২০২৩ সাল থেকেই মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানদের দখলে ছিল। তথ্যসূত্র : এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স
সিনেটে রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি প্রতিনিধি পরিষদেও তাদের আধিপত্য নিশ্চিত হওয়ায় কর ও ব্যয় সংকোচন, জ্বালানি খাতে নিয়ন্ত্রণ শিথিলকরণ ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণের মতো একটি বিস্তৃত এজেন্ডা বাস্তবায়নের সুযোগ পাবেন ট্রাম্প। বাইডেনের মেয়াদের গত দুই বছর কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ বিরোধী দল রিপাবলিকানের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এ সময় বিভিন্ন নীতি বাস্তবায়নে বাইডেন প্রস্তাব পাস করতে বাধার মুখে পড়েছেন।
রিপাবলিকান হাউস স্পিকার মাইক জনসন বলেন, 'আমাদের জনগণের জন্য কাজ করতে হবে এবং আমরা তা করব। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আক্রমণাত্মক নীতিতে এগোতে চান।' উলেস্নখ্য, বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছেন, প্রতিনিধি পরিষদের বর্তমান স্পিকার মাইক জনসনকে সর্বসম্মতভাবে হাউসের পরবর্তী স্পিকার হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ৩ জানুয়ারি পরিষদের ভোটের মাধ্যমে এই মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে। স্পিকার হিসেবে বহাল থাকতে তার অন্তত ২১৮টি ভোট পেতে হবে।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প :শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের আশ্বাস বাইডেনের
এদিকে, বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বুধবার সাক্ষাৎ করেছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানিয়েছেন বাইডেন। মার্কিন ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে সাক্ষাৎ করেন ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান দুই নেতা। এ সময় দুই নেতা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। উলেস্নখ্য, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয়ের পর ট্রাম্পের পক্ষ থেকে অবশ্য এমন সৌজন্য পাননি বাইডেন। বরং নির্বাচনের দিন কয়েক পর ক্যাপিটল দাঙ্গার সাক্ষী হয়েছে গোটা বিশ্ব।
বুধবার হোয়াইট হাউসে পা রাখেন আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। উষ্ণ করমর্দন করে তাকে শুভেচ্ছা জানান বাইডেন। ট্রাম্পকে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে বাইডেন বলেন, 'ওয়েলকাম ব্যাক'। এর পরই ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে আলোচনা করেন দুই নেতা। উলেস্নখ্য, গত সপ্তাহে নির্বাচনে কমলা হ্যারিস পরাজিত হওয়ার পরই বাইডেন জানিয়েছিলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর করতে চান তিনি। এদিন হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পকে তিনি বলেন, 'আপনার যা কিছু প্রয়োজন, সব কিছুর আয়োজন আমরা করে দেব।'
বাইডেনের সঙ্গে আলোচনার পর ট্রাম্প বলেন, 'রাজনীতি খুবই কঠিন। অনেক ক্ষেত্রেই এই জগৎটা একেবারেই ভালো নয়। তবে আজ রাজনীতি ভালো জায়গায় রয়েছে, সেটা আমার ভালো লাগছে।' রিপাবলিকান নেতার কথায়, যতখানি শান্তিপূর্ণভাবে সম্ভব, সেভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর হবে দুই নেতার মধ্যে।
এর আগে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ওয়াশিংটন পৌঁছান। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার নিজের 'ট্রাম্প ফোর্স ওয়ান' বিমানে চড়ে 'জয়েন্ট বেস অ্যান্ড' বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করেন।
হোয়াইট হাউসে যাওয়ার আগে সমর্থকদের উদ্দেশে ভাষণ দেন ট্রাম্প। সেখানে ইঙ্গিত দেন, তৃতীয়বারও প্রেসিডেন্ট হতে আগ্রহী তিনি। প্রসঙ্গত, মার্কিন সংবিধান তৃতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার অধিকার দেয় না। এরপরও ট্রাম্প বলেন, 'আমার ধারণা, আমি আরেক মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারব না। অবশ্য যদি আপনারা বলেন, 'তিনি ভালো ছিলেন। কিংবা, বিশেষ একজনকে আমরা পেয়েছি, তা হলে আলাদা কথা।' এ কথার মধ্য দিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে ট্রাম্প সাংবিধানিক আইন বদলানোর দিকে পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন কিনা, সেটা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
'হাউস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন কমিটি'র চেয়ারম্যান টম কোল বলেছেন, 'আমার মনে হয় তিনি একটু মজা করছেন।' তিনি বলেন, 'এটিই তার শেষ মেয়াদ, যদি না এ সংক্রান্ত সংবিধানে কোনো পরিবর্তন আসে এবং সংবিধান পরিবর্তনে তিন-চতুর্থাংশ রাজ্য এবং কংগ্রেস দুই-তৃতীয়াংশের সম্মতি প্রয়োজন। তাই এমনটা ঘটার কোনো সম্ভাবনা নেই।'
নিউইয়র্কের ডেমোক্রেট ড্যানিয়েল গোল্ডম্যান ট্রাম্পের মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেছেন, তৃতীয় মেয়াদের জন্য চেষ্টা করাও হবে স্পষ্টভাবে অসাংবিধানিক।
উলেস্নখ্য, গত ৫ ডিসেম্বরের ভোটে মার্কিন মসনদে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের। এরপর থেকেই আমেরিকা ছেড়ে অন্যত্র সরে পড়ার ধুম লেগেছে মার্কিনিদের মধ্যে। ইউরোপের নানা দেশ, কানাডা বা মেক্সিকোয় চলে যেতে চাইছেন বহু মার্কিন নাগরিক। গুগল সার্চ হিস্ট্রি তাই বলছে। এমন নয়, বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকার সময় এই প্রবণতা ছিল না। ছিল, কিন্তু গত এক সপ্তাহে তা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুলাংশে। তবে সেদিকে মন দিতে নারাজ ট্রাম্প।