অনুগত ব্যক্তিদের নিয়ে প্রশাসন সাজাতে শুরু করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় গত সোমবার ট্রাম্প তার অধীনে গঠিত হতে যাওয়া প্রশাসনে দায়িত্ব পালনের জন্য আরও কয়েকজনের নাম ঘোষণা করেছেন।
আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ট্রাম্প। এর আগেই ট্রাম্প তার প্রশাসনে কাকে কাকে নিয়োগ দিচ্ছেন, সেটা নিয়ে অনেক জল্পনাকল্পনা চলছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রথমবারের মতো এবারও অনুগতদের নিয়েই প্রশাসন সাজাবেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ফ্লোরিডার সিনেটর মার্কো রুবিওকে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প। স্থানীয় সময় সোমবার ট্রাম্পঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। এটা হলে এই প্রথম লাতিনো বংশোদ্ভূত কোনো রাজনীতিক দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হবেন।
রুবিওর জন্ম ফ্লোরিডাতেই। তিনি বিগত বছরগুলোতে চীন, ইরান, কিউবাসহ যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি সম্মান রেখেই শক্তিশালী মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির পক্ষে কথা বলেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলে রুবিওকে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। কারণ, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের চেয়ে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি আরও বেশি অস্থির ও বিপজ্জনক।
এবারের নির্বাচনে ভোটার আকর্ষণে অভিবাসনকে প্রধান ইসু্য করে প্রচার চালান ট্রাম্প। নির্বাচিত হয়েই তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে সব অবৈধ অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠাবেন। এতে ট্রাম্পের প্রশাসনে অভিবাসীপ্রধান কে হচ্ছেন, সেটা নিয়ে ছিল আলোচনা। সোমবার এই পদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক-বিষয়ক সংস্থার (আইসিই) সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টম হোম্যানের নাম ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প।
ওয়াশিংটন পোস্ট ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, ফ্লোরিডার কট্টরপন্থি সিনেটর এবং চীনের সমালোচক হিসেবে পরিচিত মাইকেল ওয়ালৎসকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। ট্রাম্পের প্রশাসনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর (হোমল্যান্ড সিকিউরিটি) দায়িত্ব পাচ্ছেন সাউথ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ক্রিস্টি নোয়েম। নিউইয়র্কের কংগ্রেস উইম্যান এলিস স্টেফানিককে জাতিসংঘের দূত হিসেবে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প। পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার (ইপিও) প্রধান হচ্ছেন ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের মিত্র লি জেলডিন।
এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হচ্ছেন পিট হেগসেথ। তিনি রক্ষণশীল মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের উপস্থাপক। মার্কিন সামরিক বাহিনীতে কাজ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে তার।
হেগসেথ মিনেসোটা অঙ্গরাজ্য থেকে সিনেট নির্বাচনে লড়েছিলেন। কিন্তু তিনি নির্বাচিত হতে পারেননি।
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদে ৪৪ বছর বয়সি হেগসেথকে বেছে নেওয়ার কথা জানিয়ে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রম্নথ সোশ্যালে একটি পোস্ট দিয়েছেন ট্রাম্প।
পোস্টে ট্রাম্প বলেন, হেগসেথ একজন বলিষ্ঠ ও স্মার্ট মানুষ। তিনি 'আমেরিকা ফার্স্ট' (আমেরিকা প্রথম) নীতির একজন সত্যিকারের বিশ্বাসী। শত্রম্নদের তিনি জানাতে চান, হেগসেথের নেতৃত্বে মার্কিন সামরিক বাহিনী আবার দুর্দান্ত হবে। যুক্তরাষ্ট্র কখনোই পিছিয়ে পড়বে না।
ইলন মাস্ককে নতুন তৈরি করা সরকারি দক্ষতা বিভাগের দায়িত্ব দিলেন ট্রাম্প
এ ছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সরকারকে আরও দক্ষ করতে 'সরকারি দক্ষতা বিভাগ' নামে নতুন একটি বিভাগ তৈরি করে এর সহপ্রধান হিসেবে মাস্ককে নিয়োগ দিয়েছেন। বিভাগটিতে মাস্কের পাশাপাশি আরেক সহপ্রধান হিসেবে থাকবেন সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বিবেক রামস্বামী।
তাদের নিয়োগের কথা মঙ্গলবার ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের পরিচালিত বিভাগটি সরকারি সীমার বাইরে থেকে কাজ করবে, ট্রাম্প এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেছেন, 'মাস্ক ও রামস্বামী আমার প্রশাসনে সরকারি আমলাতন্ত্র, অতিরিক্ত প্রবিধান বাদ দেওয়া, অপব্যয় হ্রাস এবং ফেডারেল সংস্থাগুলো পুনর্গঠনের পথ প্রশস্ত করবে।'
ট্রাম্প জানিয়েছেন, নতুন বিভাগটি রিপাবলিকানদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন উপলব্ধি করে 'সরকারের বাইরে থেকে পরামর্শ ও পর্থনির্দেশ করবে।'
এর মাধ্যমে তিনি মাস্ক ও রামস্বামীর ভূমিকা অনানুষ্ঠানিক হতে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর ফলে তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে মার্কিন সেনেটের অনুমোদন প্রয়োজন হবে না এবং মাস্ক তার বৈদু্যতিক গাড়ি কোম্পানি টেসলা, সামাজিক মাধ্যম এক্স এবং রকেট কোম্পানি স্পেসএক্স এর প্রধান হিসেবে বহাল থাকতে পারবেন।
ট্রাম্প জানান, নতুন এই বিভাগটি হোয়াইট হাউস এবং ব্যবস্থাপনা ও বাজেট দপ্তরের সঙ্গে কাজ করবে। তিনি বলেন, 'এর মাধ্যমে সরকারে বড় আকারের কাঠামোগত সংস্কার এবং একটি উদ্যোক্তা পন্থা তৈরি হবে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।'
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণার ২৫০তম বার্ষিকীতে, ২০২৬ সালের ৪ জুলাই এই কাজ শেষ হবে। ফোবর্সের তালিকা অনুযায়ী, মাস্ক বিশ্বের শীর্ষ ধনী। তিনি ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে সাহায্য করতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেছেন এবং রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর সঙ্গে বিভিন্ন জনসভায়ও হাজির থেকেছেন। ট্রাম্প আগেই বলেছিলেন, সরকারের দক্ষতা বাড়াতে তিনি তার প্রশাসনে মাস্ককে একটি ভূমিকা রাখার প্রস্তাব দেবেন। রামস্বামী একজন ব্যবসায়ী ও রিপাবলিকান দলের সদস্য।