ইসরায়েলি আগ্রাসন

গাজা-লেবাননজুড়ে নিহত শতাধিক

গাজায় নিরাপদ অঞ্চল ঘোষিত এলাকায় ড্রোন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হামাসের সঙ্গে লড়াইয়ে ইসরায়েলের আরও চার সেনা নিহত

প্রকাশ | ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
লেবাননে ইসরায়েলের বিমান হামলার পর রেডক্রসের সদস্যরা ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহের সন্ধান করছেন। ছবিটি মঙ্গলবার উত্তর লেবাননের শহর আইন ইয়াকুব এলাকা থেকে তোলা। এই এলাকায় সোমবার রাতভর ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলা চলে -রয়টার্স অনলাইন
গাজা ও লেবাননে প্রাণঘাতী হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। সর্বশেষ হামলায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় আরও অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৫৬ জন। এছাড়া ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে ইসরায়েলি হামলায় আরও ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৪৩ হাজার ৬০০ ছাড়িয়ে গেছে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, আনাদলু, রয়টার্স লেবাননে হামলার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, ইসরায়েলি হামলায় একদিনে কমপক্ষে আরও ৫৪ জন নিহত হয়েছেন বলে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সোমবার জানিয়েছে। এতে করে গত বছরের অক্টোবর থেকে চলা ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে তিন হাজার ২৪০ জনে দাঁড়িয়েছে। লেবানিজ এই মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় গত একদিনে আরও ৫৬ জন আহত হয়েছেন। এর ফলে গত অক্টোবর থেকে মোট আহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪ হাজার ১৩৪ জনে পৌঁছেছে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানী বৈরুতের পাশাপাশি লেবাননজুড়ে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহর অপারেটিভস, অবকাঠামো এবং অস্ত্রাগারকে লক্ষ্য করে এই হামলা চলছে। হিজবুলস্নাহও পাল্টা আঘাত হানছে। লেবাননে অভিযানরত ইসরায়েলি সেনা সদস্যদের হত্যার পাশাপাশি ইসরায়েলের বেশ গভীরে সামরিক ঘাঁটিতে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালাচ্ছে শক্তিশালী এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। গত বছরের অক্টোবরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকেই লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহর সঙ্গে সংঘাত চলছে ইসরায়েলের। তবে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে হিজবুলস্নাহর সঙ্গে ইসরায়েলের পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরু হয়। এমন অবস্থায় যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে অনেক দূরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ইরান। গাজায় নিহত আরও ৪০ ইসরায়েলি হামলায় গাজাজুড়ে কমপক্ষে আরও ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ভূখন্ডটির দক্ষিণে আল-মাওয়াসি এলাকায় একটি ক্যাফেতে বসে থাকা অবস্থায় লোকদের ওপর ড্রোন হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এতে ১০ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এর আগে এই এলাকাকে 'নিরাপদ অঞ্চল' হিসাবে ঘোষণা করেছিল। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এই ছিটমহলের দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসের পশ্চিমে অবস্থিত ছোট তাঁবুর ওই ক্যাফেতে ইসরায়েলি ড্রোন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সোমবার গভীর রাতে কমপক্ষে ১০ জন বেসামরিক লোক নিহত হন। এই হামলা এটিই প্রমাণ করছে, 'নিরাপদ এলাকা' সম্পর্কে ইসরায়েলি দাবিগুলো কেবলই মিথ্যা বর্ণনা ছাড়া আর কিছুই নয়। লোকজন ইন্টারনেট এবং বাইরের বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হতে এই কফি শপে যান। গভীর রাতে ড্রোন থেকে ওই ক্যাফেতে অন্তত দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়, যখন লোকজন সেটির ভেতরে ছিলেন। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, সে সময় এই ক্যাফটি মানুষে পূর্ণ ছিল। হামাসের সঙ্গে লড়াইয়ে ইসরায়েলের আরও চার সেনা নিহত অন্যদিকে, গাজার উত্তরাঞ্চলে হামাসের যোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে ইসরায়েলের আরও চার সেনা নিহত হয়েছে। সোমবারের লড়াইয়ে তারা নিহত হয়। মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে নিহতের বিষয়টি স্বীকার করেছে। তবে ঘটনার বিস্তারিত জানায়নি। আইডিএফ জানায়, উত্তর গাজা উপত্যকায় লড়াইয়ের সময় চার সেনা নিহত হয়েছে। তাদের মৃতু্যতে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৭৮৭ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে। যদিও হামাস দাবি করে, এই সংখ্যা আরও বেশি। ইসরায়েল কৌশলগত কারণে নিহতের প্রকৃত সত্য সামনে আনে না। উলেস্নখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলি হামলা গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর হামলার কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচু্যত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সবাই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।