ইসরায়েলি বাহিনী গাজা ও লেবাননে হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেছে তারা। গাজার মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় অবরুদ্ধ এলাকাটিতে ৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৫৩ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি ১৬১ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবারও লেবাননে হামলা হয়েছে। এতে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজা সিটির একটি স্কুলের শরণার্থী শিবিরে বৃহস্পতিবার বাস্তুচু্যত পরিবারগুলোর ওপর ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, হামাসের একটি ঘাঁটি লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে। সেটা আগে জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক উদ্দেশে বেসামরিক স্থাপনার ব্যবহার করার অভিযোগে এনেছে ইসরায়েল। তবে অভিযোগটি অস্বীকার করেছে হামাস।
এদিকে, গাজার উত্তরাঞ্চলে নতুন অভিযানের এক মাস পর বেইত লাহিয়ার দিকে ইসরায়েলি ট্যাংক অগ্রসর হওয়ার ঘটনায় কয়েক ডজন পরিবার সেখান থেকে সরে গেছে। বাস্তুচু্যত এক ব্যক্তি জানান, ড্রোনগুলো তাদের মাথার ওপরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। আহমেদ নামের এক ব্যক্তি জানান, জাবালিয়ায় প্রায় সব বাসিন্দাকে বাস্তুচু্যত করার পর এখন তারা সর্বত্র বোমা হামলা চালাচ্ছে। রাস্তায় ও বাড়ির ভেতরে মানুষকে হত্যা করছে। সবাইকে জোর করে বের করে দিচ্ছে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েল 'জাতিগত নিধনের' পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।
ফিলিস্তিনি চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ছিটমহলের আটটি শরণার্থী শিবিরের মধ্যে বৃহত্তম জাবালিয়ায় ইসরায়েলি গুলিতে ছয়জন এবং দক্ষিণ গাজার মিসর সীমান্তের কাছে বেইত লাহিয়ায় চারজন এবং রাফায় সাতজন নিহত হয়েছেন। পরে বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, জাবালিয়ায় মাভৌহ পরিবারের একটি ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কয়েক ডজন লোক নিহত ও আহত হয়েছেন। তবে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেনি। অবশ্য ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, জাবালিয়ায় তাদের সেনাবাহিনী গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৫০ জনকে হত্যা করেছে।
গাজার বাসিন্দারা বলছেন, গত ৫ অক্টোবর অভিযান শুরুর পর থেকে জাবালিয়া, বেইত লাহিয়া বা বেইত হানুনে কোনো ত্রাণ প্রবেশ করেনি। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হামাসকে মোকাবিলায় বুধবার তারা জাবালিয়া এবং এর নিকটবর্তী বেইত লাহিয়া থেকে বেসামরিক জনগণকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে সরে যাওয়া লোকজনকে আর ফিরতে দেওয়া হবে না বলে গণমাধ্যমে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা অস্বীকার করেছে তারা।
গাজা যুদ্ধে নিহত প্রায় ৭০ শতাংশই
নারী ও শিশু : জাতিসংঘ
জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় শুক্রবার বলেছে, গাজা যুদ্ধে নিহতদের যাচাই-বাছাইয়ে দেখা গেছে, তাদের প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। এই হত্যাযজ্ঞকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের মৌলিক নীতির ধারাবাহিক লঙ্ঘন বলে নিন্দা করেছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়।
এক বছর আগে গাজায় শুরু হওয়া হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রথম সাত মাসের মৃতের সংখ্যার হিসাব গণনা করেছে জাতিসংঘ। এই সাত মাস সময়ে মানবাধিকার কার্যালয় আট হাজার ১১৯টি মৃতদেহ যাচাই করেছে। এই সংখ্যা যুদ্ধের ১৩ মাসে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের দেওয়া ৪৩ হাজারের বেশি নিহতের সংখ্যার চেয়ে কম। তবে যুদ্ধে নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু বলে জাতিসংঘ যে তথ্য দিয়েছে, সেটি ফিলিস্তিনের দেওয়া বিবৃতির সঙ্গে মিলে গেছে।