আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির বেশিরভাগ মানুষ। 'আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন' পরিচালিত এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী মার্কিন প্রাপ্ত বয়স্কদের ৭৭ শতাংশ বলছেন, এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন তাদের জীবনে মানসিক চাপের একটি উলেস্নখযোগ্য উৎস। আর ৭৪ শতাংশের আশঙ্কা, নির্বাচনের ফল সহিংসতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। তথ্যসূত্র : সিনহুয়া, বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বিভাজনকারী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার সতর্ক করে বলেছেন, অপরজন নির্বাচিত হলে দেশটির ওপর সম্ভাব্য বিপর্যয়কর পরিণতি হতে পারে। অর্থনীতি, অভিবাসন এবং গর্ভপাতের অধিকারের মতো মূল বিষয়গুলোতেও ট্রাম্প ও কমলার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
মার্কিন অভিনেত্রী অ্যামারি ক্লেমসের আশঙ্কা, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা হ্যারিস বিজয়ী হলে ট্রাম্পের সমর্থকরা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারেন। তিনি বলেন, 'আমি খুবই উদ্বিগ্ন। কমলা বিজয়ী হলে রিপাবলিকান সমর্থকরা কেবল ওয়াশিংটনেই নয়, বরং আমেরিকার অন্য রাজ্যেও সহিংসতা চালাতে পারেন।'
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প ২০২০ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে হেরে যাওয়ার পর যেভাবে ভোট কারচুপির মিথ্যা অভিযোগ তুলেছিলেন, এবারও তেমন প্রস্তুতি রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
সহিংসতার শঙ্কায় বিভিন্ন রাজ্যে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে সহিংসতার আশঙ্কায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মঙ্গলবারের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এর ফলে সম্ভাব্য রাজনৈতিক সহিংসতা এড়াতে দেশজুড়ে নানা ব্যবস্থা নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।
বেশিরভাগ 'ব্যাটলগ্রাউন্ড' রাজ্যগুলোতেই সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নেভাডা অঙ্গরাজ্যে ২০২০ সালের নির্বাচনের পর ট্রাম্পের সমর্থকদের বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। চলতি বছর লাস ভেগাস ট্যাবুলেশন সেন্টারে বিক্ষোভের আশঙ্কায় নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। নেভাডার গভর্নর জো লম্বার্ডো গত সপ্তাহে জানিয়েছিলেন, যে কোনো চ্যালেঞ্জের সময়মতো প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে তিনি ন্যাশনাল গার্ডের ৬০ সদস্যের একটি 'ছোট দলকে' সক্রিয় করেছেন।
নেভাডার লাস ভেগাসে ভোট গণনার কেন্দ্র ঘিরে নিরাপত্তা প্রাচীর তৈরি করা হয়েছে। ২০২০ সালের নির্বাচনের সময় যেসব স্থানে ট্রাম্পের সমর্থকরা বিক্ষোভ করেছিলেন, এবার সেসব জায়গা বিশেষ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।
অ্যারিজোনার মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোর ক্ষেত্রে এই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। এরই মধ্যে অ্যারিজোনার মারিকোপা কাউন্টিতে ভোট গণনা কেন্দ্রের চারপাশে ধাতব বেড়া স্থাপন করা হয়েছে। অ্যারিজোনা কাউন্টির শেরিফ রাস স্কিনার বলেন, সহিংসতার আশঙ্কায় তার দপ্তর উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ভোটকেন্দ্রের চারপাশে পর্যবেক্ষণ চালাতে ড্রোন মোতায়েন করা হয়েছে। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সামলাতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে স্নাইপারসহ বিশেষ বাহিনী।
বিশেষ করে, ভোটের পরবর্তী দিনগুলোয় পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠার আশঙ্কা করছে প্রশাসন। এ কারণে ভোট গণনার পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করবে এবং যে কোনো অপরাধমূলক কর্মকান্ডে 'জিরো টলারেন্স (শূন্য সহনশীলতা) নীতি প্রয়োগ করা হবে।
এদিকে, অ্যারিজোনায় প্রার্থনা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত অনেক স্কুল ও চার্চ ভবন এবারের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভোটের সময় সহিংসতা রোধে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতা ও ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠীগুলো জনগণের মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।
মিশিগানের ডেট্রয়েটে ভোট গণনা কেন্দ্রের আশপাশে মেটাল ডিটেক্টর এবং পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, ভোট গণনা চলাকালে সহিংসতার ঘটনা এড়াতে পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে তারা। ২০২০ সালে ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্য মিশিগানের ডাউনটাউন ডেট্রয়েট কনভেনশন হল ঘিরে ফেলেছিল ট্রাম্পের সমর্থকরা। দ্বিতীয় ডাকযোগে আসা ব্যালটের গণনা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হলের জানালাগুলোয় তারা ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। এবার সাইকেল পার্কিং থেকে শুরু করে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে।