প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আজ

নতুন ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে আমেরিকা

কমলা নাকি ট্রাম্প- নির্ধারণ করবে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলো

প্রকাশ | ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
নতুন ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশ আমেরিকা। আজ (মঙ্গলবার) দেশটিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস নাকি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী চার বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট হবেন, সেটাই নির্ধারণ করবেন মার্কিন ভোটাররা। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোর ৬টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টায়) ভোটগ্রহণ শুরু হবে। চলবে মধ্যরাত পর্যন্ত। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা, এএফপি এবারের নির্বাচনে কে হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট, অর্থাৎ শেষ হাসি হাসবেনই বা কে, তা নিয়ে জোর গুঞ্জন চলছে চারদিকে। সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে এই ভোটের দিকে। বিভিন্ন জরিপ বলছে, এবারের নির্বাচন হবে ইতিহাসের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এবারের নির্বাচনে চমক দেখিয়ে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হবেন? নাকি ইতিহাস সৃষ্টি করে ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিস প্রথম মার্কিন নারী প্রেসিডেন্ট হবেন? এর উত্তর নির্ধারণ হতে পারে কিছু রাজ্যের ফলে। এগুলো 'সুইং স্টেট' বা দোদুল্যমান রাজ্য হিসেবে পরিচিত। এ কারণে আমেরিকার ৫০টি অঙ্গরাজ্যে একসঙ্গে ভোট হলেও মূলত সবারই নজর থাকে সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর দিকে। দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটের ফলের ওপরই নির্ভর করবে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়-পরাজয়। এরই মধ্যে আট কোটির বেশি আগাম ভোট পড়েছে। 'অ্যাটলাস ইন্টেল' পরিচালিত জরিপের তথ্য বলছে, সারাদেশে জনপ্রিয়তায় ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা এগিয়ে থাকলেও সব দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে কিছুটা এগিয়ে আছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। জরিপে প্রায় ৪৯ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেবেন। সবশেষ জরিপ অনুযায়ী, দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে ডেমোক্রেট কমলা হ্যারিসের চেয়ে এক দশমিক আট শতাংশ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। নভেম্বরের প্রথম দুই দিনে পরিচালিত এই জরিপে অংশ নেন আমেরিকার আড়াই হাজার ভোটার। অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন নারী। দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে চালানো আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাডা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিনে জয় পাবেন রিপাবলিকানরা। জরিপে অ্যারিজোনায় ট্রাম্পের পক্ষে ভোট পড়েছে ৫১ দশমিক ৯ শতাংশ। অপরদিকে, কমলার পক্ষে পড়েছে ৪৫ দশমিক এক শতাংশ ভোট। নেভাডার জনগণ কাকে ভোট দেবেন জানতে চাইলে ৫১ দশমিক চার শতাংশ ভোটার ট্রাম্পকে পছন্দ করছেন এবং ৪৫ দশমিক ৯ শতাংশ ভোটার কমলা হ্যারিসকে ভোট দিয়েছেন। নর্থ ক্যারোলাইনায় ট্রাম্প ৫০ দশমিক চার শতাংশ ভোট পেয়েছেন এবং কমলা পেয়েছেন ৪৬ দশমিক আট শতাংশ ভোট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল নির্ধারণে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে দোদুল্যমান অঙ্গগুলো। এসব রাজ্যে প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় এবং সেগুলোর ফল আগে থেকে অনুমান করা অনেক কঠিন। এবার সাতটি অঙ্গরাজ্যকে 'সুইং' বা দোদুল্যমান বলা হচ্ছে। সেগুলো হলো- অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাডা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিন। হোয়াইট হাউসে জয়ী হওয়ার জন্য কে ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট পাবেন, স্টো নির্ধারণ করবে এই সাতটি অঙ্গরাজ্য। এই অঙ্গরাজ্যগুলোর মোট ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট সংখ্যা ৯৩। নির্বাচনের জটিল যত হিসাব-নিকাশ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে প্রধান ভুল ধারণাগুলোর একটি হলো- এটা দেশটির জাতীয় নির্বাচন। কিন্তু আসলে তা নয়, এই নির্বাচন মূলত ৫১টি নির্বাচনের সমন্বয়। এর মধ্যে ৫০টি দেশটির অঙ্গরাজ্যে। অপরটি ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ায়। এতেও আবার কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। পুরো বিষয়টি স্বতন্ত্র এবং বেশ জটিলও বটে। প্রতিটি রাজ্য মূলত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেওয়ার যোগ্য হবেন, তাকে নির্বাচিত করে। সব সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে ১৮ বছরের বেশি বয়সি যে কেউ এই যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন। এটা সংবিধান স্বীকৃত। উদাহরণস্বরূপ, দোষী সাব্যস্ত অপরাধীরাও কয়েকটি রাজ্যে এই ভোট দিতে পারেন। একজনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার জন্য জাতীয়ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের ভোটে জয়ী হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ভোটাররা ভোট দিয়ে যাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার ক্ষমতা দেন, মূলত তারাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন। তাদের বলা হয় 'ইলেক্টরস'। ইলেক্টোরাল কলেজের হিসাবটাও আবার বেশ জটিল। মার্কিন কংগ্রেসের দুটি কক্ষ। একটি নিম্নকক্ষ বা প্রতিনিধি পরিষদ। অপরটি উচ্চকক্ষ বা সিনেট। প্রতি রাজ্যে দুইজন করে সিনেটর থাকেন। জনসংখ্যার অনুপাতে থাকে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য। এই প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য এবং সিনেটরের সংখ্যা অনুযায়ী কোন্‌ রাজ্যে কতটি ইলেক্টোরাল কলেজ হবে, সেটা নির্ধারণ করা হয়।