রোববার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১
আমেরিকায় নির্বাচন

ট্রাম্প আগাম বিজয় দাবি করলেই ব্যবস্থা

আগের মতো তিনি মিথ্যাভাবে নিজেকে জয়ী ঘোষণা করতে পারেন এমন আশঙ্কা থাকছেই সহিংসতার আশঙ্কায় ওয়াশিংটনে সেনা মোতায়েন হতে পারে
যাযাদি ডেস্ক
  ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আর দুদিন বাদেই আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তবে অনেকেই আগাম ভোট দিচ্ছেন। শুক্রবার পর্যন্ত পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে আগাম ভোট পড়েছে ছয় কোটির বেশি। আগাম ভোট দেওয়ার লম্বা এই লাইনের ছবিটি শুক্রবার নর্থ ক্যারোলিনার ডিউক ইউনিভার্সিটির কেন্দ্র থেকে তোলা -রয়টার্স অনলাইন

আর মাত্র দুদিন পর (৫ নভেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কিন্তু ২০২০ সালের মতো এবারের নির্বাচনেও রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি আগাম বিজয় দাবি করেন, তাহলে সেটি মোকাবিলা করার উপায় প্রস্তুত করছেন ডেমোক্রেটরা। গত বুধবার 'এবিসি নিউজে' দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কমলা হ্যারিস বলেছিলেন, 'ট্রাম্প যদি গণমাধ্যম ব্যবহার করে মার্কিনিদের ভুলভাল বোঝানোর চেষ্টা করেন, তাহলে তা ঠেকাতে আমরা প্রস্তুত আছি।' তথ্যসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি

ট্রাম্প চলতি সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নির্বাচনের দিন জয় ঘোষণা করতে সক্ষম হবেন বলে আশাবাদী তিনি। কিন্তু তার বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলের জন্য কয়েকদিন পর্যন্ত লাগতে পারে। বিশেষ করে, গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রগুলোতে যদি পুনরায় ভোট গণনার প্রয়োজন পড়ে।

মার্কিন নির্বাচনের পর যারা ভোট গণনার দায়িত্বে থাকেন, তারা গণনা শেষে ফল নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কাছে তুলে দেন। এরপর কর্মকর্তারা দেশটির প্রধান মিডিয়া আউটলেটগুলোতে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন। কিন্তু নির্বাচনী ফলের আগে কেউ যদি নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করে থাকেন, তাহলে সেটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত হয়ে পড়ে। ট্রাম্প এমন কান্ড করলে তাকে ঠেকাতে ডেমোক্রেটরা কী প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন, সে বিষয়ে ওই সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত কিছু জানাননি কমলা। তবে ডেমোক্রেটিক পার্টির এবং কমলা হ্যারিসের প্রচারণা শিবিরের ছয়জন কর্মকর্তা বলেছেন, যদি ট্রাম্প ফল ঘোষণার আগেই নিজেকে জয়ী ঘোষণা করেন, তাহলে আমরা এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করব। কমলা হ্যারিসের দলের আশঙ্কা, ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং টেলিভিশনকে কাজে লাগিয়ে ভোট গণনার আগেই নিজেকে জয়ী ঘোষণা করতে পারেন। ডেমোক্রেটিক পার্টির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, 'ট্রাম্প তার জয়ের অসত্য দাবি করার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা টেলিভিশনের মাধ্যমে সত্য প্রচার করা শুরু করব। তার অযৌক্তিক দাবি খন্ডানোর মতো জনমত গড়ে তুলব।' তিনি আরও বলেন, 'আমাদের এমন লোকজনের একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক রয়েছে; যারা ট্রাম্পের আগাম ঘোষণার বিরুদ্ধে তাদের প্রভাব ব্যবহার করতে পারেন।'

শুক্রবার কমলা হ্যারিসের প্রচার শিবিরের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, সব ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই মঙ্গলবার রাতে ট্রাম্প নিজেকে মিথ্যাভাবে বিজয়ী ঘোষণা করতে পারেন বলে তারা 'পুরোপুরি প্রত্যাশা' করছেন। তবে তিনি বলেন, ট্রাম্প আগেও এটা করেছেন এবং ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি যদি আবারও এটা করেন, তাহলে আবারও ব্যর্থ হবেন।

২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও আমেরিকার প্রথম সারির টেলিভিশন নেটওয়ার্কগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করার তিন দিন আগেই ভোটের দিনেই নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প। যদিও শেষ পর্যন্ত ডেমোক্রেট দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে হেরে যান তিনি। ওই নির্বাচনের ফল কখনই মেনে নেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্যাপক জালিয়াতির মাধ্যমে তার কাছ থেকে নির্বাচনী ফল ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রধান সহযোগী স্টিভ ব্যানন বলেছেন, 'নির্বাচনের দিন দ্রম্নত বিজয় ঘোষণা করা উচিত ট্রাম্পের। তিনি বলেন, তার (ট্রাম্পের) দাঁড়ানো উচিত। একই সঙ্গে তার বলা দরকার, আমি এটা জয় করেছি।' মঙ্গলবার একটি ফেডারেল কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পরপরই নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলার সময় এমন মন্তব্য করেন স্টিভ ব্যানন।

ট্রাম্পের প্রচার শিবির বলেছে, ভোটাভুটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব ভোটের জন্য লড়বেন রিপাবলিকান প্রার্থী। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণার আগেই ট্রাম্প আবারও বিজয় ঘোষণা করার পরিকল্পনা করছেন কি-না, এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব দেয়নি রিপাবলিকান প্রচার শিবির। তবে এরই মধ্যে পেনসিলভানিয়াতে ভোটার জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে নতুন করে ভোটের ফল উল্টে দেওয়ার যে আশঙ্কা তাকে নিয়ে, তাতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তিনি এটা শুধু পেনসিলভানিয়াতেই নয়, গুরুত্বপূর্ণ সুইং স্টেটগুলোতেই করতে পারেন।

সহিংসতার আশঙ্কায় ওয়াশিংটনে

সেনা মোতায়েন হতে পারে

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ওয়াশিংটন রাজ্যে সহিংসতার আশঙ্কায় ন্যাশনাল গার্ডকে প্রস্তুত রাখা হবে। শুক্রবার রাজ্যের গভর্নর জে ইনস্স্নি এ তথ্য জানিয়েছেন। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ওয়াশিংটনে ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের কাছে ধরাশায়ী হতে পারেন রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলতি সপ্তাহের শুরুতে এই রাজ্যে ব্যালট বাক্সে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল।

ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটির ইলেকশন ল্যাব অনুসারে, ওয়াশিংটনের ২০ লাখের বেশি ভোটার এরই মধ্যে আগাম ভোট দিয়েছেন। শুক্রবার তার ওয়েবসাইটে এক বার্তায় গভর্নর জে ইনস্স্নি বলেন, '২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত সহিংসতা বা অন্যান্য বেআইনি কার্যকলাপের সম্ভাব্যতা সম্পর্কিত সাধারণ, সুনির্দিষ্ট তথ্য এবং উদ্বেগের ভিত্তিতে আমি নিশ্চিত করতে চাই যে, আমরা প্রতিক্রিয়া জানাতে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত।' গভর্নর জানিয়েছেন, ভ্যাঙ্কুভার শহরের ব্যালট ফেলার বাক্সে ইনসেনডিয়ারি ডিভাইস ব্যবহার করে শত শত ব্যালট পেপার ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে