ইরানে ইসরায়েলের হামলা

পরিত্যক্ত পারমাণবিক গবেষণাগারে আঘাত

পারমাণবিক স্থাপনার কোনো ক্ষতি হয়নি : দাবি জাতিসংঘের ইরাকের আকাশসীমা ব্যবহার করেছে ইসরায়েল

প্রকাশ | ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইসরায়েল শনিবার ভোররাতে ইরানে যে প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে, তার মধ্যে দেশটির সাবেক একটি পারমাণবিক অস্ত্র গবেষণাগারও ছিল। পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ কর্মসূচির অংশ ছিল- এমন একটি পরিত্যক্ত ভবনে ইসরায়েলি বিমান আঘাত হানে বলে এক মার্কিন গবেষক জানিয়েছেন। এর পাশাপাশি তিনি ও আরেক গবেষক জানান, ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য কঠিন জ্বালানি মিশ্রণের জন্য ব্যবহার করা একটি স্থাপনায়ও আঘাত হেনেছে। শনিবার ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরান ও পশ্চিমাঞ্চলীয় দুটি প্রদেশের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ইসরায়েল প্রায় ১০০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে এ হামলা চালানোর দাবি করলেও চার সেনা নিহতের পাশাপাশি 'সীমিত ক্ষয়ক্ষতি' হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরান। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি বিমান হামলার পর ওই অঞ্চলের স্যাটেলাইট ছবিগুলোয় ইরানের ক্ষয়ক্ষতি পরিস্থিতির একটা ধারণা পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছিল। এরপর বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিগুলো পৃথকভাবে জাতিসংঘের সাবেক অস্ত্র পরিদর্শক ডেভিড অলব্রাইট ও ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সিএনএ-র সহযোগী গবেষণা বিশ্লেষক ডেকার এভেলেথের কাছে পৌঁছায়। এসব ছবি বিশ্লেষণ করে ইরানের কোন কোন স্থাপনা ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা মূল্যায়ন করেন তারা। তারা জানান, ইসরায়েল তেহরানের কাছে পার্চিনে ইরানের বিশাল সামরিক কমপেস্নক্সের কয়েকটি ভবনে হামলা চালিয়েছে। এভেলেথ জানান, তেহরানের কাছে খোজিরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রেও আঘাত হেনেছে। ইরান খোজিরের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রটির ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছে বলে জুলাইয়ে খবর প্রকাশ হয়েছিল। এভেলেথ বলেন, ইসরায়েলি হামলায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন সক্ষমতা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইসরায়েলি যুদ্ধ বিমানগুলো তেহরানের কাছে ও ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দুটি প্রদেশে ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ও অন্যান্য সামরিক এলাকায় আঘাত হেনেছে। ইরান ১ অক্টোবর ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে প্রায় ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। তার প্রতিশোধ নিতে শনিবার ইরানে পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েল। ইরানের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো ইলাম ও খুজেস্তান প্রদেশের সীমান্তে এবং তেহরানের চারপাশে থাকা রেডারগুলোতে আঘাত হানতে 'অতি হালকা বোমা' ব্যবহার করেছে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার কোনো ক্ষতি হয়নি : জাতিসংঘ ইরানের রাজধানী তেহরান, খুজেস্তান ও ইলাম প্রদেশে কয়েকটি ঘাঁটিতে ইসরায়েল যে হামলা করেছে, তাতে দেশটির পারমাণবিক স্থাপনার কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের পারমাণবিক শক্তি পর্যবেক্ষণ সংস্থার বরাত দিয়ে এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েলের 'মারাত্মক' বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি প্রভাবিত হয়নি। এদিকে, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষতি হয়নি। এ সময় তিনি পরমাণু এবং অন্যান্য তেজস্ক্রিয় পদার্থের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তাকে বিপন্ন করতে পারে এমন কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা এবং মার্কিন গোয়েন্দারা বলেছেন, ইরান ২০০৩ সালে এই কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছে। ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টার কথা অস্বীকার করেছে। এর আগে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) জানায়, তারা ইরানের 'সামরিক স্থাপনায় সুনির্দিষ্ট হামলা' চালিয়েছে। 'কয়েক মাস ধরে ইরানের ধারাবাহিক হামলার' জবাবে এ হামলা চালানো হয়েছে। আর ইরানের এয়ার ডিফেন্স ফোর্স এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তেহরান, খুজেস্তান ও ইলাম প্রদেশে কয়েকটি ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে। তারা বলেছে, এসব হামলাকে সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করা হয়েছে। তবে কিছু জায়গায় 'সীমিত ক্ষতি' হয়েছে। ইসরায়েল ইরাকের আকাশসীমা ব্যবহার করেছে এদিকে, তেহরান অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল ইরাকের আকাশসীমা ব্যবহার করে ইরানে হামলা চালিয়েছে। শনিবার ইরানে জাতিসংঘের মিশন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম 'এক্সে' দেওয়া এক পোস্টে জানায়, 'ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ইরাকের আকাশসীমা ব্যবহার করে প্রায় ৭০ মাইল দূরে ইরান সীমান্তের কাছাকাছি থেকে রেডার ও সামরিক ঘাঁটিগুলোতে আঘাত হানে।' জাতিসংঘ মিশন আরও জানায়, ইসরায়েলের এই আক্রমণের জন্য আমেরিকাকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। কারণ ইরাকি আকাশসীমা আমেরিকার সামরিক দখল, নিয়ন্ত্রণ ও কমান্ডের অধীন রয়েছে। আমেরিকা জানিয়েছে, তারা এ হামলার আগে ইসরায়েল থেকে খবর পেয়েছিল, তবে আক্রমণে সরাসরি জড়িত ছিল না। ইরাকের রাজনীতিবিদ ও মিলিশিয়া নেতা মুকতাদা আল-সদর ইরাকের সরকারকে 'ইসরায়েলের এই আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়ে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে দ্রম্নত প্রতিক্রিয়া জানানোর' আহ্বান জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ইরাক থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি।