আলোচনার ইঙ্গিত

গাজা যুদ্ধ বন্ধে আগ্রহী ইসরায়েল-হামাস

গাজার খান ইউনিসে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৫ ফিলিস্তিনি নিহত মৃতের সংখ্যা ছাড়িছে ৪২ হাজার ৮৪৭

প্রকাশ | ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
গাজায় ইসরায়েলি হামলা -ফাইল ছবি
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা শুরুতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল ও হামাস। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের গোয়েন্দা প্রধান গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত আছেন। অন্যদিকে, হামাস যুদ্ধবিরতির চুক্তি হলে যুদ্ধ থামানোর প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে। তথ্যসূত্র : এএফপি, বিবিসি, আল-জাজিরা, রয়টার্স এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধ বন্ধের প্রচেষ্টায় কিছু ইতিবাচক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। অতীতে বিভিন্ন চেষ্টা ব্যর্থ হলেও, ইসরায়েল ও হামাস এখন আলোচনা শুরু করার প্রতি আগ্রহী। গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হাতে হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হওয়ার পর আমেরিকা জানিয়েছে, এই ঘটনা চুক্তির দিকে যাওয়ার একটি সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের দোহাভিত্তিক একটি প্রতিনিধিদল কায়রোতে মিসরীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করেছে। তিনি আরও জানান, হামাস যুদ্ধ বন্ধের জন্য প্রস্তুত, তবে ইসরায়েলকে কিছু শর্ত মানতে হবে- যেমন গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার, বাস্তুচু্যত ফিলিস্তিনিদের ফেরার সুযোগ দেওয়া, বন্দিবিনিময় চুক্তিতে সম্মত হওয়া এবং গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কায়রোর আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, তিনি জিম্মিদের মুক্তির জন্য মিসরের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাচ্ছেন। বৈঠকের পর, তিনি মোসাদের প্রধানকে কাতারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে আলোচনা আরও এগিয়ে নেওয়া যায়। এ ছাড়া আমেরিকা ও কাতার জানিয়েছে, দোহায় গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা আবার শুরু হবে। খান ইউনিস অভিযানে ৩৮ জন নিহত এদিকে, গাজার খান ইউনিসে শুক্রবার ভয়াবহ অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৪ জনই শিশু। ফলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৮৪৭ জনে। আহত হয়েছেন এক লাখের বেশি। তাছাড়া গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, উত্তর গাজার বেশকিছু আবাসিক ভবন বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। এটিকে গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। হামলার পর যেসব ছবি বেরিয়ে আসছে, তা অনেক বেশি ভয়ংকর। গাজার নাসের হাসপাতালে মাটিতে প্রচুর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। অনেক পরিবারের সদস্যকে মরদেহ দাফনের জন্য নিয়ে যেতে দেখা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলার আগে আগে কোনো সতর্কবার্তা দেয়নি ইসরায়েল। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন। উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকাজুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো ১০ হাজারের বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। এদিকে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাদের অভিযানের সর্বশেষ খবর জানিয়ে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছে. 'গাজার দক্ষিণাঞ্চলে আকাশ ও স্থল থেকে (হামলা চালিয়ে) অনেক সন্ত্রাসীকে নিকেশ করা হয়েছে।' ইসরাইলি বাহিনী গাজাজুড়ে অভিযান অব্যাহত রাখলেও সামরিক প্রতিবেদনে অঞ্চলটির উত্তরে হামাস 'জঙ্গিরা' আবার সংগঠিত হচ্ছে বলে উলেস্নখ করায় সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় এখানে বিমান ও স্থল হামলা জোরদার করেছে। ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৫ ফিলিস্তিনি নিহত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৫ জন নিহত এবং ১৩২ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকায় গত ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৪২ হাজার ৮৪৭ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন এক লাখ ৫৪৪ জন ফিলিস্তিনি। উলেস্নখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইসলামিক জিহাদ। গাজার ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের নজিরবিহীন হামলা হামলায় কমপক্ষে এক হাজার ২০০ জন নিহত হয় এবং দুই শতাধিক মানুষকে জিম্মি হিসেবে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে গাজা যুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল। এরপর থেকে গাজায় টানা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজাবাসী। মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচু্যত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সবাই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।