ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
বৈরুতে রাতভর হামলা ইসরায়েলের
হিজবুলস্নাহর দেড় শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে ৭০ ইসরায়েলি সেনা নিহত :হিজবুলস্নাহ 'বৈরুতে হাসপাতালের নিচে হিজবুলস্নাহর বাঙ্কারের প্রমাণ মেলেনি'
প্রকাশ | ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপশহরগুলোতে রাতভর তান্ডব চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের ভয়াবহ বিমান হামলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। স্থানীয় সময় রাত ৯টা থেকে শুরু হওয়া এই হামলায় হরাত হরেইক ও লাইলাকি অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। সাধারণত, ইসরায়েলি বাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হামলার আগে সতর্কবার্তা দিয়ে থাকে, যাতে স্থানীয় বাসিন্দারা স্থান ত্যাগ করতে পারে। তবে বুধবার রাতের প্রথম তিনটি হামলার ক্ষেত্রে কোনো পূর্বাভাস বা সতর্কতা দেওয়া হয়নি। তথ্যসূত্র : এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈরুতে রাতভর ইসরায়েলের হামলায় অন্তত একজন নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন। লাইলাকিতে ছয়টি ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আগুন লাগার পর তা অন্যান্য ভবনেও ছড়িয়ে পড়ে।
এক মাস আগেও দক্ষিণ বৈরুতের দাহিয়ে ছিল একটি জনবহুল এলাকা। কিন্তু ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর এখন অনেকটাই জনশূন্য হয়ে পড়েছে এলাকাটি। একের পর এক হামলার মাধ্যমে বাসিন্দাদের অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য করা হয়েছে। এই অঞ্চলে হিজবুলস্নাহর উলেস্নখযোগ্য উপস্থিতির কারণে হামলাগুলো পরিচালিত হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই হামলা বৈরুতের পরিস্থিতিকে আরও জটিল ও মানবিক সংকটকে তীব্র করেছে।
হিজবুলস্নাহর দেড় শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলের হামলা
এদিকে, ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, লেবাননে হিজবুলস্নাহর দেড় শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে। এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী দাবি করেছে, তারা লেবাননে স্থল অভিযান এবং বিমান হামলা চালিয়ে ডজনখানেক 'সন্ত্রাসী'কে হত্যা করেছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের যুদ্ধবিমান লেবাননে রকেট লঞ্চার, সামরিক ভবন, সামরিক অবকাঠামোসহ হিজবুলস্নাহর দেড় শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। বিমান হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী স্কোয়াডকে নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে বলেও উলেস্নখ করা হয়।
৭০ ইসরায়েলি সেনাকে হত্যার দাবি হিজবুলস্নাহর
এদিকে, লেবাননে অভিযানরত ইসরায়েলি বাহিনীর ৭০ জন সেনাকে হত্যার দাবি করেছে হিজবুলস্নাহ। বুধবার এক বিবৃতিতে এই দাবি জানিয়েছে গোষ্ঠীটি। ঠিক কত দিনে এই সেনারা নিহত হয়েছে, তা অবশ্য এই বিবৃতিতে উলেস্নখ করেনি গোষ্ঠীটি। তবে গত সপ্তাহে এক বিবৃতিতে হিজবুলস্নাহর পক্ষ থেকে ৫৫ জন ইসরায়েলি সেনা নিহতের দাবি করা হয়েছিল। ফলে এই মুহূর্তে এটি স্পষ্ট নয় যে, গত কয়েক দিনে গোষ্ঠীটি ৭০ জন ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা করেছে, না কি ১৫ জনকে হত্যা করেছে। ৫৫'র সঙ্গে ১৫ যোগ করলে যোগফল ৭০ হয়।
অবশ্য, এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, লেবাননে অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৫০ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ জন নিহত হয়েছে লেবাননে সামরিক অভিযান চালানোর সময়, বাকি ৩০ জনের মৃতু্য হয়েছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তর ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনাকে লক্ষ্য করে হিজবুলস্নাহ বাহিনীর ছোড়া রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে।
ইসরায়েল ও লেবানন প্রতিবেশী দেশ। ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের অপর পাশেই লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল। হিজবুলস্নাহর প্রধান ঘাঁটি এবং সামরিক স্থাপনাগুলোর অবস্থানও ইসরায়েলের সীমান্তঘেঁষা দক্ষিণ লেবাননের গ্রামগুলোতে।
ইরানের সমর্থনপুষ্ট হিজবুলস্নাহ সামরিক স্থাপনা, যোদ্ধার সংখ্যা এবং মজুতকৃত অস্ত্রের পরিমাণের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম সশস্ত্র ইসলামি রাজনৈতিক গোষ্ঠী। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই গোষ্ঠীটি শুরু থেকেই ইসরায়েলকে ধ্বংসের জন্য প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ। লেবাননের সরকার কিংবা সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে হিজবুলস্নাহর সরাসরি কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই, তবে আড়ালে থেকে দেশটির ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে গোষ্ঠীটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন সময় উত্তর ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছে হিজবুলস্নাহ, তবে সেই হামলার মাত্রা ব্যাপকভাবে গোষ্ঠীটি বাড়িয়েছে ২০২৩ সালে গাজায় হামাস এবং ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ বাধার পর থেকে।
'বৈরুতে হাসপাতালের নিচে হিজবুলস্নাহর
বাঙ্কারের প্রমাণ মেলেনি'
বৈরুতের সাহেল জেনারেল হাসপাতালের নিচে হিজবুলস্নাহর অর্থ ও স্বর্ণ জমা রাখার ভূগর্ভস্থ কক্ষ থাকার কোনো প্রমাণ নেই বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন। ওই হাসপাতালের নিচে হিজবুলস্নাহর অর্থ জমার বাঙ্কার রয়েছে বলে ইসরায়েল সম্প্রতি যে দাবি করেছে, তা প্রত্যাখ্যান করে এ কথা বলেন তিনি।
বুধবার ইতালির রোমে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অস্টিন বলেন, 'আমরা এখন পর্যন্ত এমন কোনো (গোপন বাঙ্কারের) প্রমাণ পাইনি। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ আসলে সেখানে কী দেখতে পেয়েছে, সে বিষয়ে আরও নিশ্চিত হতে আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করছি।'
এদিকে, ইসরায়েলের দাবির বিষয়ে সাহেল হাসপাতালের পরিচালক ফাদি আলামেহ বলেছেন, ইসরায়েলের দাবি মিথ্যা এবং নিন্দনীয়। বৈরুতের দক্ষিণ দাহিয়েহ শহরতলিতে অবস্থিত হাসপাতালটিকে মঙ্গলবার ইসরায়েলি বাহিনী লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার আশঙ্কায় খালি করা হয়েছিল। ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, গত মাসে ইসরায়েলের হাতে নিহত হিজবুলস্নাহ নেতা হাসান নাসরুলস্নাহ সাহেল হাসপাতালের অধীনে বাঙ্কারটি উদ্বোধন করেন। এখানে দীর্ঘ দিন থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
উলেস্নখ্য, গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করে হিজবুলস্নাহ। পাল্টা জবাব দেওয়া শুরু করে ইসরায়েলও। গত এক বছরে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে লেবাননে প্রাণ হারিয়েছেন দুই হাজারের বেশি মানুষ। এই নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। তবে আইডিএফের দাবি, এই নিহতদের মধ্যে অন্তত ৯৪০ জন হিজবুলস্নাহ কমান্ডার ও যোদ্ধা রয়েছে।