ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার একটি স্কুলে আবারও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। বৃহস্পতিবার এই হামলা চালানো হয় বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শুধু শুহাদা আল-নুসিরাত স্কুলেই ১৯৬ বার বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সর্বশেষ এই হামলায় এখন পর্যন্ত নারীসহ ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত ৯ জন শিশু রয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৫২ ফিলিস্তিনি। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, এএফপি
গাজার মিডিয়া অফিস বলছে, দখলদার সেনাবাহিনী জানত, স্কুলে হাজার হাজার বাস্তুচু্যত মানুষ রয়েছেন এবং এদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী। এরা সবাই ইসরায়েলি হামলায় তাদের বাড়ি এবং আবাসিক এলাকা থেকে বাস্তুচু্যত হয়েছেন। তারপরও ইসরায়েলি বাহিনী এই নৃশংস হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, ওই স্কুলটি হামাসের 'কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার' ছিল। আইডিএফ এক বিবৃতিতে বলেছে, এই কমপেস্নক্সটি হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এবং ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা ও তা পরিচালনা করতে ব্যবহার করছিল। 'সুনির্দিষ্ট বুদ্ধিমত্তার' ভিত্তিতে সেনারা ওই স্কুলে আঘাত করেছে। তবে তারা নিজেদের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। ইসরায়েলি বাহিনী আরও দাবি করেছে, তারা বেসামরিকদের ক্ষতি কমিয়ে আনতে 'অনেক পদক্ষেপ' নিয়েছে।
গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলেরট্যাংক হামলা, নিহত ৫৫
এদিকে, গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ট্যাংক হামলায় কমপক্ষে ৫৫ জন নিহত হয়েছেন। বুধবার এই হামলার ঘটনা ঘটে। ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনি ছিটমহলের উত্তরাঞ্চল, আশপাশের হাসপাতাল ও শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্র ঘেরাও জোরদার করেছে। আশপাশের বাসিন্দাদের দক্ষিণের দিকে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, তীব্র বোমা হামলা, গণবাস্তুচু্যতি ও প্রবেশাধিকারের অভাবের কারণে তারা উত্তর গাজায় পোলিও টিকাদান কর্মসূচি স্থগিত রেখেছে।
হামাস যোদ্ধাদের পুনরায় সংগঠিত হওয়া ঠেকাতে ইসরায়েলি বাহিনী প্রায় তিন সপ্তাহ আগে উত্তরাঞ্চলে অভিযান শুরু করে। এক সপ্তাহ আগে হামাস প্রধান ইয়াহিয়া আল-সিনওয়ার নিহত হওয়ার পর থেকে অভিযান জোরদার হয়েছে। আমেরিকাসহ ইসরায়েলের মিত্রদের ধারণা ছিল, সিনওয়ারের মৃতু্যর পর যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা করবে ইসরায়েল। তবে এখন পর্যন্ত, ইসরায়েলি বাহিনী তাদের আক্রমণ আরও তীব্রতর করেছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চল এখন তাদের দখলে।
ইসরায়েল বলেছে, হামাস যোদ্ধারা গাজায় পুনরায় যাতে সংগঠিত না হতে পারে, তাই তারা তাদের অবস্থান জোরদার করেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গত শুক্রবার ঘোষণা করেছে, তারা গাজার উত্তর প্রান্তে জাবালিয়ায় আরেকটি সেনা ইউনিট পাঠিয়েছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সেনারা আশ্রয়কেন্দ্র ঘেরাও করে বাস্তুচু্যত লোকজনকে সরে যেতে বাধ্য করেছে। এমনকি তারা অনেককে আটক করেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন করে অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৫০ জন নিহত হয়েছে।
গাজার সিভিল ইমার্জেন্সি সার্ভিস জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামাসের কিছু কর্মীকে স্থান ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর গাজার উত্তরাঞ্চলে তাদের তিন উদ্ধারকর্মী আহত হয়েছেন। পরে তারা জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী পাঁচ কর্মীকে আটক করার পর উত্তর গাজায় তাদের সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। সিভিল ইমার্জেন্সি সার্ভিস বলেছে, 'গাজার উত্তরাঞ্চলে আমাদের কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে এবং বর্তমানে পরিস্থিতি আমাদের হাতের বাইরে। এমনকি সেখানকার নাগরিকরা এখন সব ধরনের মানবিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত।'