রাজধানী বৈরুত এবং লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে আরও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হিজবুলস্নাহকে সমর্থন জোগায় এবার এমন একটি ব্যাংকের কয়েকটি শাখায়ও হামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে বৈরুতের দক্ষিণে দাহিয়েহ শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। বেক্কা উপত্যকা ও লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের মতো ওই এলাকাটিও হিজবুলস্নাহ নিয়ন্ত্রণ করে। তবে, এসব হামলায় কেউ হতাহত হয়েছে কি-না তা জানা যায়নি। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা, এএফপি
এর আগে লেবাননের ২৫টি এলাকা, যার ১৪টিই রাজধানী বৈরুতে, সেসব এলাকায় রাতভর হামলা হতে পারে বলে সেখানকার বাসিন্দাদের ইসরায়েল আগেই সতর্ক করে দিয়েছিল। ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স বলেছে, হিজবুলস্নাহকে সমর্থন করে, এমন ব্যাংক ও অন্য আর্থিক অবকাঠামোগুলো ইসরায়েলি আগ্রাসনআইডিএফ মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি সতর্ক করে বলেন, 'হিজবুলস্নাহর সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থদান করে, এমন প্রতিষ্ঠানের কাছে যারা রয়েছেন, তাদের অবিলম্বে সেখান থেকে সরে যেতে হবে। আগামী কয়েক ঘণ্টায় কয়েকটি টার্গেটে হামলা চালানো হবে এবং আরও কিছু জায়গায় রাতভর হামলা হবে।' ইসরায়েলের মুখপাত্র বলেন, 'বেসামরিক প্রতিষ্ঠান, অ্যাসোসিয়েশন ও এনজিওগুলোকে ব্যবহার করে ইরান কীভাবে হিজবুলস্নাহর সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থের জোগান দেয়, আগামী কয়েক দিনে সেটি আমরা প্রকাশ করব।'
সর্বশেষ লেবাননের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা 'এনএনএ'র খবরে বলা হয়েছে, পূর্ব বেক্কা ভ্যালিসহ বিভিন্ন জায়গায় 'ব্যাংক আল-কার্দ আল-হাসান অ্যাসোসিয়েশন'র বিভিন্ন শাখায় হামলা হয়েছে। বৈরুতের রফিক হারিরি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের কাছেও ব্যাংকটির একটি শাখায় হামলা হয়েছে। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, বিমানবন্দরের কাছে বিস্ফোরণস্থল থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে।
লেবাননজুড়ে ওই ব্যাংকটির ৩০টির বেশি শাখা আছে। এর মধ্যে ১৫টি আছে বৈরুতের জনবহুল এলাকায়। ইসরায়েল ওই ব্যাংকটির বিরুদ্ধে হিজবুলস্নাহকে অর্থায়নের অভিযোগ এনেছে। আমেরিকাও বলছে, হিজবুলস্নাহর আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকটি ব্যবহৃত হচ্ছে।
ইউনিফিলের ওয়াচ টাওয়ার গুঁড়িয়ে
দিয়েছে ইসরায়েল : জাতিসংঘ
দক্ষিণ লেবাননে জাতিসংঘের একটি ওয়াচ টাওয়ার ও ঘরের বেড়া ভেঙে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। রোববার লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী (ইউএনআইএফআইএল) জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি বুলডোজার তাদের অবস্থান ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করেছে। লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী 'ইউনিফিল' নামে পরিচিত। এর আগেও ইউনিফিলের ওয়াচ টাওয়ারে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী। তখন থেকেই ইসরায়েলি বাহিনী ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষকে জাতিসংঘের কর্মী ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের অবস্থানগুলোর লঙ্ঘনকে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করা হয় বলে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে ইউনিফিল।
সম্প্রতি ইসরায়েল দাবি করেছে, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর অবস্থানের কাছ থেকে ইসরায়েলের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। এই অভিযোগ হিজবুলস্নাহ অস্বীকার করেছে।
ইসরাইলের হারমাস-৯০০ ড্রোন ভূপাতিত করল হিজবুলস্নাহ
অন্যদিকে, গাজা উপত্যকা ও লেবাননের বিরুদ্ধে ইসরাইলের নৃশংস হামলার প্রতিশোধ নিতে হিজবুলস্নাহ বিভিন্ন ইসরাইলি লক্ষ্যবস্তুতে আবারও অভিযান চালিয়েছে। হিজবুলস্নাহ রোববার রাতে এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা লেবাননের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশকারী একটি ইসরাইলি হারমাস-৯০০ ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে। সেই সঙ্গে তাদের হামলার ফলে আরেকটি ড্রোন ইসরাইলে পালিয়ে গেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, রোববার স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৪টায় হিজবুলস্নাহর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুলিতে একটি হার্মাস-৯০০ ড্রোন বিধ্বস্ত হয়েছে। অপর আরেকটি ড্রোন লেবাননের আকাশসীমা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে।
এদিকে, হিজবুলস্নাহ রোববার বিকাল ৪টার দিকে হাইফার 'তিরা কারমেল' সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে একঝাঁক অত্যাধুনিক রকেট নিক্ষেপ করেছে। সেইসঙ্গে ইসরাইলের স্যামসন সামরিক ঘাঁটির কমান্ড ও সরবরাহ কেন্দ্র, বেরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, মারকাবা শহর, কালা মালভূমি এবং হুনিন ব্যারাকে বিভিন্ন ধরনের রকেট নিক্ষেপ করেছে হিজবুলস্নাহ। এসব হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটলেও সঠিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি ইসরাইল।
ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী থাড মোতায়েন
মার্কিন সামরিক বাহিনী তাদের উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থা- থাড মোতায়েন করেছে ইসরায়েলে। সোমবার ইউক্রেনে সফরের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন জানান, দ্রম্নতই এটিকে ইসরায়েলে পাঠাতে সক্ষম হয়েছে তারা।
থাড বা টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স সিস্টেম মার্কিন সামরিক বাহিনীর স্তরভিত্তিক বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি ইসরায়েলের শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।
অস্টিন বলেন, থাড সিস্টেমটি ইসরায়েলে স্থাপন করা হয়েছে। তবে এটি কার্যক্রম শুরু করেছে কিনা তা জানাননি তিনি। বলেছেন, 'এটি খুব দ্রম্নত কার্যকর করতে পারি। আমরা আমাদের প্রত্যাশার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোচ্ছি।' মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, প্রায় ১০০ মার্কিন সেনার সঙ্গে থাড মোতায়েনের উদ্দেশ্য ইসরায়েলকে রক্ষা করা।