ফিলিস্তিনের গাজায় জনবহুল এলাকায় আবারও বড় ধরনের হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরায়েল। এবার হামলাটি চলে গাজার বেইত লাহিয়ার একটি আবাসিক কমপেস্নক্সে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার উত্তর গাজার বেত লাহিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৮৭ জন নিহত হয়েছেন। শনিবার গভীর রাতে বিমান থেকে বোমাবর্ষণের পর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ইসরায়েল বলেছে, তারা হতাহতের খবর যাচাই করে দেখছে। তবে তারা হামাসের দেওয়া তথ্যকে 'অতিরঞ্জিত' উলেস্নখ করে বলেছে, এর সঙ্গে তাদের সামরিক বাহিনীর তথ্যের মিল নেই। শহরের ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে ইসরায়েলি সেনাদের ব্যাপক গোলাগুলির খবর প্রকাশের পরই সর্বশেষ বিমান হামলা চালানো হয়। তথ্যসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, রয়টার্স
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, হামলায় ওই অঞ্চলের যোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বেইত লাহিয়ায় উদ্ধার তৎপরতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ছিটমহলের উত্তরে যোগাযোগ বন্ধ এবং রাস্তার প্রতিবন্ধকতার কারণে উদ্ধার প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে। এলাকাটিতে ১৬ দিনের ইসরায়েলি সামরিক অবরোধের কারণে বাসিন্দারা খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেইত লাহিয়া শহরটি গাজা উপত্যকার উত্তরে জাবালিয়া এবং বেইত হানুনের কাছাকাছি অবস্থিত। তিনটি শহরই ইসরায়েলি আক্রমণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হামাস পরিচালিত সরকারের মিডিয়া অফিস বলছে, জনবহুল আবাসিক এলাকায় বোমা হামলা করা হয়েছে এবং এতে ৮৭ জন মারা গেছেন। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সিও একই রকম তথ্য দিয়েছে। ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা 'ওয়াফা' জানিয়েছে, পুরো আবাসিক কমপেস্নক্সটিই হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ জানিয়েছে, তারা 'হামাসের সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে তারা সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নিয়েছে'।
ইসরায়েল চলতি অক্টোবরের শুরু থেকে গাজার উত্তরাঞ্চলে নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু করেছে। তারা বলছে, হামাস ওই এলাকায় পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এই হামাস নির্মূলের নামে ইসরায়েলি বাহিনী ঘনবসতিপূর্ণ জাবালিয়া এলাকায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ করেছে। এর মধ্যে একটি শরণার্থী শিবিরও রয়েছে।
সাহায্য সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ওই এলাকায় কোনো সহায়তা আসেনি। ইসরায়েলের নিজেদের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম সেপ্টেম্বরের তুলনায় সার্বিকভাবে ধসে পড়েছে। জাতিসংঘের শীর্ষ মানবিক সহায়তা কর্মকর্তা জয়সে এমসুয়া শনিবার বলেছেন, উত্তর গাজায় ফিলিস্তিনিরা 'অবর্ণনীয় ভয়াবহতা'র মধ্যে রয়েছে এবং তিনি এসব নৃশংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসরায়েলের একজন মন্ত্রী আমিচাই চিকলি বলেছেন, 'ইসরায়েল গাজার উত্তরাঞ্চলের একটি অংশ অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আমরা বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদ এলাকায় যাওয়ার সুযোগ দিয়েছি এবং অবরুদ্ধ এলাকায় সব কিছু সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।' তিনি জানান, আইডিএফ লোকজনকে সরে যাওয়ার জন্য সতর্ক করে দিয়েছে। তার মতে, এটা করা হয়েছে 'আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে'।
গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না- এমন তথ্য ইসরায়েল বারবার প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তবে আমেরিকা সেখানে প্রবেশের সুযোগ বাড়ানোর কথা বলেছে, না হলে মার্কিন সামরিক সহযোগিতা কমে যাওয়ার ঝুঁকির কথা উলেস্নখ করেছে তারা।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর থেকেই গাজা জুড়ে অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। নিহত হয়েছেন প্রায় ৪৩ হাজার মানুষ। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও প্রায় এক লাখ মানুষ।
ইসরায়েলি হামলায় গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচু্যত হয়েছেন। এ ছাড়া খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সবাই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। ইসরায়েল এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
সিনওয়ারের ছবি সংবলিত লিফলেট
ফেলছে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান
দক্ষিণ গাজায় যুদ্ধবিমান থেকে লিফলেট ফেলেছে ইসরায়েল। এসব লিফলেটে নিহত হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ছবি ছিল। লিফলেটে সিনওয়ারের ছবির পাশে লেখা ছিল 'হামাস আর গাজা শাসন করবে না'। এই বাক্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ব্যবহৃত ভাষার প্রতিধ্বনি।
লিফলেটটিতে আরবিতে আরও লেখা ছিল, 'যদি কেউ অস্ত্র ফেলে দেয় এবং জিম্মিদের হাতে তুলে দেয়, তাকে চলে যেতে এবং শান্তিতে বসবাস করার অনুমতি দেওয়া হবে।'