ফিলিস্তিনের উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে আবারও ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে নারী-শিশুসহ অন্তত ৪৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন, ৮০ জনের বেশি। এদের অনেকের অবস্থা গুরুতর। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জাবালিয়ায় ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা চালায়। শিবিরের তিনটি পরিবারের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে যাওয়ায় মৃতের সংখ্যা ৫০-এ পৌঁছাতে পারে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি
উত্তর গাজার আল-আওদা হাসপাতালের পরিচালক শনিবার সকালে বলেছেন, 'অ্যাম্বুলেন্স কর্মীরা এখনো জাবালিয়া থেকে নিহত ও আহতদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। আমাদের হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলো পূর্ণ এবং অনেক আহত ব্যক্তি মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।'
জাবালিয়া গাজার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। সেখানে গত দুই সপ্তাহ ধরে আবারও ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। কারণ হিসেবে ইসরায়েল বলেছে, শরণার্থী ক্যাম্পটিতে আবার সংগঠিত হয়েছিল হামাসের যোদ্ধারা। এ ছাড়া সেখানে বেসামরিক সরকারও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থিত হয়েছিল তারা।
প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবির ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রায় চার লাখ ফিলিস্তিনি সামান্য খাবার বা পানি নিয়ে শরণার্থী শিবিরের ভেতরে আটকা পড়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনী নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে সেখানে। ওষুধ, খাবার ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তার অফিসের প্রধান জর্জিওস পেট্রোপোলোস বলেছেন, 'জাবালিয়ায় পরিবারগুলো নৃশংস পরিস্থিতি সহ্য করছে। সেখানে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য পরিস্থিতি কতটা ভয়ংকর এবং বিপজ্জনক তা নিয়ে বলার সুযোগ নেই।'
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে গাজার ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের নজিরবিহীন হামলার মধ্য দিয়ে গাজা যুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল। এরপর থেকে টানা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এই সংঘাতের ফলে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজার মানুষ। ইসরায়েলের অবিরাম হামলায় ফিলিস্তিনি ছিটমহলটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ঘরবাড়ি ছাড়া হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। জাতিসংঘের হিসাব মতে, হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপের পরিমাণ ৪ কোটি ২০ লাখ টনের বেশি হবে। এসব ধ্বংসস্তূপ ২০০৮ থেকে গত বছর যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত গাজা ভূখন্ডে সঞ্চিত আবর্জনার ১৪ গুণ এবং ২০১৬-১৭ সালে ইরাকের মসুলে হওয়া যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের পাঁচ গুণের বেশি। এক বছর ধরে চালানো ইসরায়েলি হামলার পর বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া অনেকেই নিখোঁজ হয়েছেন। তারা মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকাজুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো ১১ হাজারের বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডে তার নৃশংস হামলা অব্যাহত রেখেছে।
গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা কঠিন : বাইডেন
এদিকে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, 'লেবাননে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। কিন্তু গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা কঠিন।' শুক্রবার বার্লিনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
একদিনের সফরে জার্মানি গিয়েছিলেন জো বাইডেন। সেখানে জার্মানির রাজধানী বার্লিনে তিনি জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে সংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সাংবাদিকরা জানতে চান, ইসরায়েল কখন এবং কীভাবে ইরানে হামলা চালাতে পারে, এ ব্যাপারে তার কোনো ধারণা আছে কি না। জবাবে বাইডেন 'হঁ্যা' বলেন। তার মতে, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-ইরান সংঘাত 'কিছু সময়ের জন্য' সম্ভাব্যভাবে থামার সুযোগ রয়েছে। বাইডেন বলেন, 'আমার দৃষ্টিতে একটি সুযোগ রয়েছে। আমার সহকর্মীরাও একমত যে, আমরা সম্ভবত ইসরায়েল ও ইরানের সঙ্গে এমনভাবে মোকাবিলা করতে পারি, যা কিছু সময়ের জন্য সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারে।' এ সময় বাইডেন জানান, তার বিশ্বাস, লেবাননে যুদ্ধবিরতির দিকে কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে কিন্তু গাজায় এ ধরনের প্রচেষ্টা আরও কঠিন হবে।
গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি হামলায় হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হন। এরপর অনেকেই ধারণা করেছিলেন, গাজা যুদ্ধ এবার হয়তো অবসানের দিকে যাবে। তবে শুক্রবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃতু্যতে গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে বলে যে আশা তৈরি হয়েছিল, তা ম্স্নান হয়ে গেছে।