মধ্যপ্রাচ্য সংকট
নেতানিয়াহুর কথায় শান্তির আশা শেষ
'যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি, জিম্মিরা মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত চলবে' সিনওয়ারের মৃতু্য দলকে আরও দৃঢ় সংকল্প করবে : হামাস ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধির হুমকি হিজবুলস্নাহ-ইরানের
প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। বলেছেন, যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। জিম্মিরা মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে। নেতানিয়াহুর এ অঙ্গীকারে গাজায় শান্তি ফেরার আশা ভেস্তে গেছে। পশ্চিমা নেতারাসহ অনেকেই আশা করছিলেন, হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে হয়তো গাজায় যুদ্ধ অবসানের পথ খুলবে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা, বিবিসি
আমেরিকার পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছিলেন, 'যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিলেন হামাস নেতা সিনওয়ার। তার মৃতু্যতে সেই বাধা দূর হয়েছে।' কিন্তু সেই আশায় পানি ঢেলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, 'হামাস জিম্মি করে রাখা ইসরায়েলিদের ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধ চলবে।' তিনি আরও বলেন, 'আজ আমরা যোগ্য প্রতিশোধ নিতে সক্ষম হয়েছি।'
বৃহস্পতিবার সিনওয়ারের মৃতু্যর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ধারণকৃত এক ভিডিও বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, 'আজ অশুভ শক্তিকে বিনাশ করেছি ঠিকই, কিন্তু আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি।' তিনি বলেন, 'প্রিয় জিম্মিদের পরিবারের উদ্দেশে আমি বলছি- আজকের ঘটনা এই যুদ্ধের খুব গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। যতক্ষণ না আপনাদের সব প্রিয়জন ঘরে ফিরছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা সর্বশক্তি দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাব।' নেতানিয়াহু বলেন, হামাস আর কখনোই গাজা শাসন করবে না। তার ভাষায়, 'হলোকাস্টের পর থেকে যে ব্যক্তি আমাদের জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর হত্যাকান্ড সংঘটিত করেছে, তাকে আজ হত্যা করা হয়েছে। হামাস আর গাজা শাসন করবে না।'
লেবাননে কাজ করা এক কূটনীতিক বলেছেন, সিনওয়ারের মৃতু্যতে গাজায় যুদ্ধ অবসানের আশা এখন আর নেই বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। তিনি বলেন, 'আমরা আশা করেছিলাম, সিনওয়ারের মৃতু্য মোড় ঘুরিয়ে দেবে। যুদ্ধ অবসান হবে...সবাই অস্ত্র নামিয়ে রাখতে প্রস্তুত হয়ে যাবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমরা আবারও ভুল করছি।'
নেতানিয়াহু কেবল গাজাতেই নয়, লেবাননেও যুদ্ধ চলবে বলে জানিয়েছেন। ওদিকে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদারের অঙ্গীকার করেছে। তাদের সমর্থক ইরান বলেছে, গাজায় ফিলিস্তিনি মিত্র সিনওয়ার হত্যার ঘটনায় তাদের 'প্রতিরোধ স্পৃহা আরও সুদৃঢ় হবে'। পশ্চিমারা যুদ্ধবিরতির আশা করলেও সিনওয়ারের মৃতু্য মধ্যপ্রাচ্যে শত্রম্নতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ইসরায়েল চলতি মাসে লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করেছে। এখন গত ১ অক্টোবর হামাস ও লেবাননের হিজবুলস্নাহর মিত্র ইরানের চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব দেওয়ার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল।
সিনওয়ারের মৃতু্য দলকে আরও
দৃঢ়সংকল্প করবে : হামাস
এদিকে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী গোষ্ঠী হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খলিল আল-হায়া যুদ্ধে তাদের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, সিনওয়ারের মৃতু্যতে দল কেবল আরও দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হবে। ফিলিস্তিনি জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য হামাস তাদের নিজস্ব পথেই চলবে বলে জানান তিনি।
হামাসের এই কর্মকর্তা বলেন, গাজায় যুদ্ধ শেষ না হওয়া এবং ইসরায়েলি সেনারা পুরোপুরি গাজা ছেড়ে চলে না যাওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলি জিম্মিদের ফেরত দেওয়া হবে না।
সিনওয়ারের মৃতু্যর পর হামাসের সবচেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হচ্ছেন, খলিল আল-হায়া। এক ভিডিও বার্তায় তিনি যুদ্ধে সিনওয়ারের মৃতু্যর খবর জানিয়েছেন।
সিনওয়ারের মৃতু্যতে গাজায় যুদ্ধ পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবে বলেও মনে করছেন না ফিলিস্তিনিরা। এক ফিলিস্তিনি বলেছেন, হামাস নেতা সিনওয়ারের মৃতু্য নিয়ে যদিও নানাজন নানা মত প্রকাশ করছে। কিন্তু তিনি সিনওয়ারের মৃতু্যতে গাজার মানুষদের জন্য কোনো পরিবর্তন আসার লক্ষণ দেখছেন না। তিনি বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি না যে, এতে সংঘাতের গতি-প্রকৃতি বদলাবে। কারণ গত মাসে হাসান নাসরালস্নাহর মতো প্রভাবশালী হিজবুলস্নাহ নেতা এবং এর আগে জুলাইয়ে ইসমাইল হানিয়ার মতো হামাস নেতার মৃতু্যতেও যুদ্ধ পরিস্থিতির মৌলিক কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। বরং উত্তেজনা আরও বেড়ে গেছে। আর ফিলিস্তিনি হিসেবে আমাদের উদ্বেগ বেড়েছে।'
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধির
হুমকি হিজবুলস্নাহ-ইরানের
হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃতু্যর ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ একটি 'নতুন ও বৃহত্তর' ধাপে উপনীত হতে যাচ্ছে। শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) এই হুমকি দিয়েছে লেবানিজ সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহ। আর ইরান বলেছে, সিনাওয়ারের মৃতু্য 'প্রতিবাদের চেতনাকে আরও দৃঢ়' করবে। হামাসের প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের নিহতের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইরান। জাতিসংঘে ইরানের মিশন বলেছে, ইয়াহিয়া সিনওয়ারের শেষ মুহূর্তগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের মডেল হয়ে থাকবে।