শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১
বিরামহীন আগ্রাসন

গাজায় স্কুলে আবারও ইসরায়েলের হামলা, শিশুসহ নিহত ২৯

উপত্যকায় ১৮ লাখের বেশি মানুষ তীব্র ক্ষুধার সম্মুখীন : জাতিসংঘ
যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ১৩ জনের জানাজার আগে মরদেহ ধরে কাঁদছেন এক স্বজন। ছবিটি শুক্রবার দক্ষিণ বোননের নাবাতিহে থেকে তোলা -রয়টার্স অনলাইন

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে আবারও একটি স্কুলে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বর্বর এই হামলায় কমপক্ষে ২৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। আহত হয়েছেন আরও দেড় শতাধিক মানুষ। ইসরায়েল বৃহস্পতিবার রাতে গাজার জাবালিয়ার একটি স্কুলে হামলা চালালে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। হামলার শিকার স্কুলটিতে ফিলিস্তিনি শরণার্থী পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছিল। এতে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৪২ হাজার ৪৫০ জন ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের অক্টোবর থেকে চলা এই বর্বরতায় আহত হয়েছেন ৯৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, এএফপি

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মেধাত আব্বাস জানিয়েছেন, ইসরায়েলের নতুন করে স্থল আক্রমণের পর প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ থাকা এই এলাকায় বৃহস্পতিবারের হামলায় আরও ১৬০ জন আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, 'আগুন নেভানোর পানি নেই। কিছুই নেই। এটা একটা গণহত্যা। বেসামরিক নাগরিক ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে, আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।'

অবশ্য যথেষ্ট প্রমাণ ছাড়াই ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, হামাস এবং ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ গ্রম্নপের যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে হামলাটি করা হয়েছে। তাদের দাবি, যোদ্ধারা জাবালিয়ার আবু হুসেন স্কুলের মধ্যে থেকে কাজ করছিল। মূলত এই স্কুলটি বাস্তুচু্যত লোকদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। তবে ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা (ইউএনআরডাবিস্নউএ) পরিচালিত স্কুলকে যুদ্ধের উদ্দেশে ব্যবহার করার অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে হামাস। তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, এ ধরনের অভিযোগগুলো 'মিথ্যা ছাড়া কিছুই নয়'।

এর আগে বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেন, গাজা শহরে দুটি পৃথক ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এবং মধ্য ও দক্ষিণ গাজা এলাকায় আরও কয়েকজন নিহত হয়েছেন।

আবু হুসেন স্কুলে হামলার পর ফিলিস্তিনি মিডিয়ায় প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, হামলার জেরে আগুন ধরে যাওয়ার পর তাঁবু থেকে ধোঁয়া বের হয়ে আসছে। এ ছাড়া শিশুসহ হতাহতদের অ্যাম্বুলেন্সে করে সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছে অনেক বাস্তুচু্যত মানুষ। জাবালিয়ার বাসিন্দারা বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী আকাশ থেকে, ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণ করে এবং ভবনগুলোয় বোমা রেখে ও দূর থেকে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এ হামলা চালায় এবং ঘর উড়িয়ে দেয়।

গত দুই সপ্তাহ ধরে এ এলাকাটিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর জোরালো অভিযান চলছে। জাতিসংঘ অনুমান করছে, প্রায় চার লাখ মানুষ উত্তর গাজায় আটকা পড়েছেন এবং তীব্র বোমাবর্ষণ, ইসরায়েলি স্নাইপার ও স্থল হামলায় যুক্ত থাকা সেনাদের কারণে তারা বের হতে পারছেন না।

গাজায় ১৮ লাখের বেশি মানুষ তীব্র ক্ষুধার সম্মুখীন

এদিকে, জাতিসংঘের সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের দীর্ঘ সময়ের জন্য মানবিক সহায়তার প্রয়োজন হবে। সংস্থাগুলো জানায়, গাজায় বর্তমানে ১৮ লাখের বেশি মানুষ বিপজ্জনক মাত্রার ক্ষুধার সম্মুখীন। ইসরায়েলি বোমা হামলার ফলে এখানকার ৭০ শতাংশ কৃষিজমি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বিপুলসংখ্যক মানুষ চাকরি হারিয়েছে।

'গেস্নাবাল ইনিশিয়েটিভ ফর ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ক্লাসিফিকেশন' (আইপিসি)-এর অধীন ও জাতিসংঘের সহযোগিতায় তৈরি এক প্রতিবেদন অনুযায়ী এরই মধ্যে গাজার জনসংখ্যার ছয় শতাংশ বা ১৩৩ হাজার মানুষ সর্বনাশা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়েছে এবং আগামী বছরের নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে এই সংখ্যা ৩৪৫ হাজার মানুষ বা ১৬ শতাংশে পৌঁছতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সমগ্র গাজা উপত্যকা জুড়ে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি ইতোমধ্যে বিদ্যমান রয়েছে এবং সম্প্রতি যুদ্ধ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এ আশঙ্কা আরও বেড়ে গেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে