শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

কানাডার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে ভারত : ট্রুডো

যাযাদি ডেস্ক
  ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো

ভারতের বিরুদ্ধে এই প্রথম পরিষ্কারভাবে কানাডার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। কানাডার নাগরিক এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী খালিস্তানপন্থি আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যা ইসু্যতে এ অভিযোগ করেছেন তিনি। তথ্যসূত্র : এএফপি, আরটি নিজ্জর হত্যাকান্ডে বিদেশি কোনো সরকারের হাত রয়েছে কি না- তা তদন্ত করছে কানাডার বিশেষ তদন্ত সংস্থা 'ফরেন ইন্টারফেয়ারেন্স কমিশন'। সংস্থাটি কানাডায় 'হগ কমিশন' নামে পরিচিত। হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকান্ডে ভারতের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি-না, তা খতিয়ে দেখছেন এ কমিশনের কর্মকর্তারা। বুধবার হগ কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন ট্রুডো, কর্মকর্তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন। কর্মকর্তাদের এক প্রশ্নের উত্তরে ট্রুডো বলেন, 'ভারত যে কানাডার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে- সে ব্যাপারে আমাদের আগেও পরিষ্কার ধারণা ছিল এবং এখন এটি আমাদের কাছে আরও বেশি স্পষ্ট ও নিশ্চিত।' কানাডার প্রধানমন্ত্রী জানান, নিজ্জর হত্যাকান্ডের সঙ্গে যে ভারতের সরকারি এজেন্টরা যুক্ত, তা দুটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানতে পেরেছেন তিনি। এ দুই সূত্রের প্রথমটি হলো কানাডার নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা এবং দ্বিতীয়টি হলো পঞ্চনেত্র জোট (ফাইভ আইস অ্যালায়েন্স)। পঞ্চনেত্র জোট হলো আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড- এই পাঁচ দেশের মধ্যকার গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান সংক্রান্ত একটি জোট বা নেটওয়ার্ক। ট্রুডো বলেন, 'প্রথমে কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা আমাকে বলেছিল যে, নিজ্জর হত্যাকান্ডে ভারতের সরকারি এজেন্টদের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া গেছে। তারপর আমি পঞ্চনেত্র জোটের অন্য নেতাদের এ ব্যাপারটি অবহিত করার পাশাপাশি এই ইসু্যতে জোটের সহযোগিতা কামনা করি। এরপর পঞ্চনেত্র জোট পৃথকভাবে বিষয়টির তদন্ত শুরু করে এবং গত আগস্টের প্রথম দিকে জোটের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আমাকে বলেন, এটা ব্যাপকভাবে, অবিশ্বাস্যভাবে সত্য যে, এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে ভারতের ক্ষমতাসীন সরকারের এজেন্টরা সংশ্লিষ্ট।' ৪৫ বছর বয়সি হরদীপ সিং নিজ্জর ভারতের খালিস্তানপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী খালিস্তান টাইগার ফোর্স এবং শিখস ফর জাস্টিস কানাডা শাখার শীর্ষ নেতা ছিলেন। ১৯৭৭ সালে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের জলন্ধর থেকে কানাডায় গিয়েছিলেন নিজ্জর, পরে সেই দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করেন। ২০২৩ সালের ১৮ জুন দেশটির ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের রাজধানী ভ্যানকুভারের একটি গুরুদুয়ারার সামনে নিহত হন তিনি। এই হত্যাকান্ডের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রথমবার ট্রুডো অভিযুক্ত করেন ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। সেদিন কানাডার পার্লামেন্টে দেওয়া এক ভাষণে ট্রুডো বলেন বলেন, এ অভিযোগের পক্ষে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ তার কাছে রয়েছে। তারপর থেকেই কূটনৈতিক টানাপড়েন শুরু হয়েছে দুই দেশের মধ্যে, যার মীমাংসা এখনো হয়নি। এই দ্বন্দ্বের জেরে উভয় দেশই সম্প্রতি পরস্পরের রাষ্ট্রদূতসহ গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছে। সার্বিকভাবে বর্তমানে কার্যত তলানিতে ঠেকেছে ভারত-কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্ক। ভারতের অভিযোগ- কানাডা সুনির্দিষ্টভাবে এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য প্রদান করেনি। জাস্টিন ট্রুডোর অভিযোগকে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' বলেও উলেস্নখ করেছে করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বুধবার এই ইসু্যতে ভারতের প্রতিক্রিয়ার কঠোর সমালোচনাও করেছেন ট্রুডো। তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'তদন্তের শুরুর দিকে আমরা ভারতের সহযোগিতা চেয়েছিলাম। আমরা দিলিস্নকে বলেছিলাম, চলুন আমরা একসঙ্গে যৌথভাবে এই মামলার তদন্ত করি। কিন্তু দিলিস্নর প্রতিক্রিয়া ছিল অনেকটা এমন যে, না না না, আমরা এসবের মধ্যে নেই।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে