গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও অন্তত ৫০ জন নিহত

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে হামাসের হামলায় ১২০০ মানুষ নিহত ও প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি হওয়ার পর ইসরায়েল গাজায় অভিযান শুরু করে

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
গাজাজুড়ে ইসরায়েলের বিমান হামলায় আরও অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। গাজার উত্তরাঞ্চলে জাবালিয়া ঘিরে মঙ্গলবার শক্ত অবরোধ গড়ে তুলেছে ইসরায়েল। কয়েকটি এলাকায় ট্যাংক পাঠিয়ে অভিযান চালাচ্ছে তারা। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজার আটটি ঐতিহাসিক শরণার্থী শিবিরের মধ্যে বৃহত্তম জাবালিয়ার আল-ফালুজার কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া, দক্ষিণে খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলীয় বানি সুহাইলা এলাকায় একটি বাড়িতে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১০ জন নিহত হন। এর আগে মঙ্গলবার গাজা সিটির সাবরা শহরতলিতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিনটি বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। স্থানীয় বেসামরিক জরুরি সেবা বিভাগ জানায়, তারা ঘটনাস্থল থেকে দুটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। মধ্য গাজার নুসেইরাত শিবিরে একটি বাড়িতে হামলায় আরও ৮ নিহত হয়েছে। জাবালিয়া ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। এই অভিযান ফিলিস্তিন এবং জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইসরায়েল গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে দিতে চায়, যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে দেশটি। মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর বলেছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজার বাকি অংশ থেকে উত্তর গাজাকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে বলে মনে হচ্ছে। তাদের বক্তব্য 'অসুস্থ ও প্রতিবন্ধীসহ অনেকে বাইরে যেতে পারছে না এবং তারা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে সুরক্ষিত রয়েছে। তারা যাতে অক্ষত থাকে, তা নিশ্চিত করার জন্য সব সম্ভাব্য সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বাস্তুচু্যত প্রত্যেক মানুষের নিরাপদে ঘরে ফেরার অধিকার রয়েছে।' এ ছাড়া ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জাবালিয়া শিবির ঘিরে ফেলেছে এবং নিকটবর্তী বেইত লাহিয়া এবং বেইত হানুন শহরে ট্যাঙ্ক পাঠিয়েছে, সেখানে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করা হামাস যোদ্ধাদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বাসিন্দাদের বাড়িঘর ছেড়ে দক্ষিণ গাজার নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলেছে। কিন্তু ফিলিস্তিনি ও জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বলছেন, গাজায় নিরাপদ কোনো জায়গা নেই। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামাস যোদ্ধাদের বেসামরিক নাগরিকদের থেকে আলাদা করার লক্ষ্যে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জাবালিয়া বা উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য এলাকা থেকে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কোনো নিয়মতান্ত্রিক পরিকল্পনা ছিল বলে অস্বীকার করেছে ইসরায়েল। হামাসের সশস্ত্র শাখা জানিয়েছে, যোদ্ধারা জাবালিয়া ও এর আশপাশে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে তীব্র লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছে। জিমারম্যান উত্তরাঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সেখানকার হাসপাতালগুলো চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেনাবাহিনী সেখানে পরিচালিত তিনটি হাসপাতাল খালি করার নির্দেশ দিয়েছে, কিন্তু চিকিৎসা কর্মীরা বলেছেন, তারা ক্রমবর্ধমান হতাহতের সংখ্যায় বিস্মিত হলেও তাদের পরিষেবা চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সোমবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গাজার উত্তরাঞ্চলে বেসামরিক মানুষ হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নিন্দা জানিয়েছেন। গাজার উত্তরাঞ্চলে এই অঞ্চলের ২৩ লাখ মানুষের অর্ধেকেরও বেশি বাস করে এবং এই অঞ্চলে ইসরায়েলের আক্রমণের প্রথম পর্যায়ে ভারী বোমা হামলার মধ্যে কয়েক লাখ বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, সেখানে প্রায় চার লাখ মানুষ রয়ে গেছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে হামাসের হামলায় ১২০০ মানুষ নিহত ও প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি হওয়ার পর ইসরায়েল গাজায় অভিযান শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ৪২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।