ইসরায়েলে সোমবার রাতভর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে লেবাননের হিজবুলস্নাহ। একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের বিভিন্ন সেনাঘাঁটি এবং এগুলোর নিকটবর্তী আবাসিক এলাকাগুলো পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। তবে, এসব হামলায় হতাহতের তথ্য বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রকাশ করেনি ইসরায়েল। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) ১৪ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত লেবানন থেকে হিজবুলস্নাহর ১১৫টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা রেকর্ড করেছে। আইডিএফ এক বিবৃতিতে বলেছে, হিজবুলস্নাহর হামলা ও হুমকি থেকে ইসরায়েল এবং এর জনগণকে রক্ষা করতে সেনাবাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, তাস, রয়টার্স, এএফপি
এদিকে, হিজবুলস্নাহ শুধু ইসরায়েলেই নয়, লেবাননে দক্ষিণাঞ্চলে অনুপ্রবেশ করা ইসরায়েলি বাহিনীর ওপরও সমান তালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সোমবার রাত থেকে হিজবুলস্নাহ দক্ষিণ লেবানন ও উত্তর ইসরায়েলে ইসরায়েলি বাহিনীকে লক্ষ্য করে তীব্র হামলা শুরু করেছে। হিজবুলস্নাহর বহু ক্ষেপণাস্ত্র লেবাননের সীমান্তের কাছে ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটিতে গিয়ে আঘাত হানে।
এর আগে রোববার রাতে গোলানে এক ইসরায়েলি সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হিজবুলস্নাহর হামলায় চার সেনা নিহত এবং ৬০ জন আহত হয়। হিজবুলস্নাহর হামলার জবাবে ইসরায়েলি বাহিনী লেবাননের সীমান্ত এলাকা হালেট ওয়ার্দা এবং শেবা খামারের আবাসিক এলাকায় হামলা চালায়।
'টেলিগ্রাম' চ্যানেলে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে হিজবুলস্নাহ বলেছে, দখলদারদের বর্বরতার দাঁতভাঙা জবাব দিতে আমরা প্রস্তুত। ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ইসরায়েল লেবাননে 'উত্তর তীর' নামে ভয়াবহ সামরিক অভিযান শুরু করেছে। অভিযানের প্রধান লক্ষ্য হিজবুলস্নাহ সামরিক অবকাঠামো হলেও ইসরায়েলি বাহিনী আবাসিক এলাকা ও শান্তিরক্ষীদের ক্যাম্পেও হামলা চালায়। গত ১ অক্টোবর রাত থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী লেবাননের দক্ষিণ সীমান্ত এলাকায় স্থল অভিযান শুরু করে।
দক্ষিণ লেবাননের ২৫টি শহর খালি করার নির্দেশ ইসরায়েলের
এদিকে, দক্ষিণ লেবাননের ২৫টি শহর খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। এসব শহরের বাসিন্দাদের অবিলম্বে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে উত্তর দিকে চলে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র আভিচায় আদ্রাই লেবাননের এই শহরগুলোর বাসিন্দাদের তাদের বাড়িঘর ছেড়ে আওয়ালি নদীর উত্তরে চলে যেতে বলেছেন।
খালি করতে বলা শহরের তালিকার মধ্যে রয়েছে- বোরঘোলিয়েহ, কাসমিয়েহ, নবি কাসিম, আল-মাতারিয়াহ, খারায়েব, মাজরাত কাউথারিয়েত এল রেজ, আনসার, বাবলিয়াহ, দেইর তাকলা, আদলউন এবং আনসারিয়েহ। এ ছাড়াও মেরুয়ানিয়েহ, জেফতা, বাফারুয়েহ, হাব্বাউচ, নাবাতিহ, সেজউদ, জবা, আনকউন, বানাফউল, কেননারিত, জেইতা, আরনায়া, মাজরাত মাতারিয়েত জবা এবং তানবোরিত শহরগুলোও এই তালিকায় রয়েছে। আদ্রাই বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী এই শহরের বাসিন্দাদের 'উপযুক্ত পরিস্থিতিতে' ফিরে আসার অনুমতি দেবে।
এর আগে ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ লেবাননের কয়েক ডজন শহর থেকে মানুষজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ জারি করেছিল। পরে তেল আবিব সেসব ওই এলাকায় বিমান ও স্থল হামলা চালায়।
ইসরায়েল গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে হিজবুলস্নাহর লক্ষ্যবস্তুতে হামলার নামে লেবাননজুড়ে বিমান হামলা শুরু করেছে। এই হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে এক হাজার ৪৮৮ জন নিহত হয়েছেন এবং আরও চার হাজার ২৯৭ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের বর্বর এই আক্রমণের কারণে ১২ লাখের বেশি লোক বাস্তুচু্যত হয়েছেন।
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৬২ ফিলিস্তিনি নিহত
অন্যদিকে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। তাদের হামলায় সোমবার প্রাণ ঝরেছে আরও অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনির। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। এ নিয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামলায় মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪২ হাজার ২৮৯ জনে পৌঁছেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, টানা হামলায় মোট ৯৮ হাজার ৬৮৪ জন আহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত আগ্রাসনে ৬২ জন নিহত এবং আরও ২২০ জন আহত হয়েছেন। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন। কারণ, উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছতে পারছেন না।