সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনীকে ঠেকিয়ে রেখেছে লেবাননের ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহ। তাদের প্রতিরোধের কারণে ইসরায়েলি বাহিনী লেবাননের ভূখন্ডে স্থল অভিযান চালাতে পারছে না। এ কারণে নির্ভর করতে হচ্ছে বিমান হামলার ওপর। শুধু ঠেকানোই নয়, এবার ইসরায়েলের অনেক গভীরে ঢুকে ড্রোন হামলাও চালিয়েছে হিজবুলস্নাহ। এতে ইসরায়েলের চার সেনা নিহত হয়েছেন। এরপর সংগঠনটি ঘোষণা দিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী লেবাননে হামলা অব্যাহত রাখলে, তারাও ইসরায়েলে আরও হামলা চালাবে। তথ্যসূত্র : এএফপি, আল-জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি গত রোববার (১৩ অক্টোবর) ইসরায়েলের হাইফার কাছে একটি সেনাঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালিয়ে চার ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা করে হিজবুলস্নাহ। এ হামলায় আহত হয়েছে অন্তত ৭০ জন। এরপর হিজবুলস্নাহ ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা আরও তীব্র হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে হিজবুলস্নাহ আরও হামলা চালানোর হুমকি দিল। এক বিবৃতিতে হিজবুলস্নাহ বলেছে, 'রোববারের হামলার জবাবে ইসরায়েল যদি লেবাননে হামলা চালায়, তবে আমরাও ইসরায়েলে আরও হামলা চালাব।' হিজবুলস্নাহ দাবি করেছে, তাদের ড্রোনগুলো ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাঁকি দিতে পেরেছে। ইসরায়েলি রেডার তাদের শনাক্ত করতে পারেনি। ফলে তারা হাইফার দক্ষিণে বেনইয়ামিনা সেনা ক্যাম্পে নির্বিঘ্নে হামলা করতে পেরেছে। সেনা ক্যাম্পের যেখানে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, সেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, রোববার হিজবুলস্নাহর ড্রোন হামলায় ইসরায়েলের চার সেনা নিহত হয়েছেন। এই হামলা ছিল গত ২৩ সেপ্টেম্বরের পর ইসরায়েলি কোনো ঘাঁটিতে হওয়া সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। সামরিক ঘাঁটিতে হিজবুলস্নাহর হামলাকে 'বেদনাদায়ক' বলছে ইসরায়েল এদিকে, ইসরায়েলের সামরিক প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে ড্রোন হামলার ঘটনাকে 'চরম বেদনাদায়ক' বলে মন্তব্য করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। সোমবার গোলানি ব্রিগেড প্রশিক্ষণ ঘাঁটি পরিদর্শন করেছেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি। এ সময় তিনি সেনাদের বলেন, 'আমরা যুদ্ধে আছি এবং হোম ফ্রন্টের প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে হামলা করাটা কঠিন। এই হামলার ফল অত্যন্ত বেদনাদায়ক।' হিজবুলস্নাহ বলেছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গোলানি ব্রিগেড প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে মুহুর্মুহু ড্রোন হামলা চালিয়েছে তারা। এর মধ্যে কিছু মনুষ্যবিহীন ড্রোনও রয়েছে; যেগুলো আগে কখনো ব্যবহার করেনি ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র এই গোষ্ঠী। এসব ড্রোনের বেশিরভাগই ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। হিজবুলস্নাহর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা রেডার আমাদের ছোড়া ড্রোন শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।' ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, হিজবুলস্নাহর চালানো ড্রোন হামলায় গোলানি ব্রিগেড প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে চার সেনা নিহত ও আরও সাতজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এই ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ইরানকে ঠেকাতে ইসরায়েলে থাড ও সেনা পাঠাচ্ছে আমেরিকা ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থা এবং সামরিক দল পাঠাবে আমেরিকা। রোববার (১৩ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে পেন্টাগন জানিয়েছে, ইসরায়েলে ইরানের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকা। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েলকে রক্ষা করার জন্য দেশটিতে থার্মিনাল হাই-অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স (থাড) ব্যাটারি এবং তা চালাতে সেনা সদস্যদের পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পেন্টাগনের মুখপাত্র প্যাট রাইডার বলেছেন, থাড ব্যাটারি মোতায়েন ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য সহায়ক হবে। থাড ব্যাটারি পরিচালনা করতে অন্তত ১০০ সেনা প্রয়োজন হয়। আমেরিকার সবচেয়ে বড় অস্ত্র নির্মাতা লকহিড মার্টিন থাড ব্যবস্থা তৈরি ও সুসংহত করে। থাডগুলোকে স্বল্প, মাঝারি এবং মধ্য-পালস্নার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে গুলি করার জন্য ডিজাইন (নকশা) করা হয়েছে। তবে কত দ্রম্নত এই ব্যবস্থা ইসরায়েলে মোতায়েন করা হবে, তা জানাননি মার্কিন কর্মকর্তারা। এর আগে ২০১৯ সালে প্রশিক্ষণ ও বিমান প্রতিরক্ষা মহড়ার জন্য একটি থাড ব্যাটারি ইসরায়েলে পাঠিয়েছিল আমেরিকা। ইরান গত ১৩ এপ্রিল ও ১ অক্টোবর অন্তত ২০০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে নিক্ষেপ করেছিল। ইসরায়েল এখন পর্যন্ত এই হামলার জবাব কীভাবে দেবে তা জানায়নি। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত বলেছেন, তাদের হামলাটি মারাত্মক ও বিস্ময়কর হবে।