লেবাননে ইসরায়েলি আগ্রাসন

ইসরায়েলে ঝাঁকে ঝাঁকে হিজবুলস্নাহর রকেট

'এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ রকেট ছোড়া হয়েছে, তা খুবই সামান্য পরিমাণ' লেবানন থেকে শান্তিরক্ষাকারী মিশন সরাবে না জাতিসংঘ ইসরায়েলি হামলার মুখে সিরিয়ায় পালিয়েছেন চার লক্ষাধিক মানুষ

প্রকাশ | ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইসরায়েল লক্ষ্য করে হিজবুলস্নাহর রকেট
লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহ শুক্রবার রাতে ইসরায়েলের হাইফার সামরিক ঘাঁটি এবং দখলকৃত অঞ্চলের বসতিগুলো লক্ষ্য করে ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। জানা গেছে, লেবানন থেকে প্রায় ১০০টি রকেট ছোড়া হয়েছে। তবে ইসরায়েলি সংবাদ মাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, হাইফায় কোনো হামলা বা সতর্কতামূলক সাইরেনের শব্দ শোনা যায়নি। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি হাইফার হামলার কথা স্বীকার না করলেও উত্তরাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি অবৈধ বসতিতে হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল। সংবাদ মাধ্যম 'টাইমস অব ইসরায়েল' জানিয়েছে, সাফেদ, রোস পিনা, মাখানাইম, বিরিয়েহ, হাৎজোর হাগলিলিত, কাদিতা, আমুকা, তাহার শিল্প জোন, বার ইয়োচাই এবং দালতনে রকেট হামলার সাইরেন বাজতে শোনা গেছে। এর কিছুক্ষণ পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, হিজবুলস্নাহর ছোড়া অন্তত ৩০টি রকেট ইসরায়েলে প্রবেশ করছে। এর মধ্যে কিছু রকেট মাঝ আকাশেই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো কোনো বাড়ি বা অবকাঠামোতে আঘাত হেনেছে কিনা, এ বিষয়টি স্পষ্ট করেনি তারা। এদিকে, ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের অবৈধ বসতির বাসিন্দাদের নিজ বাড়ি থেকে দূরে থাকতে সতর্কতা দিয়েছে হিজবুলস্নাহ। সশস্ত্র এ গোষ্ঠী এক বিবৃতিতে বলেছে, উত্তরাঞ্চলের সাধারণ মানুষের বাড়িগুলোকে সামরিক কাজে ব্যবহার করছে ইসরায়েলি সেনারা। ফলে এসব জায়গায় রকেট ছোড়া হবে। হিজবুলস্নাহ সাধারণ ইসরায়েলিদের উদ্দেশে বলেছে, নিজেদের জীবন রক্ষায় এসব বাড়িতে যেন তারা না আসেন। হিজবুলস্নাহ তাদের সর্বশেষ সতর্কতায় আরও বলেছে, এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ রকেট ছোড়া হয়েছে, সেগুলো তাদের কাছে থাকা রকেটের খুবই সামান্য পরিমাণ। যদি ইসরায়েলিরা হামলা বন্ধ না করে, তাহলে রকেট ছোড়া অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে তারা। লেবানন থেকে শান্তিরক্ষাকারী মিশন সরাবে না জাতিসংঘ এদিকে, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি হামলা সত্ত্বেও তাদের শান্তিরক্ষাকারী মিশন সরানো হবে না। লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষাকারী মিশনের নাম 'ইউএনআইএফআইএল'। তারা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার নাকাউরাতে তাদের সদর দপ্তরে ইসরায়েলি কামান থেকে আক্রমণ করা হয়। এই আক্রমণে ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা দুই শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন। কিছু গাড়ি ধ্বংস হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাতিসংঘের এই সংস্থার মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, 'গত ১২ মাসে এই ধরনের ভয়ংকর ঘটনা ঘটেনি। আমরা ওখানে আছি, কারণ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ওখানে থেকেই কাজ করতে বলেছে।' বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, ইসরায়েলের সেনা ইচ্ছে করে তাদের ওপর আক্রমণ করেছে। আক্রমণের আগে তারা এলাকার ক্যামেরাগুলো বন্ধ করে দেয়। জাতিসংঘের এই মিশনে ৫০টি দেশের ১০ হাজার শান্তিরক্ষী আছেন। তাদের লেবানন ও ইসরায়েলের সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের মূল কাজ হলো, লেবাননের সেনার সাহায্যে দেশের দক্ষিণ অংশে অস্ত্র উদ্ধার ও সশস্ত্র মানুষকে নিরস্ত্র করা। এই দক্ষিণ অংশই হিজবুলস্নাহর নিয়ন্ত্রণে। লেবানন ছেড়ে সিরিয়ায় পালিয়েছেন চার লক্ষাধিক মানুষ : জাতিসংঘ ইসরায়েলি হামলার মুখে চার লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ লেবানন ছেড়ে সিরিয়ায় পালিয়েছেন। তাদের অধিকাংশই সিরীয় নাগরিক। শুক্রবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা এই তথ্য জানিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত তিন লাখ ১০ হাজারের বেশি সিরীয় এবং এক লাখ ১০ হাজার লেবাননের নাগরিক সিরিয়ায় পাড়ি দিয়েছেন। ঘনবসতিপূর্ণ লেবাননের রাজধানী বৈরুত ক্রমবর্ধমানভাবে ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। রাভিনা বলেন, হামলায় শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ১০ লাখেরও বেশি মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। তিনি আরও জানান, হিজবুলস্নাহ ও অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলে রকেট নিক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। যার কারণে উত্তর ইসরায়েলেও মৃতু্য হয়েছে।