শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১
নিহত ২২ জন

লেবাননে ভয়াবহ হামলা ইসরায়েলের

হিজবুলস্নাহর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে লক্ষ্য করে চালানো হয় এই হামলা লেবাননে যুদ্ধবিরতির জন্য শর্ত দিল মোসাদ
যাযাদি ডেস্ক
  ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
লেবাননে ভয়াবহ হামলা ইসরায়েলের

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক মানুষ। শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয় বলে জানা গেছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই হামলা চালানো হয়। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা

'বিবিসি'র সাংবাদিকরা বলেছেন, তারা দেশটির রাজধানীর ছোট শিয়া এলাকা বাচৌরাতে হামলার স্থান থেকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন। পরে ঘটনাস্থলে উদ্ধারকর্মীদের ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে দেখা গেছে। বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলার স্পষ্ট লক্ষ্য ছিলেন ওয়াফিক সাফা। তিনি নিহত হিজবুলস্নাহ নেতা হাসান নাসরুলস্নাহর শ্যালক এবং শক্তিশালী এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর একজন উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তবে হিজবুলস্নাহর মিডিয়া অফিস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

বৃহস্পতিবারের হামলায় বাচৌরার দুটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা নুইরি এবং বাস্তার আবাসিক ভবনগুলোতে আঘাত হানে ইসরায়েল। লেবাননের রাজধানীতে তুলনামূলকভাবে দুদিন শান্ত থাকার পর হামলার এই ঘটনাটি ঘটেছে। হামলার বিষয়ে আগে থেকে কোনো সতর্কতা ছিল না এবং ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীও (আইডিএফ) এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ইসরায়েল বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলির দাহিয়েহ এলাকার বাইরে বিমান হামলা চালাল। এছাড়া দাহিয়েহ এলাকায় সম্প্রতি ইসরায়েল বারবার আঘাত করেছে এবং হিজবুলস্নাহ কমান্ডারদের হত্যা করেছে ও অস্ত্রের ভান্ডার ধ্বংস করেছে।

লেবাননে যুদ্ধবিরতির জন্য শর্ত দিল মোসাদ

গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস যদি তার কব্জায় থাকা অবশিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেয়, তাহলে গাজার পাশাপাশি লেবাননেও সামরিক অভিযান বন্ধ করবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এই শর্ত দিয়েছে। এই ইসু্যতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ'র প্রধান উইলিয়াম বার্নসের সঙ্গে মোসাদ প্রধান ডাডি বার্নিয়ার বৈঠকও হয়েছে। সিআইএ'র একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম 'ওয়ালা নিউজ এজেন্সি'কে নিশ্চিত করেছেন এসব তথ্য।

উইলিয়াম বার্নসের সঙ্গে বৈঠকে বার্নিয়া বলেছেন, ইসরায়েল বিশ্বাস করে- হিজবুলস্নাহ, ইরান এবং সমভাবাপন্ন অন্যান্য গোষ্ঠী যদি হামাসের বর্তমান শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে, কেবল তাহলেই দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে জিম্মিদের মুক্তি সম্ভব।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখন্ডে অতর্কিত হামলা চালিয়ে এক হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৪২ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা। হামাসের এই হামলার জবাব দিতে এবং আটক জিম্মিদের উদ্ধারে গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী, যা এখনো চলছে। এরই মধ্যে এ অভিযানে নিহত হয়েছেন ৪২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। গত এক বছরের বিভিন্ন সময়ে নিজেদের কব্জায় থাকা জিম্মিদের মধ্যে থেকে মোট ১০৯ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। অবশিষ্ট ১৩৩ জনের মধ্যে কয়েকজন এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন।

এদিকে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরু করার পর হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক স্থাপনায় রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ শুরু করে হামাসের মিত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহ। পাল্টা জবাব দিচ্ছিল ইসরায়েলের সেনাবাহিনীও। উভয়পক্ষের রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র বিনিময়ের জেরে গত এক বছরে লেবানন ও ইসরায়েলে প্রাণ হারিয়েছে কয়েক হাজার মানুষ।

গত ২০ অক্টোবর থেকে দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনাকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। তার ১০ দিন পর থেকে অভিযানে অংশ নেয় স্থল বাহিনীও। ইসরায়েলি বাহিনীর প্রায় ২১ দিনের অভিযানে দক্ষিণ লেবাননে নিহত হয়েছেন দুই হাজারেরও বেশি মানুষ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে