নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি

গাজার স্কুলে আবারও ইসরায়েলের হামলা

লেবাননে হিজবুলস্নাহর দুই কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের গাজা-লেবানন-ইরান নিয়ে উত্তপ্ত ফোনালাপ নেতানিয়াহু ও বাইডেনের!

প্রকাশ | ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ফিলিস্তিনের মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ শহরে বাস্তুচু্যতদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত একটি স্কুলে বৃহস্পতিবার বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামলায় বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন। বিমান হামলায় নিহত এক ফিলিস্তিনির মরদেহ গাধায় টানা গাড়িতে তোলা হচ্ছে দাফনের জন্য -রয়টার্স অনলাইন
ফিলিস্তিনের মধ্য গাজায় বাস্তুচু্যত মানুষের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত স্কুলে আবারও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার এই হামলা চালানো হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, স্কুলে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৫৪ জন আহত হয়েছেন। গাজার দেইর আল-বালাহ শহরে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা, এএফপি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বৃহস্পতিবার দাবি করেছে, তারা 'সন্ত্রাসীদের ওপর সুনির্দিষ্ট হামলা' চালিয়েছে। ওই স্কুলে হামাসের কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ছিল। যদিও হামাস এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। গাজার উত্তরে ইসরায়েলি বাহিনী ছয় দিন আগে নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছে। গাজার আটটি ঐতিহাসিক শরণার্থী শিবিরের মধ্যে সবচেয়ে বড় জাবালিয়া এবং নিকটবর্তী শহর বেইত হানৌন এবং বেইত লাহিয়াতে সেনা পাঠিয়েছে তারা। হিজবুলস্নাহর দুই কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের এদিকে, গাজার পাশাপাশি ইসরায়েলি বাহিনী লেবাননেও অব্যাহত রেখেছে। ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, তারা বৃহস্পতিবার ভোরে দক্ষিণ লেবাননে বিমান হামলা চালিয়ে হিজবুলস্নাহর দুই কমান্ডারকে হত্যা করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে একজন হলেন আহমেদ মুস্তফা আলহাজ আলি। তিনি কিরিয়াত শমোনা শহরে শত শত রকেট এবং অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের জন্য দায়ী। অন্যজন হলেন, অ্যান্টি-ট্যাংক কর্পসের কমান্ডার মুহাম্মদ আলি হামদান। তিনিও উত্তর সীমান্ত এলাকায় অনেক হামলার পেছনে ছিলেন বলে দাবি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের যুদ্ধবিমানগুলো দক্ষিণ লেবানন ও বৈরুতে হিজবুলস্নাহর কয়েকটি অস্ত্রাগার ধ্বংস করেছে। এ বিষয়ে হিজবুলস্নাহর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। লেবাননে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ব্যাপক বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। গত ৩০ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ লেবাননে স্থল অভিযানও শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তবে স্থল যুদ্ধে হিজবুলস্নাহর চরম প্রতিরোধের মুখে পড়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। বুধবার স্থল যুদ্ধের সময় ইসরায়েলের এক সেনা নিহত হয়েছে। ইসরায়েল সরকারের তথ্যানুসারে গত ৩০ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ লেবাননে হিজবুলস্নাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েল স্থল অভিযান শুরু করার পর থেকে ১২ জন সেনা নিহত হয়েছে। তবে হিজবুলস্নাহ বলছে, তারা এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৫ ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা করেছে। গাজা-লেবানন-ইরান নিয়ে উত্তপ্ত ফোনালাপ নেতানিয়াহু ও বাইডেনের! অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে বুধবার প্রায় ৩০ মিনিটের একটি ফোনালাপ হয়েছে। গত আগস্টের পর এই ফোনালাপটি তাদের মধ্যে প্রথম আলোচনা ছিল। ফোনালাপের সময় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও ছিলেন। যিনি আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ সময় ইরানে ইসরায়েলের পাল্টা হামলা চালানোর বিষয়ে দুই নেতার মধ্যে উত্তপ্ত ফোনালাপ হয়েছে বলে দাবি করেছেন একটি সূত্র। ইসরায়েলের প্রতি আমেরিকার 'লৌহবর্মের' মতো সুরক্ষার প্রতিশ্রম্নতি পুনর্ব্যক্ত করলেও বাইডেন এই মুহূর্তে ইরানে হামলা করতে বারণ করেছেন। তবে, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বাইডেন। ইরান ১ অক্টোবর ইসরায়েলের সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে এ হামলা চালায়। বাইডেন প্রশাসন এখনো ইরানের তেল বা পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার অনুমোদন দেয়নি, কারণ এটি বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়িয়ে মার্কিন অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাইডেন। লেবাননে চলমান সংঘর্ষ এবং দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি অভিযানে প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাইডেন। তিনি কূটনৈতিক সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন এবং লেবাননের বেসামরিক জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ইসরায়েলকে পরামর্শ দেন। এছাড়া গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও মানবিক সংকট নিয়েও বাইডেন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানান। গত এক বছরে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৪২ হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যা অঞ্চলটিকে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কারিন জাঁ-পিয়েরে বাইডেন-নেতানিয়াহুর ৩০ মিনিটের এই ফোনালাপকে প্রত্যক্ষ ও ফলপ্রসূ বলে উলেস্নখ করেছেন। তিনি বলেন, বাইডেন ও নেতানিয়াহু ইরানের সঙ্গে সংঘাত নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে এ বিষয়ে আর বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি তিনি। বাইডেন-নেতানিয়াহুর ফোনালাপের পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, 'যে আমাদের আক্রমণ করবে, সে আঘাত পাবে এবং তার মূল্য দিতে হবে। আমাদের আক্রমণ হবে মারাত্মক, সুনির্দিষ্ট এবং সর্বোপরি আশ্চর্যজনক। তারা বুঝতে পারবে না, কী ঘটেছে এবং কীভাবে ঘটেছে, তারা ফল দেখতে পাবে।'